চিকিৎসা বিদ্যাবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

বয়স বাড়লে কি মানুষ আরও বুদ্ধিমান হয়?

Share
Share

আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসি যে যুবক বয়সই নাকি মস্তিষ্কের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়। পরীক্ষার প্রশ্ন মনে রাখা, দ্রুত চিন্তা করা বা নতুন কিছু শেখা—এসবই নাকি তরুণ বয়সে সবচেয়ে সহজ হয়। কিন্তু নতুন এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ আসলে জীবনের একটু পরের সময়, অর্থাৎ পঞ্চান্ন থেকে ষাট বছর বয়সে, সবচেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে।

শুনে অবাক লাগছে? তাহলে চলুন বুঝে নিই ব্যাপারটা।

মানুষের মস্তিষ্কের কিছু ক্ষমতা, যেমন দ্রুত ভাবা বা নতুন কিছু মুখস্থ করা, সত্যিই তরুণ বয়সে বেশি থাকে। কিন্তু বুদ্ধি মানে শুধু গতি নয়। তার সঙ্গে জড়িত থাকে অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, ধৈর্য আর বিচক্ষণতা। এই গুণগুলো ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী ষোলটি মানসিক ও ব্যক্তিত্বগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি বড় গবেষণা করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, দায়িত্ববোধ বা মনোযোগ সাধারণত পঁয়ষট্টি বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি হয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণ বা মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়তে থাকে সত্তর বছর পর্যন্ত। আর নৈতিক চিন্তা বা বিচারবুদ্ধি আরও পরিণত হয় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে। সব মিলিয়ে দেখা গেছে, মানুষের চিন্তা, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও যুক্তির যোগফল সবচেয়ে শক্তিশালী হয় জীবনের মধ্য ও পরবর্তী সময়ে।

মনোবিজ্ঞানে বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের বুদ্ধির দুটি দিক আছে। একদিকে আছে ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স, মানে নতুন কিছু দ্রুত শেখা বা সমস্যার সমাধান করা। অন্যদিকে আছে ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স, মানে জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া জ্ঞান ও বোঝাপড়া। প্রথমটি তরুণ বয়সে তীক্ষ্ণ থাকে, কিন্তু দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ অভিজ্ঞতার বুদ্ধি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও গভীর হয়। তাই বয়স বাড়লে মানুষ অনেক সময় অল্প কথায় বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অন্যের অনুভূতি বুঝে শান্তভাবে কাজ করতে পারে—এটাও এক ধরনের বুদ্ধিমত্তা।

অনেক মহান বিজ্ঞানী, লেখক, আর আবিষ্কারক তাঁদের সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছেন পঞ্চাশের পরে। আইজ্যাক নিউটন, মেরি কুরি বা চার্লস ডারউইন—তাঁদের জীবনের পরবর্তী সময়েই এসেছে সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। কারণ তখন তাঁরা শুধু জ্ঞানে নয়, মনন ও বিচারে পরিপক্বতা অর্জন করেছিলেন।

তাই বয়স বাড়া মানেই পুরনো হয়ে যাওয়া নয়। বরং সেটা হলো প্রজ্ঞা ও গভীর চিন্তার সময়। যুবক বয়সে আমরা শিখি, ভুল করি, গতি অর্জন করি, আর পরিণত বয়সে আমরা বুঝতে শিখি কেন কী করছি এবং কিভাবে আরও ভালোভাবে করা যায়। বিজ্ঞান বলছে, জীবনের প্রতিটি বয়সই গুরুত্বপূর্ণ, আর শেখার কোনো শেষ নেই। তাই ছোট তুমি এখনই শেখো, কৌতূহলী হও, আর মনে রেখো—তোমার মস্তিষ্কের যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org