এসো শিখিরসায়নবিদ্যা

জৈব যৌগের গঠনের গভীর

Share
Share

অতিথি লেখক: রউফুল আলম
লেখক ও গবেষক
ইমেইল: [email protected]

আগের পর্বে বহুবন্ধন ও অ্যালকোহল মূলক যুক্ত যৌগের গঠন অঙ্কন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই পর্বে আরও কয়েকটি কার্যকরী মূলক যুক্ত যৌগ নিয়ে আলোচনা করব। প্রথম দুটি পর্ব পড়া থাকলে এই পর্বের আলোচনা বুঝতে সহজ হবে।

আগের পর্ব

বহুবন্ধনযুক্ত যৌগ

জৈব যৌগে যদি শুধু কার্বন-কার্বন একক বন্ধন (C-C bond) থাকে, তাহলে সেগুলোকে বলা হয় সম্পৃক্ত যৌগ বা স্যাচুরেটেড কম্পাউন্ড। আর যদি একক বন্ধন ছাড়াও কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন (C=C bond) বা ত্রিবন্ধন থাকে, তাহলে সেসব যৌগকে বলা হয় অসম্পৃক্ত যৌগ বা আনস্যাচুরেটেড কম্পাউন্ড। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, কোনো যৌগে যদি কার্বন-অক্সিজেন দ্বিবন্ধন থাকে বা কার্বন-নাইট্রোজেন দ্বিবন্ধন বা ত্রিবন্ধন থাকে, তাহলে সেগুলোকে অসম্পৃক্ত যৌগ বলা যাবে না। সম্পৃক্ত বা অসম্পৃক্ত বিষয়টা নির্ভর করে শুধু কার্বন-কার্বন বন্ধনের ওপর।

অ্যালকোহল হলো কার্বন-অক্সিজেন একক বন্ধন, আর অ্যালডিহাইড হলো কার্বন-অক্সিজেন দ্বিবন্ধন। অ্যালডিহাইডের নামের শেষে তাই ‘নাল’ ব্যবহৃত হয়।

একইভাবে কার্বন চেইন পরিবর্তন না করে কিটোন যৌগও হতে পারে। যেমন নিচের উদাহরণে ২-হেক্সানল ও ২-হেক্সানোন দেখানো হলো। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, ১-হেক্সানল ও ২-হেক্সানল—দুটোই অ্যালহোকল যৌগ এবং দুটিতেই সমসংখ্যক কার্বন আছে। কিন্তু যৌগ দুটি ভিন্ন। তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন। শুধু অ্যালকোহল মূলক ভিন্ন কার্বনের সঙ্গে যুক্ত। যৌগ দুটি একে অপরের রিজিও-আইসোমার।

অন্যদিকে ১-হেক্সানাল ও ২-হেক্সানোন—দুটোই কার্বনিল যৌগ, কিন্তু প্রথমটি অ্যালডিহাইড, দ্বিতীয়টি কিটোন। কিটোন যৌগগুলোতে কার্বনিল মূলকের কার্বন পরমাণু অন্য দুটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত থাকে।

কিটোন যৌগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সরল গঠনের যৌগ অ্যাসিটোন। ওপরে অ্যাসিটালডিহাইড ও অ্যাসিটোনের গঠন দেখানো হলো (ছবি ৩)। অ্যাসিটোন একটা উদ্বায়ী তরল। বর্ণহীন দ্রাবক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। নেইল পলিশ রিমুভার হিসেবে অ্যাসিটোন ব্যবহার করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই অ্যাসিটোন থেকেই একধরনের বিস্ফোরক তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ সেনারা।

সাইক্লোহেক্সেন যৌগ নিয়ে আলোচনার সময় সে যৌগের চেয়ার কনফরমেশনের ছবিও দেখানো হয়েছিল। একইভাবে সাইক্লোহেক্সানোন যৌগ আঁকলে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতে ও বুঝতে সহজ হয়। নিচের ছবির সব কটি অঙ্কনই সঠিক (ছবি ৪)। তবে চেয়ার কনফরমেশনের মতো এঁকে চর্চা করার পরামর্শ রইল।

