কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

খোঁজ, বাংলা ভাষার প্রথম এআই-চালিত ফ্যাক্টচেকারের অভিনব যাত্রা

Share
Share

আজকের এই ডিজিটাল যুগে চারপাশে তথ্যের স্রোত বয়ে চলেছে। কিন্তু তার ভেতরে আসলটা কোথায়, মিথ্যাটা কোথায়, সে পার্থক্য করা কি সহজ? ফেসবুকের নিউজ ফিড, হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রামের গ্রুপ চ্যাট, কিংবা নিউজ অ্যাপ। সব জায়গায় মিথ্যা খবর, গুজব আর অর্ধসত্য ভেসে বেড়ায়। বাংলা ভাষার কোটি মানুষের জন্য এ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। কারণ সত্য যাচাইয়ের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা না থাকলে এর ফল হতে পারে ভয়াবহ।

এই ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তির সময় থেকেই জন্ম নিয়েছে খোঁজ, বাংলা ভাষার প্রথম এবং সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ এআই-ভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম।

টেক্সট, ছবি, ঐতিহাসিক ঘটনা কিংবা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব, সবকিছুর সত্যতা যাচাই করতে খোঁজ হয়ে উঠতে পারে আপনার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী, আপনারই মাতৃভাষায়। ডিজিটাল যুগে সত্যকে ফিরিয়ে আনার জন্যই এর জন্ম, আর তাই এটি হয়ে উঠতে পারে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানোর অপরিহার্য হাতিয়ার।

ভাবুন তো, একদিন হুট করে অনলাইনে চোখে পড়ল এমন এক খবর, কোনো বড়সড় মিডিয়ায় নেই, কিন্তু ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার আর কমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে আসলেই সত্য:
“একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ডাকাতি হয়েছে, হাজারো মানুষ নিঃস্ব।”

এমন অনিশ্চিত মুহূর্তে খোঁজ হতে পারে আপনার একমাত্র ভরসা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এআই ঘেঁটে আনবে আসল উৎস, তুলনা করবে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা, আর আপনাকে দেখাবে একটি পূর্ণাঙ্গ ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট। বলে দেবে কী দেখে বিশ্বাসযোগ্য, কোন তথ্য কোথা থেকে এসেছে আর কোথায় সন্দেহ থাকতে পারে। এই ফ্যাক্টচেকিং ভোজবাজির মতো উদয় হয় না। কিংবা এআই সর্বজান্তা তাই আপনাকে ফ্যাক্টচেক করে দিচ্ছে৷ ব্যাপারটা এমনও না। এর পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির ঝলক।

খুব সংক্ষিপ্তাকারে যদি জানতে চান, তাহলে বলি। প্রথমে খবরটিকে ঘিরে ওয়েব, সোশ্যাল পোস্ট, নিউজ আর্কাইভ এবং মল্টিমিডিয়া খোঁজা হয়, তারপর সূত্রগুলোর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা হয়, কনটেক্সট-পাল্লা মিলিয়ে টেক্সট ও ইমেজ বিশ্লেষণ করা হয়, এবং সবশেষে সোর্স দেখিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়—সত্য, বিভ্রান্তিকর না ভুল। চলুন আরও সামনে যাই, খোঁজের কার্যপ্রণালী নিয়ে আরও জানা যাক।

খোঁজের কার্যপ্রণালী: 

খোঁজ এর পেছনের মূল শক্তি হলো খোঁজ টিমের বানানো একটা দারুণ স্মার্ট আর্কিটেকচার। এটা এআই-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে তথ্য খোঁজে আর সেটাকে এমন সহজ করে তুলে ধরে, যেন আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি। এটাকে কেবল আপনি নিছক একটা সার্চ ইঞ্জিন বললেও ভুল করবেন—এটা একটা ইন্টেলিজেন্ট প্রসেস, যা প্রতিটা ধাপে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নিখুঁত ফলাফল দেয়ার। চলুন, বিস্তারিত জেনে নিই:

