লেখক:
মুহাম্মদ মুস্তাফা হুসেইন
পার্ডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের, অধ্যাপক।
গবেষণা হোক আর দেশের উন্নতি যাই হোক না কেন, দুটি পথের কথা আসে—ইনক্রিমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট এবং ডিসরাপশন। একটির অর্থ পরিচিত সিস্টেমকে সামান্য গুছিয়ে নেওয়া, আরও এফিসিয়েন্ট বানানো; আরেকটির অর্থ সেই সিস্টেমটাই বদলে ফেলা। BEAR, vFabLab, Mobile Fab এবং Silicon River উদ্যোগগুলো কখনোই ইনক্রিমেন্টাল পথ নয়—এগুলো নতুন বাস্তবতা তৈরির প্রচেষ্টা। এগুলো এমন কাজ, যা বাংলাদেশকে এমন এক উচ্চতায় ইনশাআল্লাহ নিয়ে যেতে চায়, যেখানে আমরা পিছিয়ে থাকা অনুসারী নয়, বরং ভবিষ্যৎ নির্মাতা। এর মধ্যে vFabLab বা মোবাইল ফ্যাব এর কনসেপ্ট এবং ইমপ্যাক্ট বৈশ্বিক।
বাংলাদেশ বহু বছর ধরে ইনক্রিমেন্টাল পরিবর্তনের মধ্যে আছে। মুখস্থভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা, কম মূল্য সংযোজনভিত্তিক শিল্প, এবং অর্থনীতির কয়েকটি সেক্টরের ওপর অতির্ভরতা—সবই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার গতিকে একমাত্র করে রেখেছে। ধীরে ধীরে কিছুটা উন্নতি হলেও কখনোই বিশ্বের বুকে নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া—তারা ছোট ছোট পদক্ষেপে নয়, বরং সাহসী ডিসরাপশনে নিজেদের জাতীয় ভাগ্য বদলেছে। পুরোনো কাঠামোর ভেতরে সামান্য পরিবর্তন তাদের পথ নয়, বরং তারা নতুন কাঠামোই তৈরি করেছে। কিন্তু তার জন্যে দরকার নেতৃত্ব এবং সামাজিক মানসিকতা। লেসার ফোকাসড অল অফ দ্য এবোভ এপ্রোচ এবং কেন হবে না এই গ্রিট ।
আমাদের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধাগুলোর একটি হচ্ছে রাজনৈতিক অন্ধতা। রাজনীতি তার মূল নীতিগত চেতনাকে হারিয়ে অনেক সময় ক্ষমতার খেলায় পরিণত হয়েছে। আমি সবসময় রাজনীতির প্রতি দূরত্ব রাখি, কারণ রাজনীতি তখনই মূল্যবান, যখন তার কেন্দ্রে থাকে সেবা, পারপাস, ইমপ্যাক্ট—not ক্ষমতা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যখন আমরা দলীয় আনুগত্যকে সত্য ও ন্যায়ের উপরে রাখি, তখন দেশ পিছিয়ে যায়। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় তখন, যখন জনগণ নিজস্ব বিচারবুদ্ধি ত্যাগ করে নেতা বা দলের অন্ধ অনুসারী হয়ে যায়। একজন ভোটার আসলে একজন নিয়োগকর্তা—আর রাজনীতিবিদ তার কর্মচারী। এই সম্পর্ক ভুলে গেলে জাতিও ভুল পথে যায়।
অন্ধ আনুগত্যের সংস্কৃতিতে দুর্নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়, mediocre মানুষ ক্ষমতার শীর্ষে উঠে আসে, যোগ্য মানুষ sidelined হয়, আর জাতির গতি থেমে যায়। এই সংস্কৃতি বদলানো জরুরি—কারণ দেশ শুধু নেতাদের মাধ্যমে এগোয় না; দেশ এগিয়ে যায় সচেতন, নীতিবান, যুক্তিবাদী নাগরিকদের কারণে। রাজনীতি হলো একটি পথ, কিন্তু দেশের আসল শক্তি—শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা, এবং সৎ সাধারণ মানুষ।
আমি অনেকের আগ্রহ দেখি যারা সেমিকন্ডাক্টর এ ইনভেস্ট করতে চায় । অনেকেই ভাবে এটি অনেকটা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি মতো যেটা অনেক অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিশ্বে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু যদি আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ নতুন জায়গা তৈরি করতে পারে, তাহলে BEAR, Silicon River—এসব উদ্যোগই আমাদের সেই দিকে নিয়ে যাবে। এতে শুধু শিল্প বদলাবে না, বদলাবে মানসিকতা। পরবর্তী প্রজন্ম দেখবে—তারা শুধু বিশ্বে প্রতিযোগিতা করবে না, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নিজেরাই সৃষ্টি করবে।
আমি কখনোই দাবি করি না যে আমি সব জানি। আমি শুধু চেষ্টা করি শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, ইনফ্লুয়েন্স, নেটওয়ার্ককে দেশের মানুষের কাজে লাগাতে। এই কাজ কখনোই সহজ নয়—বিরোধিতা থাকবে, ভুল বোঝাবুঝি হবে, বাধা আসবে। যেমন সেদিন দেখলাম একজন অন্য জায়গায় কমেন্ট করেছে সেমিকন্ডাক্টর বাংলাদেশর জন্যে পাইপড্রিম। আমি এটা জানি, সত্যিকারের পরিবর্তন কখনোই স্বস্তির সীমার মধ্যে জন্ম নেয় না। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সাহসী হতে হবে, সত্যের প্রতি আন্তরিক হতে হবে, এবং আলো ছড়ানোর ক্ষমতা নিজের ভেতর থেকে গড়ে তুলতে হবে।
আজ বাংলাদেশের সামনে দুটি পথ। একটি পরিচিত—যেখানে আমরা ধীরে ধীরে কিছুটা ভালো হবো। আরেকটি নতুন—যেখানে আমরা ঝুঁকি নেবো, শিখবো, উদ্ভাবন করবো, এবং ভবিষ্যৎকে নিজেরাই নির্মাণ করবো। আমার প্রত্যাশা থাকবে ইনশাআল্লাহ আমরা সেই নতুন পথটি বেছে নিই—যা কঠিন, কিন্তু সম্ভাবনায় পূর্ণ। কারণ একটি জাতির গৌরব কখনোই আরামদায়ক সিদ্ধান্তে তৈরি হয় না; তা তৈরি হয় দূরদর্শী, মানবিক, এবং সাহসী পদক্ষেপে।
আবারও আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি দেশ গড়ে রাজনীতিবিদরা নয়; দেশ গড়ে তার মানুষ। আর মানুষ যদি নিজেকে বদলাতে পারে, তাহলে একটি পুরো জাতির ভাগ্যও পাল্টে যায়।
Surah Ar-Ra’d (13:11)
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের ভেতরের অবস্থা পরিবর্তন করে।”
মহান আল্লাহ আমদের সহায় হোন ইনশাআল্লাহ।
https://www.facebook.com/714301142/posts/10161656025671143/?rdid=GlMB93AJ7rT8iEdU#

Leave a comment