অক্সিজেন পরমাণু যখন দুটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন সেসব যৌগকে বলা হয় ইথার। মূলত অ্যালকোহল মূলকের অক্সিজেনের সঙ্গে হাইড্রোজেন পরমাণু না থেকে যদি কার্বন থাকে, তাহলে সেটা ইথার যৌগ (ছবি ৫)।

যেমন ইথানল অণুর অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হাইড্রোজেনের পরিবর্তে আরেকটি ইথাইল গ্রুপ যুক্ত করলে সেটা হয় ডাই-ইথাইল ইথার বা সংক্ষেপে ইথার। ইথার একসময় চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দ্রাবক হিসেবে ইথার অনেক ব্যবহৃত হয়।

ইথার যৌগও চক্রিক হতে পারে। ওপরের ষড়্‌ভুজ যৌগটির নাম হলো ডাই-অক্সেইন এবং পঞ্চভুজ যৌগটির নাম টেট্রাহাইড্রো ফিউরান বা সংক্ষেপে টিএইচএফ (THF) (ছবি ৬)। দ্রাবক হিসেবে এই দুটি যৌগের ব্যবহারও অনেক। পরবর্তী পর্বগুলোতে এই যৌগগুলোকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তাই আগেই পরিচয় করিয়ে দিলাম।

এ পর্যায়ে কার্বক্সিলিক মূলক যুক্ত কয়েকটা যৌগের উদাহরণ দেখব আমরা। পাশাপাশি কার্বক্সিলিক মূলক থেকে উদ্ভূত হয়, এমন কিছু যৌগ নিয়েও আলোচনা করব। আমরা নিশ্চয়ই ফ্যাটি অ্যাসিডের নাম শুনেছি। সাধারণভাবে, কার্বন চেইনযুক্ত জৈব অ্যাসিডকেই ফ্যাটি অ্যাসিড বলা হয়।

যেমন ১-হেক্সানাল হলো অ্যালডিহাইড যৌগ। সেই যৌগের কার্বনিল মূলকের কার্বনের সঙ্গে যদি OH যুক্ত থাকে, তাহলে সেটা হয়ে যায় কার্বক্সিলিক মূলক। কার্বক্সিলিক অ্যাসিড বা ১-হেক্সানয়িক অ্যাসিড। ফ্যাটি অ্যাসিডেও কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন থাকতে পারে। অর্থাৎ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড হতে পারে। ওপরের ফ্যাটি অ্যাসিডের উদাহরণ হলো সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের। আমরা যে ভোজ্যতেল খাই, সেগুলো কিন্তু সম্পৃক্ত বা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের যৌগ। অর্থাৎ সেসব তেলে কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনও থাকে। আর দ্বিবন্ধন থাকা মানেই কিন্তু সেটা সিস আইসোমার ও ট্রান্স আইসোমার হতে পারে। আগের পর্বে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ফ্যাটি অ্যাসিড বা ভোজ্যতেলে যদি ট্রান্স-দ্বিবন্ধন থাকে, সেটাকেই বলা হয় ট্রান্স ফ্যাট, যেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ডাক্তাররা আমাদের ট্রান্স ফ্যাট খেতে নিষেধ করেন। কারণ, আমাদের শরীর ট্রান্স–দ্বিবন্ধনকে সহজে ভাঙতে পারে না। ভেজিটেবল অয়েলে ট্রান্স ফ্যাট থাকে না। সেগুলো হয় সিস-দ্বিবন্ধন যুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের যৌগ।

কার্বক্সিলিক অ্যাসিড থেকে এস্টার ও অ্যামাইড নামে আরও দুটি মূলকের উদ্ভব হয়। ফলের মিষ্টি গন্ধ মূলত এস্টার যৌগের কারণ। যেমন প্রথম যৌগটি হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিড, যেটি মূলত ভিনেগার বা সিরকার যৌগ। আর অ্যাসিটিক অ্যাসিডের হাইড্রক্সি মূলকের হাইড্রোজেন যদি ইথাইল গ্রুপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, তাহলে সেটা হয়ে যায় এস্টার। ইথাইল অ্যাসিটেট। এস্টার যৌগগুলোও দ্রাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয় অনেক।

