বিজ্ঞান বিষয়ক খবরমহাকাশ

মঙ্গলগ্রহে মানুষ কতদিন টিকে থাকতে পারে? নতুন গবেষণা বলছে – সর্বোচ্চ ৪ বছর!

Share
Share

মঙ্গলগ্রহে মানুষের পা রাখার স্বপ্ন নতুন নয়। মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এটি দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রতীকী লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মঙ্গলে বসতি স্থাপন মানে হচ্ছে—মানবজাতির প্রথম আন্তঃগ্রহিক উপস্থিতি, যা আমাদের সভ্যতার পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর এক বিশাল পদক্ষেপ। তবে এই স্বপ্ন পূরণে নতুন এক সতর্কবার্তা এসেছে বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের UCLA ও MIT সহ একদল আন্তর্জাতিক গবেষকের নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে—মানুষ মঙ্গলগ্রহে সর্বোচ্চ চার বছর নিরাপদে থাকতে পারবে। তার বেশি সময় থাকলে মহাজাগতিক রশ্মির (cosmic rays) মারাত্মক প্রভাবে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পৃথিবীর মতো মঙ্গলগ্রহে কোনো চৌম্বকক্ষেত্র (magnetosphere) নেই, যা আমাদের গ্রহকে সৌর বিকিরণ এবং দূর মহাকাশের বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। ফলে, মঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান মানুষের শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় রেডিয়েশন সঞ্চার করতে পারে।

এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে Space Weather জার্নালে, যেখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—মঙ্গলে অভিযানের উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা বলছেন, সৌরচক্রের (solar cycle) সর্বোচ্চ পর্যায়ে (solar maximum) অভিযানের পরিকল্পনা করাই সবচেয়ে নিরাপদ। এই সময় সূর্য থেকে অতিরিক্ত সৌর কণার বিকিরণ দূর মহাজাগতিক রশ্মিকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

বর্তমান প্রযুক্তি অনুযায়ী, পৃথিবী থেকে মঙ্গলে একবারে যাওয়া-আসার জন্য দুই বছরের কম সময় লাগতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, চার বছরের নিরাপদ সীমার মধ্যেই সফল অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব। তবে এজন্য উচ্চমানের বিকিরণ প্রতিরোধক ঢাল তৈরি এবং সঠিক সময়ে অভিযানের সূচনা অপরিহার্য।

এই গবেষণা যেমন মহাকাশ সংস্থাগুলোর জন্য দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, তেমনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন SpaceX-এর মতো সংস্থাগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বয়ে আনছে। NASA এর Artemis প্রোগ্রাম বা SpaceX-এর Mars colonization পরিকল্পনার মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলোকে এই গবেষণা নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। ভবিষ্যতের অভিযানে কৃত্রিম চৌম্বকক্ষেত্র, ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি বা জলবিষয়ক বস্তুর ব্যবহার করে বিকিরণ থেকে সুরক্ষার চেষ্টা হতে পারে।

এই গবেষণা আবারও প্রমাণ করছে যে, মঙ্গল অভিযানে প্রযুক্তি ও সময় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মানবদেহের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতের মানুষ একদিন হয়তো মঙ্গলে দীর্ঘস্থায়ী বসতি গড়ে তুলতে পারবে।

আরও জানুন:
UCLA Research on Mars Radiation Risk

আপনি কি ভাবেন, আমরা একদিন মঙ্গলে একটি দীর্ঘস্থায়ী বসতি গড়ে তুলতে পারবো? মতামত জানান নিম্নের কমেন্ট বক্সে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
পরিবেশ ও পৃথিবীবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংস্থার রিপোর্ট লুকানো চেষ্টা

২০২৪ সালে, CO₂ এর মাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন NOAA...

পদার্থবিদ্যামহাকাশ

অদৃশ্য মহাবিশ্ব: যে ৯৫ শতাংশ এখনো অজানা

বাংলায় অন্ধকার মহাবিশ্বের রহস্য অন্বেষণ করুন — অন্ধকার পদার্থ এবং অন্ধকার শক্তি...

কলামবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

কলাম: The Quiet Upgrade, “Neurohumility” : The Science of Silent Strength

নম্রতার পিছনে স্নায়ুবিজ্ঞান আবিষ্কার করুন। এই প্রবন্ধে স্নায়ু-উদারতার ১৫টি মস্তিষ্ক-ভিত্তিক সুবিধা অন্বেষণ...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন পুরুষদের বীর্যেও!

চীনের সাম্প্রতিক গবেষণায় মানুষের শুক্রাণুতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। আবিষ্কার করুন...

পদার্থবিদ্যামহাকাশ

নিঃশব্দ আগুনের নৃত্য: মহাকাশে এক অচেনা শিখার গল্প

মহাকাশের ওজনহীন পরিবেশে আগুন কীভাবে আচরণ করে তা আবিষ্কার করুন। এই গল্পটি...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.