বর্তমান সময়ে আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি ডা. নাজমুল ইসলাম এর। বর্তমানে তিনি কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটিতে হেলথ রিসার্চ মেথডোলজি-তে পূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করছেন এবং গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। মাস্টার্স এবং পিএইচডি করার সময় তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও গবেষণা অনুদান পেয়েছেন। তিনি এই সাক্ষাৎকারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি পড়ুন:
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই?
আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (এমবিবিএস) সম্পন্ন করেছি। এরপর কাতার ইউনিভার্সিটি থেকে পাবলিক হেলথ-এ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি এবং পাঁচ বছর লেকচারার হিসেবে কাজ করেছি। বর্তমানে আমি কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটিতে হেলথ রিসার্চ মেথডোলজি-তে পূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করছি এবং গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করছি। মাস্টার্স এবং পিএইচডি করার সময় আমি বিভিন্ন পুরস্কার ও গবেষণা অনুদান পেয়েছি।
আপনার গবেষনার বিষয় কি?
আমার পিএইচডি গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো ফুড অ্যালার্জির যত্নের উন্নতি করা। এর অংশ হিসেবে আমি ফুড অ্যালার্জির কারণগুলো বিশ্লেষণ করছি এবং প্রমাণ-ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা উপাদানগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, যা রোগের অগ্রগতি বা ফলাফল পূর্বাভাস দিতে পারে। পরিবর্তনযোগ্য পূর্বাভাসমূলক উপাদানগুলো শনাক্ত করার পর, এই উপাদানগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত হবে, যা আমাদের গবেষণা দল পরিচালনা করবে। এর মাধ্যমে সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
আপনার গবেষনার কাজগুলি কিভাবে আমাদের উপকৃত করছে কিংবা করবে?
ফুড অ্যালার্জি একটি দ্রুত বর্ধনশীল জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যার এখনো কোনো নিরাময় নেই। এর কারণ এবং চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো এখনো বিকাশমান। আমার গবেষণা ফুড অ্যালার্জি সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান প্রদান করবে এবং সেই তথ্যগুলো উন্নত ক্লিনিক্যাল পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হবে। এই জ্ঞান সরাসরি আপডেটেড ফুড অ্যালার্জি নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে, যা রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে এবং শেষ পর্যন্ত রোগীদের যত্নের মান বৃদ্ধি করবে।
গবেষনা কাজের বিশেষ কোন অভিজ্ঞতা কি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?
একবার আমি একটি প্রকল্পে কাজ করছিলাম, যেখানে ফুড অ্যালার্জি রোগীদের উপর দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা করা হচ্ছিল। একটি রোগী, যার অ্যালার্জি অত্যন্ত গুরুতর ছিল, তার জীবনযাত্রার মান এবং তার পরিবারে এর প্রভাব সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। সেই মুহূর্তটি আমার জন্য খুবই হৃদয়গ্রাহী ছিল, কারণ তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে গবেষণার ফলাফল শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে না, বরং তা সরাসরি মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে। সেই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে এবং আমার কাজের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা অনুভব করেছি।
একজন বিজ্ঞানীর কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
একজন বিজ্ঞানীর মধ্যে কৌতূহল থাকা উচিত, সবসময় জিনিসগুলো কীভাবে কাজ করে তা জানার চেষ্টা করা জরুরি। ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো প্রায়ই সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সমালোচনামূলক চিন্তার ক্ষমতা থাকা দরকার, যা তাকে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং সমস্যার কার্যকর সমাধান খুঁজতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, নতুন প্রমাণের আলোকে পুরোনো ধারণা চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে একজন বিজ্ঞানীর খোলা মনে থাকা উচিত। শেষ পর্যন্ত, যোগাযোগ দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিজ্ঞানী তার গবেষণার ফলাফল সহজ ভাষায় সবার সাথে ভাগ করে নিতে পারে, যা বিজ্ঞানের জ্ঞানকে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় – তাদের জন্য আপনার কোন ম্যাসেজ কিংবা বার্তা কি?
আমার পরামর্শ হবে – কৌতূহলকে কখনো থামতে দেবেন না। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ এবং নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা আপনাকে সবসময় এগিয়ে রাখবে। ভুল করতে ভয় পাবেন না, কারণ অনেক সময় সাফল্যের পথে ভুলগুলোই আপনাকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা দেয়। আপনার ধারণাগুলো চ্যালেঞ্জ করুন এবং সেগুলোকে গভীরভাবে অন্বেষণ করুন।
বিজ্ঞান এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে ধৈর্য, অধ্যবসায়, এবং নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম অপরিহার্য। গবেষণার পথে বাধা আসবেই, কিন্তু কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মবিশ্বাস। আপনি যা করছেন তাতে বিশ্বাস রাখুন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যান। আত্মবিশ্বাসই সফলতার চাবিকাঠি। গবেষণার প্রতিটি ধাপে, সিদ্ধান্ত নিতে এবং নতুন কিছু শেখার পথে আত্মবিশ্বাস আপনাকে এগিয়ে নেবে। ভুল থেকে শিখুন, কিন্তু নিজের উপর আস্থা হারাবেন না।
এছাড়াও, গবেষণা পদ্ধতি শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে কেবল কীভাবে সঠিকভাবে গবেষণা করতে হয় তা শেখাবে না, বরং আপনাকে এমন দক্ষতা দেবে যার মাধ্যমে আপনি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ এবং তথ্য চিহ্নিত করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে তথ্যের সহজলভ্যতার কারণে সব তথ্যই নির্ভরযোগ্য নয়। সঠিক গবেষণা পদ্ধতি আপনাকে তথ্য বিশ্লেষণ এবং নির্ভরযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
আপনার ইমেইল : [email protected]
আপনার লিংকডইন : https://www.linkedin.com/in/dr-nazmul-islam-6b4b24154/
পরিশেষে আমরা বিজ্ঞানী অর্গ এর পক্ষ থেকে ডা. নাজমুল ইসলামকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা । তার সাক্ষাৎকারে আমরা খুবই আননন্দিত। তিনি আমাদের নবীন গবেষকদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমরা তার সফলতা কামনা করি।
Leave a comment