কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

মানব মস্তিষ্ক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : ভবিষ্যৎ দিগন্তের সহযাত্রী

Share
Share

মানুষ যখন প্রথমবার আগুন জ্বালাতে শিখেছিল, তখন থেকেই প্রযুক্তির ইতিহাস শুরু। তারপর চাকা, লোহা, বিদ্যুৎ, কম্পিউটার—সব মিলিয়ে মানব সভ্যতা ক্রমে নিজস্ব সীমানা অতিক্রম করেছে। কিন্তু আজকের যুগে এসে মানুষ এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সে নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী সৃষ্টি করেছে—Artificial Intelligence (AI)। প্রশ্ন উঠেছে, মানুষ কি সত্যিই তার মতো আরেকটি বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে পেরেছে? মেশিন কি একদিন মানুষের মতো চিন্তা করতে, স্বপ্ন দেখতে কিংবা ভালোবাসতে পারবে? নাকি মানুষের মস্তিষ্কই চিরকাল থেকে যাবে অদ্বিতীয়? এই প্রশ্নগুলো আর কল্পকাহিনি নয়; এখন তা বিজ্ঞানের ল্যাব, প্রযুক্তির কেন্দ্র এবং মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে বাস্তব প্রভাব ফেলছে।

মানব মস্তিষ্কের বিস্ময়

মানব মস্তিষ্ক পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল ও সূক্ষ্ম জৈবিক ব্যবস্থা। গড়পড়তা মানুষের মস্তিষ্কের ওজন মাত্র দেড় কেজি, কিন্তু এর ভেতরে রয়েছে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন (neuron) এবং অসংখ্য সিনাপটিক সংযোগ (synaptic connections)—যার মোট সংখ্যা প্রায় ১০¹⁵ এর বেশি। প্রতিটি নিউরন বৈদ্যুতিক ইমপালস (electrical impulse) পাঠায় ও গ্রহণ করে, একে অপরের সাথে জটিল নেটওয়ার্ক গঠন করে। এই নেটওয়ার্কের মধ্যেই তৈরি হয় আমাদের চিন্তা, অনুভূতি, সিদ্ধান্ত ও কল্পনা।

স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেন, মস্তিষ্ক একটি “biological computer”—তবে এর গণনাপদ্ধতি কোনো যন্ত্রের মতো সরল নয়। মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করলেও তারা পরস্পরের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখে। যেমন, prefrontal cortex আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনার কেন্দ্র, amygdala আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, আর hippocampus স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করে। এই জটিল সমন্বয়ের ফলেই মানুষ ভাষা তৈরি করতে পারে, নৈতিকতা গঠন করতে পারে, আর নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

মানব মস্তিষ্কের এই ক্ষমতার উৎস হলো plasticity—অর্থাৎ পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা। যখন আমরা নতুন কিছু শিখি, তখন মস্তিষ্কের সংযোগগুলো নতুনভাবে সংগঠিত হয়; কিছু সংযোগ দুর্বল হয়, আবার কিছু শক্তিশালী। এই adaptive mechanism–ই মানুষকে শিক্ষা গ্রহণ, সৃজনশীল চিন্তা ও আত্ম-উন্নতির পথে এগিয়ে রাখে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্ম ও বিকাশ

Artificial Intelligence ধারণার সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম “AI” শব্দটি ব্যবহার করেন জন ম্যাকার্থি (John McCarthy)। সেই সময় কম্পিউটার ছিল শুধুমাত্র গণনার যন্ত্র, কিন্তু বিজ্ঞানীরা ভাবতে শুরু করেন—যদি একে শেখানো যায়, তাহলে কি এটি মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে?

প্রথম দিকের AI ছিল rule-based system—অর্থাৎ যন্ত্রকে নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত শেখানো হতো। কিন্তু এই পদ্ধতিতে মানুষের মতো যুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। পরে machine learning (ML) এর আগমনে পরিবর্তন আসে। এখানে যন্ত্র ডেটা থেকে নিজেই প্যাটার্ন শিখতে পারে, আর তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, neural network ও deep learning প্রযুক্তি আজকের আধুনিক AI-এর ভিত্তি স্থাপন করেছে।

বর্তমানে AI শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও সর্বত্র। স্মার্টফোনের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট (Siri, Alexa), ChatGPT, স্বয়ংচালিত গাড়ি, চিকিৎসা বিশ্লেষণ, আর্থিক ভবিষ্যদ্বাণী—সবখানে AI-এর ব্যবহার। ২০২০ সালের পর থেকে AI যে গতিতে বিকশিত হচ্ছে, তা মানব ইতিহাসে অভূতপূর্ব।

