একগাদা টাস্ক, ছিন্নভিন্ন মন, আর হারিয়ে যাওয়া ফোকাসের গল্প
ধরা যাক, রাত ১০টা। আপনি বিছানায় হেলান দিয়ে মোবাইল হাতে বসে আছেন।
একসাথে কত কিছুই না করছেন –
হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের সাথে কথা, এক চোখে ফেসবুক স্ক্রল, আর ইউটিউবে কোনো ফানি ভিডিও চলছে, সাথে হয়তো পেছনে টিভিতে খবরও শোনা যাচ্ছে। এক ফাঁকে মেইলে ঢুকে অফিসের রিপোর্টের খসড়া খুলে দেখলেন -আবার স্ক্রল!
বাহ! নিজেকে মনে হচ্ছে যেন একসাথে দশটা হাতওয়ালা প্রযুক্তিমানব।
কিন্তু প্রশ্ন হলো – এভাবে একসাথে অনেক কিছু করতে গিয়ে আপনি আসলে কী হারাচ্ছেন?
📌 মাল্টিটাস্কিং: মিথ আর বাস্তবতা
অনেকেই বলে – “আমি মাল্টিটাস্কিং করতে পারি!”
কিন্তু নিউরোসায়েন্স বলছে – মানুষের মস্তিষ্ক প্রকৃত অর্থে একসাথে একাধিক Cognitive কাজ একসাথে করতে পারে না।
আমরা যা করি, সেটা আসলে দ্রুত এক কাজ থেকে আরেক কাজের মধ্যে Switch করা। এটাকে বলে Attention Switching।
যখনই আপনি এক টাস্ক থেকে আরেকটায় যান, ব্রেইনকে তার প্রসেসিং সেটিংস বদলাতে হয় – আর এই বদলানোর খরচ খুবই বেশি।
🔬 ব্রেইনের “টাস্ক সুইচিং” কীভাবে চলে?
ধরা যাক, আপনি একসাথে রিপোর্ট লিখছেন আর মেসেঞ্জারে চ্যাট করছেন।
• রিপোর্ট লেখার জন্য আপনার Prefrontal Cortex ফোকাস করে complex thought process এ।
• চ্যাটে যেতে হলে Social Brain network আর Language network একটিভ হয়।
• আপনার Attention network প্রতিবার নতুন টাস্কে শিফট হতে গিয়ে energy খরচ করে।
বারবার এই Switching আপনার ব্রেইনের attentional fuel খেয়ে ফেলে – একে বলে Switching Cost।
💡 Multitasking মানে Cognitive Overload
Stanford-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে – Heavy Multitaskers আসলে কম productive, তাদের মনোযোগ ভেঙে যায় সহজেই, irrelevant তথ্য গুলো Filter করতে পারে না।
একইভাবে London’s Institute of Psychiatry বলছে – Multitasking এর সময় IQ ১০ পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যেতে পারে!
যেমন, ঘুমবঞ্চিত অবস্থার সমান Cognitive Decline হয়।
📚 বাস্তব উদাহরণ:
1️⃣ Exam Time Multitasking:
অনেক ছাত্র একসাথে লেকচার শুনছে, ফেসবুকে গ্রুপ চ্যাট করছে, আর নোট লিখছে – শেষে দেখা যায় কিছুই পুরোপুরি মনে নেই। পড়ার ফোকাস ভেঙে ভেঙে যায়।
পরেরদিন Revision করতে গিয়ে গলা শুকিয়ে যায় – কিছুই তো বুঝিনি!
2️⃣ Office Call & Social Media:
অনেকেই জুম মিটিং চলাকালে ইনবক্স বা মেসেঞ্জার খোলে। Boss কী বলছে, তার অর্ধেক শোনা হয় – পরে ভুল সিদ্ধান্ত হয়।
মিটিং শেষে বলে – সব ঠিক আছে, কিন্তু পরে কাজে গণ্ডগোল হয়।
3️⃣ Parenting & Phone:
একজন বাবা/মা হয়তো সন্তানের সাথে খেলছে, কিন্তু মাথা ফোনে – Notifications চেক, Feed স্ক্রল।
শিশু বারবার ডাকে – মনোযোগ ছিন্ন। বাচ্চার সাথে Connect হওয়া হয় না।
⚡ মাল্টিটাস্কিং ব্রেইনের ক্ষতি কী কী?
✔️ Decision Making capacity কমে যায়।
✔️ Working Memory ক্লান্ত হয়ে যায়।
✔️ Stress hormone (Cortisol) বাড়ে।
✔️ Attention Span ক্ষয় হয়।
✔️ Deep Work করার ক্ষমতা কমে যায়।
🔑 তাহলে কী করবো?
👉 Monotasking শেখা।
এক সময়ে একটাই কাজ করুন – পুরো মনোযোগ দিন।
👉 Pomodoro Technique – ২৫ মিনিট কাজ, ৫ মিনিট ব্রেক।
👉 Distraction-free zone -মোবাইল সাইলেন্ট, নোটিফিকেশন অফ।
👉 To-do list – priority wise কাজ করুন।
👉 Mindfulness Practice – Brain কে single task এর অভ্যাস দিন।
🎯 চিন্তার খোরাক
আপনি কি সত্যিই মাল্টিটাস্কার, না Attention Jumper?
যখনি একসাথে অনেক কিছু করতে যান – নিজেকে প্রশ্ন করুন:
– এই সব কাজ একসাথে করলে কি আসলে কোনোটাই ঠিকভাবে হচ্ছে?
– এক কাজ শেষ করে আরেকটা করলে কি outcome ভালো হবে না?
✅ আমার কথা
মানুষের মস্তিষ্ক এক অসাধারণ যন্ত্র – কিন্তু একে একসাথে দশটা ফ্রন্টে ঠেলে দিলে, এর শক্তি খরচ হয় ছিন্নভিন্নভাবে।
এক জায়গায় সূর্যের আলোকে Focus করলে আগুন জ্বলে – কিন্তু ছড়িয়ে দিলে সে আলো শুধু আলোই থাকে।
জীবনেও তাই একসাথে হাজারটা Notification নয়, একসাথে একটা meaningful Focus, তাতেই আপনার শক্তি, আপনার সম্ভাবনা।
মো. ইফতেখার হোসেন
চিকিৎসা শিক্ষার্থী, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ |
নিউরোসায়েন্স, অভ্যাস গঠন ও মানুষের মস্তিষ্কের আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে আগ্রহী।
Leave a comment