আজকের সাক্ষাৎকারে আমাদের বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. তৌফিক উল ইসলাম, যিনি চীনে উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করে সম্প্রতি দেশে ফিরে এসেছেন। সাধারণত বিজ্ঞানীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা গবেষণার পর সেখানে অবস্থান করেন বা চাকরিতে যুক্ত হন, কিন্তু ড. ইসলাম এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। তিনি দেশের প্রতি নিজের ভালোবাসা থেকে ফিরে এসেছেন এবং তার গবেষণা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। এই সাক্ষাৎকারে তার গবেষণা, অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারতি জানার জন্য তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
জলবায়ু পরিবর্তন ও গবেষণা।
ড. ইসলাম-এর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র হলো জলবায়ু পরিবর্তন, যা আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল, সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এখনও আমাদের কাছে নেই। ড. ইসলাম মনে করেন, এই সমস্যাটি মোকাবিলা করতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং তার পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন কেবল পরিবেশের উপর নয়, বরং আমাদের কৃষি, পানি সংস্থান এবং মানুষের জীবনযাত্রার উপরও গভীর প্রভাব ফেলবে।
পানিসম্পদ নিয়ে গবেষণা।
ড. ইসলাম পানিসম্পদ নিয়ে তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন যে, ভবিষ্যতে বৃষ্টিপাতের ফ্রিকোয়েন্সি ও পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, যদিও তার তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। তার গবেষণা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লেও, এটি প্রকৃতির অন্যান্য দুর্যোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে, তবে সেই ঝুঁকির তীব্রতা হয়তো কমবে।
এটি বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা ও কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, তাই এই ধরনের গবেষণা আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন।
নবীন গবেষকদের জন্য পরামর্শ।
গবেষণায় আগ্রহী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য ড. ইসলাম দিয়েছেন কিছু মূল্যবান পরামর্শ। তিনি বলেন,
প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীদের গবেষণা প্রবন্ধ পড়ায় মনোযোগী হওয়া উচিত।
তৃতীয় বর্ষে সফট স্কিল এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
চতুর্থ বর্ষে শিক্ষার্থীদের যেন স্বাধীনভাবে গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে শেখানো হয়।
ড. ইসলাম আরও বলেন, গবেষণায় সফল হতে হলে অধ্যবসায় এবং সেল্ফ মোটিভেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার প্রতি আগ্রহ এবং মনোযোগই সফলতার চাবিকাঠি।
বাংলাদেশে গবেষণার পরিবেশ।
বাংলাদেশে গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক সহায়তার অভাব রয়েছে। তবে আশার কথা হলো, গবেষণা প্রেমী মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং সরকার গবেষণার জন্য ফান্ডিং এবং মনিটরিং এর ব্যবস্থা করছে। বিশেষভাবে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে গবেষণার প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষ বিজ্ঞানীদের কাজ সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছেন।
ড. ইসলাম জানান, “গবেষণা উন্নয়নে সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানদের সহায়তার পাশাপাশি, সমাজের প্রতি বিজ্ঞানীদের অবদান তুলে ধরাও জরুরি।”
বিজ্ঞানী ডট অর্গ প্রকল্পে উৎসাহ।
biggani.org প্রকল্পের উদ্যোগে ড. ইসলাম বেশ উৎসাহিত। তার মতে, এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম নবীন গবেষকদের জন্য গবেষণা শেখা এবং নিজেদের কাজ প্রচার করার একটি চমৎকার সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি এই উদ্যোগের আরো সম্প্রসারণের আহ্বান জানান, যাতে আরও বেশি গবেষক তাদের কাজের ফলাফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
পরিসংখ্যান ও তথ্য।
জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশের গড় বৃষ্টির পরিমাণ প্রতি বছর ১০% বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং আগামী ২০ বছরে তা ২০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
পানিসম্পদ: বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের পানির স্তর প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পায়, যা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।
গবেষণায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ: বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২০% বিজ্ঞান শিক্ষার্থী গবেষণার প্রকল্পে যুক্ত থাকে। আগামী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
ড. তৌফিক উল ইসলামের মতো বিজ্ঞানীদের জন্য আমাদের দেশের উন্নতি এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তার অভিজ্ঞতা ও গবেষণাগুলো বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। আমরা আশা করি তার পরামর্শগুলো শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে এবং দেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
নিচে ড. তৌফিকুল ইসলামের সাক্ষাৎকারটি দেখুন-
Leave a comment