(১) বিশ্বাসযোগ্য উৎসের কিউরেটেড লিস্ট: আমরা খুঁজে খুঁজে বাংলা এবং ইংরেজির ১৫০ এর বেশি ওয়েবসাইট লিস্ট করলাম। এগুলো এমন সাইট, যেখানে সমসাময়িক খবর—রাজনীতি, অর্থনীতি, সেলিব্রিটি, বিজ্ঞান, ধর্ম এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য—সবকিছুই নির্ভরযোগ্যভাবে পাওয়া যায়। প্রধান নিউজ পোর্টাল, ফ্যাক্ট-চেক সাইট, বৈজ্ঞানিক জার্নাল এবং স্বাস্থ্য-বিষয়ক প্ল্যাটফর্মগুলো এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।​ এটা কেন করা হলো? কারণ, তথ্যের উৎসই যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটাই অকেজো হয়ে যায়। এই শক্তিশালী তালিকার মাধ্যমে আমরা “গার্বেজ ইন, গার্বেজ আউট”-এর ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে কমিয়ে এনেছি। এর ফলে, আমাদের প্রতিটি ফলাফল আসে শুধু পরিচিত ও যাচাই করা উৎস থেকে, যা আপনার আস্থাকে আরও মজবুত করে। চেষ্টা করা হয়েছে এটাকে এমন একটা সুরক্ষিত লাইব্রেরি বানানোর, যেখানে শুধু অথেন্টিক আর ভ্যালিডেটেড তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

(২) প্রশ্নের অপটিমাইজেশন: এআই-এর প্রথম ধাপ

যখন আপনি কোনো প্রশ্ন করেন, যেমন “ডাকসু নির্বাচনে কী ভোট কারচুপি হয়েছিল?“, তখনই আমাদের এআই-এর খেলা শুরু হয়। এটা আপনার সহজ প্রশ্নটাকে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর সার্চ কিওয়ার্ডে রূপান্তর করে। এটার একটা গালভরা নাম আছে, তা হচ্ছে কুয়েরি পার্সিং। 

উদাহরণস্বরূপ, আপনার প্রশ্নটা তখন হয়ে যেতে পারে:

  • “ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ কারচুপি”
  • “ডাকসু নির্বাচন ভোট জালিয়াতি”
  • “ডাকসু নির্বাচন অনিয়মের অভিযোগ”
  • “ডাকসু নির্বাচন ফলাফল বিতর্ক”

এরপর এআই এই কীওয়ার্ডগুলোর সাথে নির্ভরযোগ্য কিছু সংবাদমাধ্যম ও ফ্যাক্ট-চেকিং সাইটের নাম যোগ করে দেয়, যাতে অনুসন্ধান আরও নিখুঁত হয়।

এখানে এআইকে বিশেষভাবেই সিস্টেম প্রম্পটের মাধ্যমে ইনস্ট্রাক্টেড করা হয় সবচেয়ে কার্যকরী সার্চ কীওয়ার্ড বের করার জন্য। এর ফলে অপ্রাসঙ্গিক ফলাফল অনেক কমে যায় এবং সঠিক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। এই ধাপটাই অন্যান্য সাধারণ সার্চ টুল থেকে আমাদের খোঁজকে আলাদা করে তোলে। এই ব্যাপারটা আপনার প্রশ্নকে একটা লেজার-গাইডেড মিসাইলের মতো সঠিক লক্ষ্যে পাঠানো, যাতে সময় এবং প্রচেষ্টা দুটোই সাশ্রয় হয়।

(৩) ওয়েব ক্রলিং এবং ফিল্টারিং 

উপরে আমরা দেখলাম যে, ইউজারের দেয়া প্রশ্নটা প্রথম ধাপে খোঁজ কুয়েরি পার্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছোট ছোট কার্যকরী কীওয়ার্ডস এ রূপান্তর করে। ইউজারের দেয়া প্রশ্নটা প্রথম ধাপে খোঁজ ছোট কার্যকরী কীওয়ার্ডে রূপান্তর করলো। এরপরের ধাপে শুরুতে আমরা যে কিউরেটেড সোর্স লিস্ট বানিয়েছিলাম সেখান থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়।

এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় একটা ওয়েব ক্রলিং পাইপলাইন (Web Crawling Pipeline), যা প্রতিটা ওয়েবসাইটের এইচটিএমএল ডম স্ট্রাকচার (HTML DOM Structure) স্ক্যান করে প্রয়োজনীয় কনটেন্ট (শিরোনাম, মেটা ট্যাগ, মূল লেখা) সংগ্রহ করে। যারা ওয়েব ক্রলিং সম্পর্কে আইডিয়া রাখেন না, তাদের জন্য ছোট্টো করে বলে রাখি, ওয়েব ক্রলিং হলো ওয়েবসাইট ঘুরে ঘুরে ডেটা আনা। আর DOM structure মানে ওয়েবপেজের ভেতরে লেখা আর ট্যাগের গঠন।

ক্রলিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা ডকুমেন্টগুলো এরপর একটা ওয়েটেড স্কোরিং অ্যালগরিদম (Weighted Scoring Algorithm) দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। এই ওয়েটেড স্কোরিং অ্যালগরিদমে প্রতিটি উৎসকে কিছু ওজন(weight) দিয়ে হিসেব করা হয়। সহজ করে বললে, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোনটা কম তা নির্দেশ করে এই ওয়েট।
প্রতিটা সোর্স কে কিছু ওজন দিয়ে হিসেব করার ক্ষেত্রে এখানে তিনটা মূল মেট্রিক ব্যবহৃত হয়ঃ

ক) রিসেন্সি স্কোর (Recency Score) – এই স্কোরের মাধ্যমে একটা কন্টেন্ট কতটা সাম্প্রতিক তা বোঝায়। সেক্ষেত্রে কনটেন্টের টাইমস্ট্যাম্প (Timestamp) অনুযায়ী নতুন/পুরনো ডেটা আলাদা করা হয়।
খ) অথরিটি স্কোর (Authority Score) – এই স্ক্রোরটা কোন ওয়েবসাইট কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেটা মাপার পদ্ধতি। ওয়েবসাইটের ডোমেইন অথরিটি (Domain Authority – DA), পেজর‍্যাঙ্ক (PageRank) এবং ট্রাস্ট সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে একটা স্কোর নির্ধারিত হয়।

গ)কীওয়ার্ড ম্যাচ স্কোর (Keyword Match Score) – কীওয়ার্ড বারবার কোথায় এসেছে আর সেটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেটা মাপার টেকনিক। টিএফ-আইডিএফ যার পুরোটা হচ্ছে, Term Frequency–Inverse Document Frequency। এই পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয় শিরোনাম ও টেক্সটে কীওয়ার্ড কতটা প্রাসঙ্গিকভাবে মিলে গেছে।

ওয়েটিং রুল (Weighting Rule): শিরোনামে (title) কীওয়ার্ড ম্যাচ হলে বেশি ওজন দেওয়া হয়, বডি টেক্সটে মিললে তুলনামূলকভাবে কম। সব মেট্রিক মিলিয়ে প্রতিটি উৎসের জন্য একটি কম্পোজিট স্কোর (Composite Score: 0–1) ক্যালকুলেট করা হয়। অর্থাৎ এটা সব ফ্যাক্টর মিলে একটি ফাইনাল নম্বর।
শেষে সর্বোচ্চ স্কোর পাওয়া ৮–১০টি উৎস জেসন ফরম্যাটে (JSON Format) সংরক্ষণ করা হয়। যারা জানেন না, তাদের বলে রাখি, JSON হলো এমন একটা ডেটা ফরম্যাট যা কম্পিউটার সহজে পড়তে ও ব্যবহার করতে পারে। এই ছাঁটাই প্রক্রিয়াটা এতটা নির্ভুল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে যে, এটা যেন একটা খড়ের গাদা থেকে সুইঁ খুঁজে আনে। ফলাফল হলো, অসংখ্য অপ্রাসঙ্গিক তথ্য ছেঁটে ফেলে শুধু সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, সাম্প্রতিক আর প্রাসঙ্গিক ডেটা সামনে আনা।