ছবি ৮


আধুনিক অঙ্কন পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব যৌগ খুব দ্রুত এবং সহজেই আঁকা যায়। কার্বন চেইনসংখ্যা বৃদ্ধি করে বহু যৌগ আঁকা সম্ভব হয় দ্রুত। নিচে আরেকটি এস্টার যৌগের উদাহরণ দেওয়া হলো। বস্তুত ইথাইল অ্যাসিটেটের ইথাইল গ্রুপের পরিবর্তে আইসো-অ্যামাইল গ্রুপ (পাঁচ কার্বন) যুক্ত করে এই এস্টার আঁকা যায়। কলার যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ আমরা পাই, সেটা এই এস্টার যৌগটির কারণে (ছবি ৯)।

স্বাদ ও গন্ধের উৎস তো জৈব যৌগই। আর এসব যৌগে সাধারণত অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, কিটোন, এস্টার—এসব মূলকই বেশি থাকে।

ছবি ১০


এস্টারের অক্সিজেনের বদলে নাইট্রোজেন পরমাণু বসালে সেটা হয়ে যায় অ্যামাইড। ওপরে ইথাইল অ্যাসিটেটের পাশাপাশি অ্যামাইডের উদারণ দেখানো হলো। আর নিচে ফরমিক অ্যাসিডের সঙ্গে ডাই মিথাইল ফরমামাইড এঁকে দেখানো হলো।

ডাই মিথাইল ফরমামাইড বা ডিএমএফ (DFM) দ্রাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই দ্রাবকের স্ফুটনাঙ্ক উচ্চ হওয়ায় (প্রায় ১৫০০ সে.) উচ্চ তাপমাত্রার বিক্রিয়ায় এই দ্রাবক ব্যবহার করা হয়। অ্যামাইড মূলক যুক্ত যৌগ ওষুধের অণুতেও উপস্থিত। যেমন পেনিসিলিনের অণুর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো চক্রিক অ্যামাইড। চক্রিক অ্যামাইডকে বলা হয় ল্যাকটাম। বর্গাকৃতির হলে সেটা হলো বেইটা-ল্যাকটাম। পঞ্চভুজের হলে গামা-‍ল্যাকটাম এবং ষড়্‌ভুজের হলে ডেল্টা-ল্যাকটাম বলা হয়। পেনিসিলিনে বেইটা-ল্যাকটাম থাকে।

এবার নাইট্রোজেন পরমাণুযুক্ত কার্যকরী মূলক নিয়ে আলোচনা করব। যদিও অ্যামাইডে নাইট্রোজেন পরমাণু আছে, তবে অ্যামাইডকে বিবেচনা করা হয় কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের জাতক হিসেবে। নাইট্রোজেন বা অ্যামিন মূলক যুক্ত যৌগগুলোর মধ্যে অ্যামোনিয়া (Ammonia) হলো সবচেয়ে ছোট যৌগ। পানির অণু থেকে অক্সিজেন সরিয়ে নাইট্রোজেন বসিয়ে দিলে যে যৌগ পাই, তা-ই অ্যামোনিয়া। বিষয়টাকে এভাবে তুলনা করা যায়। অ্যামিন যৌগগুলো হলো ক্ষারীয়।

অ্যামোনিয়ার হাইড্রোজেনকে অন্যান্য গ্রুপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করলে ভিন্ন ভিন্ন অ্যামিন যৌগ পাওয়া যায়। যেমন আইসোপ্রোপাইল গ্রুপ যুক্ত করলে হয় (2) আইসোপ্রোপাইল অ্যামিন। দুটি ইথাইল গ্রুপ যুক্ত করলে হয় (3), ডাই ইথাইল অ্যামিন। ডাই ইথাইল অ্যামিনকে ইথারের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ইথার হলো অক্সিজেন পরমাণু, আর ডাই ইথাইল অ্যামিন হলো নাইট্রোজেন পরমাণু। অ্যামোনিয়াতে যেহেতু তিনটি হাইড্রোজেন আছে, তাই সব কটি হাইড্রোজেন পরমাণুর বদলেই কার্বন চেইন যুক্ত করা যায়। যেমন তিনটি ইথাইল গ্রুপ যুক্ত করে পাওয়া যায় ট্রাই ইথাইল অ্যামিন (4)। ট্রাই ইথাইল অ্যামিন (TEA) জৈব ক্ষারক হিসেবে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। বহুল ব্যবহৃত আরেকটা জৈব ক্ষারক হলো ডাই আইসোপ্রোপাইল ইথাইল অ্যামিন (DIPEA)। এই যৌগটিকে হুনিগস বেইসও বলা হয়। এ যৌগের ব্যবহারও ভবিষ্যতে উল্লেখ করা হবে। তাই বারবার পড়া ও চর্চার মাধ্যমে মনে রাখার পরামর্শ রইল।

