লিখেছেন:
নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ |
যোগাযোগ: [email protected]
মাত্র ৩০ বছর বয়সে একটি ডাইভিং দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন নোল্যান্ড আরবার (Noland Arbaugh)। তবে আজ তিনি কম্পিউটারে দাবা খেলছেন, গান শুনছেন—শুধুমাত্র নিজের চিন্তা দিয়ে। এই অলৌকিক বাস্তবতার পেছনে রয়েছে এলন মাস্কের নিউরোটেকনোলজি কোম্পানি Neuralink।
Neuralink কী এবং কিভাবে কাজ করে?
২০১৬ সালে এলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন Neuralink—একটি নিউরোটেকনোলজি কোম্পানি, যার লক্ষ্য মানুষের মস্তিষ্ককে সরাসরি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা। তাদের প্রধান উদ্ভাবন “N1 ইমপ্ল্যান্ট” একটি অত্যাধুনিক Brain-Computer Interface (BCI) প্রযুক্তি।
N1 ইমপ্ল্যান্ট মস্তিষ্কে রোবটের সাহায্যে স্থাপন করা হয়, যার মাধ্যমে ১০০০-এর বেশি অতিসূক্ষ্ম ইলেকট্রোড নিউরনের সংকেত ধারণ করে। এই সংকেত ওয়্যারলেস পদ্ধতিতে কম্পিউটারে প্রেরণ করা হয়, ফলে ব্যবহারকারী চিন্তার মাধ্যমেই কার্সর নিয়ন্ত্রণ, অ্যাপ ব্যবহার এবং গেম খেলতে পারেন।
নোল্যান্ডের জীবন বদলে যাওয়া মুহূর্ত
Neuralink-এর প্রথম পরীক্ষামূলক মানব প্রয়োগের অন্যতম অংশগ্রহণকারী হলেন নোল্যান্ড। ইমপ্ল্যান্টের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি চিন্তার মাধ্যমে দাবা খেলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। তার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে ইউটিউবে জনপ্রিয় হয়েছে, যেখানে নোল্যান্ড নিজের অসাধারণ অভিজ্ঞতা এবং দৃঢ় মানসিকতার গল্প শেয়ার করেছেন।
Neuralink-এর বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক গুরুত্ব
Neuralink শুধুমাত্র পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে:
- পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জীবনমান উন্নয়ন: স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ ও জীবনযাত্রার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
- নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের উন্নত চিকিৎসা: Parkinson’s, Alzheimer’s, ALS প্রভৃতি রোগের আরও কার্যকর চিকিৎসার সম্ভাবনা।
- মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা: ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, PTSD-র মতো মানসিক সমস্যার দ্রুত শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ।
- মানবিক ক্ষমতা বৃদ্ধি: স্মার্টফোন যেভাবে আমাদের স্মৃতি ও জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়েছে, Neuralink ভবিষ্যতে মানবিক জ্ঞান, স্মৃতিশক্তি ও শেখার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।
- মানুষ-মেশিন ইন্টারফেস: ভাষা ছাড়াই কেবল চিন্তার মাধ্যমে যন্ত্র বা AI-এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এলন মাস্কের ভাষায়, Neuralink একটি “human-AI symbiosis” এর ভিত্তি তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের গভীর ও জটিল কার্যক্রম বোঝা এবং নিয়ন্ত্রণে এই প্রযুক্তি হবে অপরিহার্য। এটি মানব সভ্যতার বিকাশে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হতে পারে।
প্রযুক্তিগত ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ
যদিও সম্ভাবনা বিশাল, Neuralink-এর মতো প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কিছু নৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
- মস্তিষ্কের তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা।
- ব্যক্তিগত চিন্তা বা স্মৃতি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রোধ করা।
- প্রযুক্তির অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি মোকাবেলা করা।
এসব ঝুঁকি এড়াতে কঠোর নীতিমালা ও নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
শেষ কথা
নোল্যান্ডের গল্প প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পাশাপাশি মানবিক সাহস এবং প্রত্যয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। Neuralink-এর এই উদ্ভাবন পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জীবন শুধু বদলেই দেবে না, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবহারের ধারণাকেও বদলে দিতে পারে।
আপনি কি মনে করেন ভবিষ্যতে আমরা মস্তিষ্ক দিয়েই ফোন চালাবো বা লেখালেখি করব?
মন্তব্যে জানিয়ে দিন আপনার মতামত।
Leave a comment