(৪) ফলব্যাক অনুসন্ধান: কোনো ফাঁক না রাখা 

শুরুতেই আমরা বলেছিলাম না যে, খোঁজ আমাদের কিউরেটেড উৎস গুলি থেকে ব্যবহারকারীর জন্য তথ্য খুঁজে আনে? এখন ধরুন, কখনো যদি এমন দাবি আসে যা খুব নতুন বা অস্বাভাবিক, তখন খোঁজের তালিকাভুক্ত উৎসগুলোতে মিল পাওয়া নাও যেতে পারে। সেই সময় খোঁজ বসে থাকে না, বরং সঙ্গে সঙ্গে ফলব্যাক হয়ে যায় এক বিশেষ টুলে, Tavily API । এটা মূলত পুরো ওয়েব ঘেঁটে দেখে, তবে শুধু ভরসাযোগ্য ও অথেন্টিক সাইট থেকেই তথ্য আনে।

এই প্রক্রিয়ায় রয়েছে স্মার্ট অথরিটি স্কোরিং সিস্টেম, যা নিশ্চিত করে যেন ভুয়া বা অপ্রাসঙ্গিক লিঙ্ক ঢুকে না পড়ে। তার ওপর, খোঁজের ভেতরে রাখা হয়েছে ১৬টা আলাদা এপিআই কী, যেগুলো একে অপরকে ব্যাকআপ দেয়—যদি একটা কাজ না করে, অন্যটা চালু হয়ে যায়। ফলে রেট লিমিট বা ব্যবহারজনিত ঝামেলায়ও খোঁজ থেমে থাকে না।

এক কথায়, এটা খোঁজের অটুট নিরাপত্তা জাল, যেখানে যত কঠিন বা জটিল দাবি হোক না কেন, সত্যকে ধরার একটা উপায় থাকবেই। আর এই ফলব্যাক সিস্টেমের কারণেই খোঁজের সঠিকতার হার প্রায় ৯৫%, যা অনেক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের চেয়েও বেশি।

(৫) রিপোর্ট জেনারেশন: এআই-এর সৃজনশীলতা এবং নির্ভুলতা 

সব তথ্য সংগ্রহের পর খোঁজের এআই বসে থাকে না। এগুলোকে গুছিয়ে বানিয়ে ফেলে একেবারে সহজবোধ্য, পড়তে আরামদায়ক একটা রিপোর্ট। এজন্য ব্যবহার করা হয় তিন-স্তরের এআই ফলব্যাক সিস্টেম। প্রাইমারি থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যন্ত যাতে ভুল হওয়ার সুযোগ প্রায় শূন্যে নামে।

রিপোর্টে আপনি পাবেন:

  • কোন সাইট কী বলছে,
  • কোথায় মতভেদ আছে,
  • আর শেষমেশ দাবিটা সত্য, মিথ্যা নাকি বিতর্কিত।

এখানেই এআই-এর আসল জাদুটা দেখা যায়। প্রথমে এটা আপনার প্রশ্নটাকে এমনভাবে অপটিমাইজ করে, যাতে সঠিক তথ্য বের করা যায়। তারপর পাওয়া ফলাফলগুলোকে সাজিয়ে তোলে গল্পের মতো, কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড মাথায় রেখেই।

প্রতিটি রিপোর্টে থাকে সোর্স লিঙ্ক, যাতে চাইলে আপনি নিজেই যাচাই করতে পারেন। ফলে অভিজ্ঞতাটা হয় ঠিক যেন কোনো বিশেষজ্ঞের সাথে বসে আলাপ করছেন। যে সহজ, নির্ভরযোগ্য আর ভীষণ কনভিন্সিং।