এ পর্যায়ে আমরা অ্যারোমেটিক যৌগের অঙ্কন নিয়ে আলোচনা করব। অ্যারোমেটিক যৌগ বিশেষ শ্রেণির হওয়ায় আগে আলোচনা করা হয়নি।

সাইক্লোহেক্সিন একটা চক্রিক (cyclic) যৌগ। যেটি দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এই যৌগে একটি দ্বিবন্ধন আছে, কিন্তু ছয়টি কার্বন পরমাণু আছে। একই যৌগে যদি তিনটি দ্বিবন্ধন থাকে, তাহলে সেটা হয়ে যাবে বেনজিন। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের যৌগ।

বেনজিনকে আমরা অবশ্যই আধুনিক নিয়মে এঁকে চর্চা করব। কার্বন-হাইড্রোজেন বন্ধন দেখিয়ে আঁকার প্রয়োজনীয়তা নেই। অনেকে বেনজিনের তিনটি দ্বিবন্ধনকে আলাদা করে না দেখিয়ে একটা বৃত্ত এঁকে দেন। এমন অঙ্কনও বিভিন্ন বইয়ে দেখা যায়। তবে এর চর্চাও কমে আসছে। একেবারে আধুনিক বইগুলোতে তিনটি বন্ধনকে আলাদা করে দেখিয়েই আঁকা হয়। এর কারণ হলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্রিয়াকৌশল ব্যাখ্যার সময় এ ধরনের অঙ্কনে সুবিধা বেশি।

বেনজিন সম্পূর্ণ সমতলীয় অণু। চক্রিক যৌগ ও অ্যারোমেটিক যৌগ। সম্পূর্ণ আলাদা শ্রেণির যৌগ। বেনজিন চক্রের সঙ্গেই বিভিন্ন কার্যকরী মূলক যুক্ত করে কিংবা অ্যালিফেটিক চেইন যুক্ত করে অনেক যৌগের অঙ্কন সম্ভব। বেনজিন রিংয়ে যদি নাইট্রোজেন মূলক যুক্ত থাকে, তাহলে সেসব যৌগকে বলা হয় হেটারো-অ্যারোমেটিক যৌগ।

যেমন প্রথম অণুটি হলো পিরিডিন। গন্ধযুক্ত তরল। এটাও জৈব ক্ষারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় যৌগটির নাম হলো পিরাজিন। বাদামের মতো গন্ধ। কিন্তু পিরিডেনের মতো তরল নয়, বরং সাধারণ তাপমাত্রায় কঠিন। তৃতীয় যৌগটি হলো পিরিমিডিন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় যৌগে দুটি করে নাইট্রোজেন পরমাণু আছে। আমরা যে ওষুধ সেবন করি, সেসব ওষুধের অণুতে বেশির ভাগ সময় হেটারো–অ্যারোমেটিক রিং থাকে।