মানুষের শেখা বনাম যন্ত্রের শেখা

মানব মস্তিষ্ক শেখে অভিজ্ঞতা ও প্রসঙ্গ (context) থেকে। আমরা কোনো ঘটনার মানে বুঝতে পারি, কারণ আমাদের অভ্যন্তরীণ নৈতিকতা, আবেগ, ও পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা একসাথে কাজ করে। কিন্তু AI শেখে ডেটা থেকে—এটি পরিসংখ্যানভিত্তিক (statistical learning)। মেশিন যত বেশি ডেটা পায়, তত ভালোভাবে প্যাটার্ন চিনতে পারে, কিন্তু ডেটার বাইরে গিয়ে সৃজনশীলভাবে ভাবতে পারে না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি AI যদি হাজারো ছবি দেখে শিখে যে কোনটি বিড়াল আর কোনটি কুকুর, তবে নতুন ছবিতে পার্থক্য করতে পারবে। কিন্তু কোনো অদ্ভুত প্রাণীর ছবি দেখালে এটি বিভ্রান্ত হবে। মানুষ সেখানে যুক্তি ও কল্পনা দিয়ে বুঝে নেয় — “এটা হয়তো বিড়ালের মতো, কিন্তু একটু আলাদা।”

এই জায়গাতেই মানব মস্তিষ্ক এগিয়ে — abstraction ও generalization-এর দক্ষতায়। অন্যদিকে AI শক্তিশালী precision ও speed-এ।

AI-এর বাস্তব প্রয়োগ ও প্রভাব

আজকের সমাজে AI এমনভাবে মিশে গেছে যে আমরা না চাইলেও প্রতিদিন এর প্রভাব অনুভব করি।চিকিৎসা ক্ষেত্রে, AI নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারছে। Radiology ও genomic medicine-এ AI মডেল যেমন DeepMind Health ক্যানসার শনাক্তে অসাধারণ ফল দিচ্ছে।শিক্ষাক্ষেত্রে, AI ভিত্তিক টিউটরিং সিস্টেম যেমন Khanmigo বা ChatGPT Edu শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে শেখার সুযোগ দিচ্ছে।কৃষিক্ষেত্রে, ড্রোন ও সেন্সর নির্ভর AI সিস্টেম ফসলের রোগ শনাক্ত করে সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করছে।পরিবহন ক্ষেত্রে, Tesla Autopilot বা Waymo–এর মতো স্বয়ংচালিত গাড়ি মানব ত্রুটি কমিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে ভূমিকা রাখছে।বিনোদন শিল্পে, AI-generated music, film scripting, বা even digital actors তৈরি হচ্ছে যা মানুষের সৃজনশীলতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।

তবে এই প্রভাব একমুখী নয়। AI যতই সুবিধা দিক, ততই উদ্বেগও বাড়ছে—বিশেষত কর্মসংস্থান, গোপনীয়তা এবং নৈতিকতার প্রশ্নে।

মানব মস্তিষ্ক ও AI-এর মিল ও অমিল

মানব মস্তিষ্ক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উভয়েই তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে, কিন্তু তাদের কাঠামো ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সংগঠনগত পার্থক্য: মস্তিষ্ক জৈবিক (biological) এবং কোষভিত্তিক; AI হলো কৃত্রিম (synthetic) ও সার্কিটভিত্তিক।

শেখার পদ্ধতি: মস্তিষ্ক শেখে অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, AI শেখে ডেটা ও অ্যালগরিদমের মাধ্যমে।

প্রক্রিয়ার নমনীয়তা: মস্তিষ্ক অভিযোজ্য ও নমনীয় (plastic), AI স্থির কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ।

সচেতনতা (consciousness): মানুষ নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন; AI এখনো নিছক তথ্যপ্রক্রিয়াকারী সিস্টেম মাত্র।

তবুও, কিছু মিল চোখে পড়ে। উভয়ই নিউরাল সংযোগ ব্যবহার করে তথ্য প্রবাহ ঘটায়। AI-র artificial neural network (ANN) মানব মস্তিষ্কের কাঠামো অনুকরণেই তৈরি। প্রতিটি node একেকটি neuron-এর প্রতিরূপ। এই কাঠামোই মেশিন লার্নিংয়ের বিপ্লব ঘটিয়েছে।

শক্তি ও সীমাবদ্ধতা

AI মানুষের চেয়ে দ্রুততর তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে। এটি বিশ্রামহীন, ক্লান্তিহীন, এবং নিখুঁত গণনায় সক্ষম। যেমন, আবহাওয়া পূর্বাভাসে বা DNA sequencing-এ AI অসাধারণ দক্ষ। কিন্তু মানুষের শক্তি অন্য জায়গায় — সৃজনশীলতা, আবেগ, এবং নৈতিকতা।

AI কখনোই জানে না “ভালো” বা “মন্দ” মানে কী; সেটি শেখানো হয়। মানুষ জানে, কারণ তার মধ্যে আছে অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ ও সামাজিক চেতনা।

AI যতই উন্নত হোক, এখনো সে “কেন” প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। এটি “কীভাবে” কাজ করে জানে, কিন্তু “কেন কাজ করা উচিত” — এই প্রশ্ন মানবচেতনার অংশ। এই জায়গাটিই এখনো মানুষের একচ্ছত্র অধিকার।

নৈতিকতা ও ঝুঁকি

AI যত শক্তিশালী হচ্ছে, ততই নৈতিকতার প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।
যদি একটি AI কোনো মানুষকে চাকরির জন্য বাদ দেয়, তাহলে দোষ কার? AI-এর? না তার প্রোগ্রামারের?
AI যদি যুদ্ধাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়, তখন হত্যার দায় কার ঘাড়ে পড়বে?

