সম্প্রতি আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি মোঃ ফাহিম-উল-ইসলাম এর। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আমার মাস্টার্স ডিগ্রির থিসিসের কাজ শেষের দিকে পৌঁছেছেন। তিনি আমাদের নবীন প্রজন্মের গবেষকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। বিস্তারতি জানার জন্য তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই?
হ্যালো! আমি মোঃ ফাহিম-উল-ইসলাম। বর্তমানে আমি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। আমি বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আমার মাস্টার্স ডিগ্রির থিসিসের কাজ শেষের দিকে পৌঁছেছি। এর আগে, আমি একই বিভাগ থেকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছি।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার গবেষণার মূল আগ্রহ হলো স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমগুলোর জন্য উন্নত মেশিন লার্নিং পদ্ধতি এবং ভাষা বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধির সমাধান তৈরি করা। আমি কম্পিউটার ভিশন এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) নিয়ে কাজ করছি, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ, বিভিন্ন বস্তু শনাক্তকরণ এবং ভাষার অর্থ বুঝতে পারার দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করি। কম্পিউটার ভিশনে, আমি এমন অ্যালগরিদম তৈরি করছি যা ছবি ও ভিডিও থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বস্তু শনাক্ত করে। NLP-তে, আমি বড় ভাষার মডেল (LLMs) তৈরির কাজ করছি, যা মানুষের ভাষার জটিলতা ও প্রসঙ্গ ধরে রাখতে পারে, ফলে ভাষা বোঝা ও প্রতিক্রিয়া দেওয়া আরও স্বাভাবিক হয়। এই গবেষণার মাধ্যমে আমি এমন সিস্টেম গড়ে তুলছি যা মানুষের ভাষা এবং ভিজ্যুয়াল ডেটাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে, যা ভবিষ্যতে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমগুলোকে আরও স্মার্ট এবং কার্যকর করে তুলবে।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে কিংবা করবে?
আমার গবেষণার কাজগুলি আমাদের বিভিন্নভাবে উপকৃত করতে পারে। প্রথমত, স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমগুলোর উন্নতির মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারকে আরও সহজ ও কার্যকরী করতে পারি। যেমন, উন্নত কম্পিউটার ভিশন এবং ভাষা বোঝার ক্ষমতা তৈরি হলে বিভিন্ন শিল্পে, যেমন স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, এবং পরিবহন ক্ষেত্রে, ডেটা বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুত ও সঠিক হবে।
দ্বিতীয়ত, বৃহৎ ভাষার মডেল (LLMs) তৈরির ফলে মানুষের ভাষা বুঝতে সক্ষম যন্ত্রগুলো আরও প্রাঞ্জলভাবে যোগাযোগ করতে পারবে, যা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করবে। উদাহরণস্বরূপ, চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টরা মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং সাহায্য করতে আরও কার্যকর হবে।
তৃতীয়ত, এই গবেষণা প্রযুক্তিগত ও সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধানে সহায়তা করবে, যেমন স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ এবং তথ্যের সঠিক বিশ্লেষণ। এর ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার সমৃদ্ধ হবে, যা কাজকে সহজ করবে এবং নতুন ব্যবসা ও উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গবেষনা কাজের বিশেষ কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
আমার প্রথম বর্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা প্রকল্পের অভিজ্ঞতা ছিল, যা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আমি স্বাস্থ্যসেবায় রোগের পূর্বাভাস দিতে একটি AI মডেল তৈরি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শুরুতেই বুঝলাম যে, আমার কাছে পর্যাপ্ত ডেটা নেই। আমি হাল ছাড়লাম না এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত ডেটা সংগ্রহ করতে চেষ্টা করলাম। কিছুদিনের মধ্যে আমি মূল্যবান ডেটা পেতে সক্ষম হলাম এবং ডেটা বর্ধন কৌশল ব্যবহার করে সীমিত তথ্যকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগালাম। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে, গবেষণায় প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি যোগাযোগ এবং সহযোগিতার গুরুত্বও অপরিসীম।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
প্রথমত, কৌতূহল থাকতে হবে, যাতে নতুন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে। দ্বিতীয়ত, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা দরকার, যাতে তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। তৃতীয়ত, ধৈর্য অপরিহার্য, কারণ গবেষণা প্রক্রিয়া অনেক সময় কঠিন ও দীর্ঘ হতে পারে। সৃজনশীলতা নতুন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে, এবং সহযোগিতা ও ভালো যোগাযোগের গুণ গবেষণায় বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি একত্রিত করতে সাহায্য করে মনে করি ।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
নতুন ধারণা গ্রহণে প্রস্তুত থাকুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় শেখার প্রতি আগ্রহী থাকুন এবং গবেষণা, ইন্টার্নশিপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। বিজ্ঞান একা করা যায় না, তাই সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন এবং জ্ঞান বিনিময় করুন।
আপনার ইমেইল : [email protected]
আপনার লিংকডইন : https://www.linkedin.com/in/fahim-ul-islam-99707b214/
আপনার ওয়েবসাইট, গবেষনাকাজের লিংক : https://scholar.google.com/citations?user=awqnhTYAAAAJ&hl=en
পরিশেষে, বিজ্ঞানী অর্গ-এর পক্ষ থেকে আমরা মোঃ ফাহিম-উল-ইসলামকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। তাঁর সাক্ষাৎকার আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক এবং প্রেরণাদায়ক। তিনি আমাদের নবীন গবেষকদের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত, যার পথ অনুসরণ করে আমরা বিজ্ঞান ও গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারব।
Leave a comment