আরও কয়েকটি অ্যারোমেটিক যৌগের উদাহরণ ওপরে আঁকা হলো। বেনজিন রিংয়ের সঙ্গে মিথাইল গ্রুপ যুক্ত থাকলে সে যৌগকে বলা হয় টলুইন (1)। টলুইন দ্রাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় যৌগটিকে বলা হয় অ্যাসিটোফিনোন। বেনজিনের সঙ্গে যুক্ত কিটোন গ্রুপ। আমন্ড বাদামে এই যৌগ পাওয়া যায়। তৃতীয় যৌগটি আমার খুবই প্রিয়। এ যৌগের নাম সিনামালডিহাইড। দারুচিনির যে গন্ধ, সেটা এ অণুটির জন্য। আর শেষ যৌগটির গন্ধ বেশ তীব্র হওয়ায় তেমন পছন্দ করি না। এই যৌগটির নাম ইউগিনল (4)। লবঙ্গের যে গন্ধ, সেটা এই যৌগটির কারণে। এযাবৎ যত রাসায়নিক যৌগের উদাহরণ দিয়েছি, প্রতিটি যৌগের ব্যবহারই ল্যাবরেটরিতে করেছি। এমন অসংখ্য অণু বা যৌগের ব্যবহার করতে হয় একজন অর্গানিক কেমিস্টকে।

এ পর্ব শেষ করব কয়েকটা ওষুধ বা ড্রাগ অণুর উদাহরণ দিয়ে। নিচের প্রথম অণুটি হলো প্যারাসিটামল, প্রায় শতবর্ষ পুরোনো ড্রাগ। এতে আমরা বেনজিন রিংয়ের সঙ্গে অ্যামাইড গ্রুপ দেখছি এবং অ্যালকোহল গ্রুপও দেখছি। দ্বিতীয় অণুটি হলো অ্যাসপিরিন। এই ওষুধও প্রায় শতবর্ষ পুরোনো।

ছবি ১৯


অ্যাসপিরিন অণুটিতে আছে কার্বক্সিলিক গ্রুপ এবং এস্টার গ্রুপ। শেষ অণুটি হলো যক্ষ্মারোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ। এই অণুটিতে আছে পিরাজিন রিং ও অ্যামাইড গ্রুপ।

এই তিন পর্বের মাধ্যমে জৈব যৌগের অঙ্কনের আধুনিক নিয়ম শেষ হবে। পরের পর্বগুলোতে আলোচনা হবে বিক্রিয়ার সহজ কথা। সে আলোচনায় এসব উদাহরণ বা অনুরূপ উদাহরণ আসবে। রাসায়নিক বন্ধন নিয়েও প্রাসঙ্গিক আলোচনা হবে। বিক্রিয়ার সহজ পাঠ বুঝতে হলে এই অঙ্কনের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে, চর্চার মাধ্যমে। আশা করব, স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের শেখানোর সময় এ ধরনের অঙ্কনরীতি ব্যবহার করবেন।


তথ্যসূত্র:
এই লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তা ম্যাগাজিনের প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত।
লেখক: ড. রউফুল আলম, গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
চিকিৎসা বিদ্যারসায়নবিদ্যা

ব্যথানাশক অণুর অণুকথা

অ্যাসপিরিনের পেছনের আকর্ষণীয় ইতিহাস আবিষ্কার করুন — উইলো বাকল থেকে ল্যাব-তৈরি অলৌকিক...

এসো শিখিরসায়নবিদ্যা

জৈব যৌগের গঠন, পর্ব ২

জৈব যৌগ গঠনের মূল বিষয়গুলি বাংলায় শিখুন, যার মধ্যে রয়েছে স্যাচুরেটেড এবং...

এসো শিখিরসায়নবিদ্যা

জৈব যৌগের গঠন কীভাবে আঁকবে

বাংলায় জৈব যৌগ কাঠামো আঁকার মূল বিষয়গুলো শিখুন। মিথেন থেকে সাইক্লোহেক্সেন পর্যন্ত...

রসায়নবিদ্যাসাধারণ বিজ্ঞান

অণু, গন্ধ ও জীবন

গন্ধের অদৃশ্য জগৎ এবং কীভাবে রাসায়নিক অণু স্মৃতি এবং আকর্ষণ থেকে শুরু...

বিজ্ঞানীদের জীবনীরসায়নবিদ্যা

নাইলনের সৃষ্টিকথা

ওয়ালেস ক্যারোথার্সের নাইলন আবিষ্কারের পেছনের আকর্ষণীয় গল্পটি আবিষ্কার করুন, একজন প্রতিভাবান রসায়নবিদ...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.