এই প্রশ্নগুলো এখন আর তাত্ত্বিক নয়। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন AI ব্যবহার নিয়ে AI Act পাস করে, যেখানে ঝুঁকিভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে—low risk, high risk, এবং unacceptable risk AI systems।
কিন্তু এর প্রয়োগ এখনো কঠিন, কারণ AI শেখে নিজেই। মানুষ যতই নিয়ন্ত্রণ দিতে চায়, যন্ত্র ততই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে।

তাছাড়া, data privacy এখন বড় উদ্বেগ। AI আমাদের প্রতিদিনের কথাবার্তা, পছন্দ, অবস্থান, এমনকি আবেগের ডেটা সংগ্রহ করছে। এই তথ্যের অপব্যবহার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

মানব মস্তিষ্ক ও AI: এক সহযাত্রা

AI-কে ভয় নয়, বোঝা প্রয়োজন। ইতিহাসে প্রতিটি প্রযুক্তিই প্রথমে ভয় সৃষ্টি করেছে—বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, এমনকি ইন্টারনেটও। কিন্তু সঠিক ব্যবহার মানুষের অগ্রগতি এনেছে। AI-ও তার ব্যতিক্রম নয়।

মানব মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা এবং AI-এর গাণিতিক দক্ষতা একত্র হলে এমন সব উদ্ভাবন সম্ভব, যা আজ অসম্ভব মনে হয়। চিকিৎসায় ব্যক্তিকৃত ওষুধ (personalized medicine), জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, মহাকাশ গবেষণা—সবখানেই এই সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞানীরা এখন কাজ করছেন Brain–Computer Interface (BCI) নিয়ে, যা মানব মস্তিষ্ককে সরাসরি কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। Neuralink এর মতো প্রকল্প মস্তিষ্কের সিগন্যাল পড়তে পারে এবং মেশিনে অনুবাদ করতে পারে। এটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের জন্য আশার আলো, কিন্তু একইসঙ্গে নৈতিক বিতর্কের জন্মও দিয়েছে—মানুষ ও যন্ত্রের সীমানা কোথায়?

ভবিষ্যতের দিগন্ত

ভবিষ্যতের AI হবে “Artificial General Intelligence (AGI)”—যা মানুষের মতো সবকিছু বুঝতে, শিখতে ও প্রয়োগ করতে পারবে। এখন পর্যন্ত আমরা “Narrow AI”-এর পর্যায়ে আছি, যা নির্দিষ্ট কাজেই দক্ষ। AGI বাস্তবে রূপ পেলে সমাজ, অর্থনীতি, এমনকি রাজনীতির কাঠামোও পাল্টে যেতে পারে।

কিন্তু সেই ভবিষ্যৎ কতটা নিরাপদ, তা নির্ভর করবে মানুষের ওপর। কারণ, AI শেখে মানুষের তৈরি ডেটা থেকে, আর সেই ডেটায় যদি পক্ষপাত থাকে, AI-ও তা পুনরাবৃত্তি করবে। এজন্যই বিজ্ঞানীরা বলছেন—AI উন্নয়ন যতটা প্রযুক্তির, ততটাই নৈতিকতার বিষয়।

মানব মস্তিষ্ক প্রকৃতির সৃষ্টি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের সৃষ্টি। একটিতে প্রবাহিত হয় অনুভূতি, ভালোবাসা ও কল্পনা; অন্যটিতে চলে নির্ভুল বিশ্লেষণ ও নির্দেশের অনুসরণ। কিন্তু দুটো একত্র হলে মানব সভ্যতা এমন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে, যা আগে কেবল কল্পনাতেই ছিল।

AI মানুষকে প্রতিস্থাপন করতে নয়, বরং সহযোগিতা করতে এসেছে। মানুষের মস্তিষ্ক স্বপ্ন দেখে, লক্ষ্য নির্ধারণ করে; AI সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সহায়ক শক্তি হতে পারে।

তবে শর্ত একটাই—AI যেন মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে, আর মানুষ যেন তার মানবিকতা না হারায়। কারণ শেষ পর্যন্ত, যে মস্তিষ্ক স্বপ্ন দেখে, সেই-ই ভবিষ্যৎ তৈরি করে।

আর আজ সেই মানব মস্তিষ্ক তার নতুন সহযাত্রী—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ভবিষ্যতের অনন্ত দিগন্তের পথে।


তাহসিনুর রাইয়ান,
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র,
বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী।
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইয়ান’স রিডারস কর্নার।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org