কোয়ান্টাম কম্পিউটিংতথ্যপ্রযুক্তি

কোয়ান্টাম কম্পিউটারে দৈবচয়ন সংখ্যার যুগান্তকারী সাফল্য

Share
Share

সম্প্রতি কোয়ান্টিনুম (Quantinuum) নামের একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন—তারা প্রথমবারের মতো সার্টিফায়েড দৈবচয়ন সংখ্যা উৎপাদনে সফল হয়েছেন, যা আধুনিক সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক।

কীভাবে এটি সম্ভব হলো?

গবেষকরা ৫৬-কিউবিট বিশিষ্ট কোয়ান্টিনুম ট্র্যাপড-আয়ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার, যেখানে আয়ন বা চার্জযুক্ত পরমাণুগুলোকে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার করা হয় ব্যবহার করে এই দৈবচয়ন সংখ্যা তৈরি করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্গন ও ওক রিজ জাতীয় গবেষণাগারের ক্লাসিক্যাল সুপারকম্পিউটারগুলোর সহায়তায় যাচাই করা হয় যে, এই সংখ্যা গুলো প্রকৃতপক্ষে পূর্বনির্ধারিত নয় এবং প্রকৃত অর্থেই দৈবচয়ন।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

দৈবচয়ন সংখ্যা আমাদের দৈনন্দিন ডিজিটাল জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—যেমন নিরাপদ অনলাইন লেনদেনে ব্যাংকের OTP (One Time Password) উৎপাদন, বা সিকিউর কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহারকারীর প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। এনক্রিপশন, সিকিউর পাসওয়ার্ড, সিমুলেশন ইত্যাদির জন্য এগুলো অপরিহার্য। কিন্তু ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার সাধারণত ছদ্ম-দৈবচয়ন সংখ্যা (pseudo-random number) তৈরি করে—যেমন একটি নির্দিষ্ট সূত্র ব্যবহার করে বানানো লটারির নম্বর, যেগুলো দেখতে এলোমেলো হলেও অভ্যন্তরীণভাবে পূর্বনির্ধারিত। এর বিপরীতে, প্রকৃত দৈবচয়ন সংখ্যা হলো প্রকৃতিই নির্ধারণ করে এমন ঘটনা—যেমন একটি পরমাণুর স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষয়, যা পূর্বানুমান করা একেবারেই অসম্ভব তৈরি করে, যেগুলো নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। কোয়ান্টাম পদ্ধতিতে উৎপাদিত সংখ্যা প্রকৃত দৈবচয়ন হওয়ায় এগুলোর উপর ভিত্তি করে আরও শক্তিশালী এবং নিরাপদ সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব।

ভবিষ্যতের প্রভাব

এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে নিরাপদ এনক্রিপশন কী তৈরি—যেমন কোনো ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশনের পাসওয়ার্ড এনক্রিপশন বা সরকারি তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত নাগরিকদের ডেটার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে— অর্থনৈতিক ট্রান্সঅ্যাকশন সুরক্ষা, এবং উন্নত গোপনীয়তা সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অন্যতম প্রথম বাস্তব প্রয়োগ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

এই উদ্ভাবন কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে শুধু গবেষণাগারের গণ্ডি থেকে বাস্তব জীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশে পরিণত করার পথে এক বড় ধাপ, তবে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির বাস্তবায়নে যন্ত্রের স্থিতিশীলতা, উচ্চ ব্যয় এবং বাস্তব ব্যবহারের জন্য স্কেল করার মত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।


Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সাইবার অপরাধ: এআই-ই কি আমাদের শেষ ভরসা?

বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তায় এআই কীভাবে নতুন রূপ দিচ্ছে তা আবিষ্কার...

তথ্যপ্রযুক্তিনতুন প্রযুক্তি

নতুন যুগের অর্থপ্রদান প্রযুক্তি: দ্রুত, নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন লেনদেনের পথে

ডিজিটাল পেমেন্ট প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের আর্থিক জগতকে রূপান্তরিত করছে তা আবিষ্কার করুন।...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

ইন্টারনেট দখলে নিয়েছে বট বা অনলাইনের রোবট

২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী ওয়েব ট্র্যাফিকের ৫১% এখন ইন্টারনেট বট দ্বারা আধিপত্য বিস্তার...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি

আমরা কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর খুব বেশি নির্ভরশীল? এই প্রবন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগতথ্যপ্রযুক্তি

কোডিং করে ঘুরে আসুন সান ফ্রান্সিসকো

১৮ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য GitHub-এর ২০২৫ সালের কোডিং চ্যালেঞ্জ আবিষ্কার...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.