নবীন প্রজন্মদের সাক্ষাৎকার সিরিজে এবার আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান এর। তিনি আমেরিকার University of Texas at Arlington এর শিক্ষার্থী এবং রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসাবে কর্মরত। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই
আমি ইউটিএ-তে কম্পিউটার সায়েন্সে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়াশোনা করছি। বর্তমানে আমি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। আমার আগ্রহের ক্ষেত্র হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং (এমএল) এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। আমি প্রথম রিসার্চ পেপার আইইইই এক্সপ্লোরে প্রথম লেখক হিসেবে প্রকাশ করেছি, আর দ্বিতীয়টি এসএসআরএন-এ প্রকাশিত হয়েছে। স্টার্টআপ নিয়ে আমার অনেক আগ্রহ আছে এবং আমি বিভিন্ন স্টার্টআপে জড়িত থাকার চেষ্টা করি।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা করার প্রতি বেশ আগ্রহ রয়েছে। আমি এআই নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী কারণ এর সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং আমাদের জীবনে এর প্রভাবও ব্যাপক। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এআই সম্পর্কে জ্ঞান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে অনেকেই “পরবর্তী বড় জিনিস” হিসেবে বিবেচনা করছে। আমি নিশ্চিত নই কতটা সত্য, কিন্তু তত্ত্বগতভাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে অনেক কিছু সম্ভব যা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটিং দিয়ে করা সম্ভব নয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ধাঁধার সমাধান করতে গেলে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার একবারে একটি করে বিভিন্ন পদ্ধতি চেষ্টা করে ধাঁধার সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে সেই ধাঁধার যতগুলো সমাধানের উপায় রয়েছে, সবগুলোই একসাথে চেষ্টা করা যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম “সুপারপজিশন”। সুপারপজিশনের এই নীতির মাধ্যমে বছরের পর বছরের গণনা খুব অল্প সময়ে করা সম্ভব, তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে পড়াশোনা করতে আমার ভালো লাগে।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
একজন বিজ্ঞানী হিসেবে কিছু গুণ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
প্রথমত, অন্বেষণমূলক মনোভাব থাকতে হবে—নতুন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ ও অভ্যস্ততা থাকা উচিত।
পরিশ্রমী মনোভাবও প্রয়োজন, কারণ গবেষণার জন্য মনোযোগ এবং কঠোর পরিশ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্থিতিশীলতা অপরিহার্য, কারণ গবেষণার পথে নানা চ্যালেঞ্জ ও বাধা আসবেই।
সঠিক প্রশ্ন করার দক্ষতা থাকা জরুরি, যাতে নতুন ধারণা ও সমাধান খুঁজে বের করা যায়।
নতুন সমস্যার সমাধানে প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও উদ্যম বজায় রাখা প্রয়োজন।
আর, নিজের আবিষ্কারগুলো সাদাসিধে ভাষায় শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করার ক্ষমতা থাকা উচিত, যাতে সবাই সহজেই বুঝতে পারে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
সবসময় কৌতূহলী থাকো এবং নিজেকে কমফোর্ট জোনের বাইরে ঠেলো। আমরা ছোটবেলা থেকে যে ধরনের ধারণাগুলো চর্চা করি, তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আমাদের জীবনে থেকে যায়। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রমে যেমন অলিম্পিয়াড, প্রতিযোগিতা, হ্যাকাথনে অংশগ্রহণ করে নিজের চারপাশের মানুষ এবং কমিউনিটিকে বিকশিত করা উচিত।
অনেক শিক্ষার্থী আছে, যাদের অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র ভয়ের কারণে বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে তারা নিজেদের প্রতিভা বিকাশ করতে পারে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো উচিত (হতে পারে স্কুলের সিনিয়র কেউ, হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই), এমনকি ঠান্ডা ইমেইল পাঠিয়েও হলেও কথা বলা শুরু করা এবং জানতে চেষ্টা করা যে কীভাবে দক্ষতা উন্নয়ন করা যায় এবং গবেষণায় যুক্ত হওয়া যায়।
অনেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে গবেষণায় যুক্ত হতে পারে, আবার কেউ কেউ একটি দল গঠন করে কাজ শুরু করতে পারে। এরপর এই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে নিজেদের উন্নতি করা সম্ভব।
আপনার যোগাযোগের তথ্য:
Facebook: Hasibur Rahman Dipto, Email: dipto.rh007 (@) জিমেইল.com
আপনার লিংকডইন সাইটের ওয়েবএড্রেস
আমরা মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান এর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি।
Leave a comment