উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগকলাম

📝 সম্মান বনাম অধিকারের চর্চা: সময়ের গল্প

Share
Share

🕘 রাত ৯টা ৪৫ মিনিট
আজ এমন কিছু লিখতে বসেছি, যা সাধারণত লিখি না।
সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠছি। মাথায় ভর্তি কার্ড আর টার্মের চাপ (বন্ধ পরবর্তী); তবুও যেতে হচ্ছে, বাসা থেকে জোরজবরদস্তির জেরে।

👤 পরিচয় ও আলাপ
এর মাঝেই এক অপরিচিত ব্যক্তির সাথে পরিচয়। খুব একটা চেনা-জানা নেই, তবে উনি আমার পাশের সিটে বসে পড়লেন। আলাপ শুরু হলো-

তিনি: “কোথায় থেকে আসছো?”
আমি: “কক্সবাজার।”

তিনি: “এখানে কি করো?”
আমি: “মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছি, ভাইয়া।”

তিনি: “একই এলাকায় হওয়ায় জিজ্ঞেস করলেন, স্কুল কোথায় তোমার?”
আমি: “বর্ডার গার্ড পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, ভাইয়া। আপনারটা?”

তিনি: “ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।”
আমি: “এসএসসি ব্যাচ কত আপনার?”

তিনি: “১৪ ব্যাচ। তোমার?”
আমি: “২২ ব্যাচ, ভাইয়া।”

💭 ডিপ্রেশন মার্কা আলোচনা
এরপর শুরু হলো কিছুটা ডিপ্রেশন মার্কা আলোচনা।

তিনি বললেন:

“দেশের যে অবস্থা, পড়াশোনা করে কি হবে? এই তো কিছুক্ষণ আগে দেখলাম, স্টুডেন্টরা হাফ ভাড়া নিতে গিয়ে ড্রাইভার সাহেবের সাথে কেমন হ্যাডম দেখাচ্ছে। এখনকার স্টুডেন্ট তো আর শিক্ষকদের সম্মানই দেয় না। আর আমাদের সময়ে শিক্ষকদের কত ডাস্টারের মার খেয়েছি, তবুও স্টুডেন্ট হিসেবে বিনীত ছিলাম। এখন উল্টোটা হয়।”

একদিকে কার্ড আর টার্ম নিয়ে আগেই ফ্রাস্ট্রেটেড ছিলাম; তার ওপর এরকম কথা শুনে একরাশ নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। নিজেকে এই পর্যায়ে এসে এত নিচুভাবে খোঁজা হবে এটা ভাবতেও পারিনি। আমি আবারও সেই নিশ্চুপ।

🧠 প্রজন্মের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
উনার এই অভিযোগ হয়তো অনেকের কানে পরিচিত শোনাবে। পুরনো প্রজন্মের মুখে আজও বারবার ধ্বনিত হয় এই কথাগুলো। কিন্তু সত্যিই কি আমাদের প্রজন্ম ‘অশ্রদ্ধাশীল’? নাকি এটি কেবল ভিন্ন সময়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ?

আগের প্রজন্ম বিশ্বাস করত, শিক্ষকের শাসনই ছিল শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মার খাওয়া, বকুনি খাওয়া, কিংবা কঠিন শৃঙ্খলা মানা ছিল ছাত্রজীবনের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা।
সেই কষ্টকেই তারা পরে ‘সম্মান’ হিসেবে স্মরণ করে।

আজকের শিক্ষার্থীরা ভিন্ন মানসিকতায় বেড়ে উঠছে। তারা শাসন মানতে চায় না অন্ধভাবে; বরং প্রশ্ন করতে শেখে, নিজের অবস্থান তুলে ধরতে শেখে। এই আত্মপ্রকাশ ও অধিকারের চর্চা অনেক সময় প্রবীণদের চোখে ‘অশ্রদ্ধা’ হিসেবে ধরা পড়ে।

⚖️ মূল দ্বন্দ্ব
এখানে মূল দ্বন্দ্ব হলো-

  • আগের প্রজন্ম বিনয় ও শাসন মেনে চলাকে বড় গুণ মনে করেছে।
  • নতুন প্রজন্ম আত্মপ্রকাশ ও অধিকার সচেতনতাকে বেশি মূল্য দিচ্ছে।

ফলে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে, কিন্তু হয়তো একে অবক্ষয় বলা ঠিক নয়। এটি বরং সময়ের পরিবর্তন।

🤝 সমাধানের দিক
আমাদের প্রয়োজন একে অপরকে বোঝার চর্চা।

  • পুরনো প্রজন্ম যদি মনে করে বিনয় হারিয়ে যাচ্ছে, তাহলে নতুন প্রজন্মকে শেখাতে হবে কীভাবে বিনয়ী থেকেও আত্মপ্রকাশ করা যায়।
  • নতুন প্রজন্মকে বুঝতে হবে, শিক্ষকের প্রতি সম্মান মানেই কেবল ভয় পাওয়া নয়; বরং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা।

প্রজন্মের এই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অবক্ষয়ের নয়, বরং বিবর্তনের গল্প। আগের দিনের শৃঙ্খলা আর আজকের দিনের স্বাধীনতা, দুটির সমন্বয়েই গড়ে উঠতে পারে প্রকৃত শিক্ষা ও প্রকৃত সম্মান।


✍️ লেখক পরিচিতি
মো. ইফতেখার হোসেন
এমবিবিএস ১ম বর্ষ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ
আগ্রহের ক্ষেত্র: আচরণবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান ও অভ্যাসবিজ্ঞান

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ইমেইল নিউজলেটার, টেলিগ্রাম, টুইটার X, WhatsApp এবং ফেসবুক -এ সাবস্ক্রাইব করে নিন।

Copyright 2024 biggani.org