চিত্রঃ খোঁজ এর এআই ফ্যাক্টচেকারের কার্যপ্রণালীর একটি সরল আর্কিটেকচার

বিশেষায়িত ফিচারস: খোঁজকে অপরাজেয় করে তোলে

খোঁজকে বাংলা ভাষায় সত্য অন্বেষের একটা কমপ্লিট প্ল্যাটফর্ম বানাতে যোগ করা হয়েছে আরও কিছু কার্যকরী ফিচার:

  • মিথবাস্টিং: ডিজিটাল যুগে ভুয়া খবর আর গুজব আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ সময় মানুষ শুধু “কোনো দাবি সত্য নাকি মিথ্যা”, এই উত্তরেই থেমে যায়। কিন্তু খোঁজ একটু ভিন্ন পথে হেঁটেছে।

খোঁজের অন্যতম অনন্য ফিচার হলো, এটি শুধু তথ্য দেয় না; বরং কথোপকথনের ভঙ্গিতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। ধরুন, আপনি কোনো কুসংস্কার বা বৈজ্ঞানিক দাবি শুনলেন। এআই তখন এক বন্ধুর মতো আপনাকে বোঝাবে। প্রথমে প্রেক্ষাপট তুলে ধরবে, তারপর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করবে, আর সবশেষে গল্পের মতো করে বিষয়টির ভ্রান্তি পরিষ্কার করবে।

এই বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, এটি মানুষকে শুধু গুজব থেকে রক্ষা করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং শেখায়। আর সেই দক্ষতাই তৈরি করে এক ধরনের ডিজিটাল সুরক্ষা, যা ভবিষ্যতের তথ্যযুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর।

  • মুক্তিযুদ্ধ কর্নার: ১৯৭১ কে ঘিরে এখনও নানা ভুল ধারণা, বিকৃত ইতিহাস আর গুজব ঘুরে বেড়ায়—যা নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে। এই প্রেক্ষাপটে খোঁজ নিয়ে এসেছে এক অনন্য ফিচার: মুক্তিযুদ্ধ কর্নার।

এখানে এআই কাজ করে একজন অভিজ্ঞ ইতিহাসবিদের মতো। এটি শুধু তথ্য পরিবেশন করে না; বরং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সময়রেখা, গণহত্যার পরিসংখ্যান, যুদ্ধাপরাধ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, ভৌগোলিক বিবরণ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক প্রভাব পর্যন্ত সবকিছু সহজ ও আকর্ষণীয় গল্পের ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করে। এই ফিচারের বিশেষত্ব হলো, এটিকে Retrieval-Augmented Generation (RAG) পদ্ধতিতে ট্রেন করানো হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত অসংখ্য ঐতিহাসিক বই, সরকারি দলিলপত্র, দিনলিপি এবং প্রামাণ্য আর্কাইভ। ফলে তথ্য শুধু এআই-এর অনুমান নয়—বরং যাচাই করা উৎস থেকে পুনরুদ্ধার করা প্রমাণভিত্তিক ব্যাখ্যা।

এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব ভুল ন্যারেটিভ, ভ্রান্ত ইতিহাস বা গুজব প্রচলিত, সেগুলো সহজেই ধরা পড়ে। আমাদের সংগ্রাম, ত্যাগ আর বিজয়ের সঠিক কাহিনি বিকৃতির আড়ালে চাপা না পড়ে।

  • মাল্টিমিডিয়া যাচাই: খোঁজ শুধু লেখা নয়, ছবির সত্যতাও যাচাই করতে পারে। এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট শনাক্ত করা থেকে শুরু করে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ছবির আসল উৎস খুঁজে বের করা—সবই এর আওতাভুক্ত। টেক্সটের ক্ষেত্রে খোঁজ এআই-ডিটেকশন ও প্লেজিয়ারিজম চেক ব্যবহার করে, যাতে ডিপফেক বা বিকৃত কনটেন্ট সহজেই ধরা পড়ে। অত্যাধুনিক এপিআই ইন্টিগ্রেশনের কারণে খোঁজ এখন মাল্টিমিডিয়া যুগের জন্য একেবারে প্রস্তুত।

ম্যানুয়াল ফ্যাক্টচেকিং: এআই-এর সাথে মানুষের অভেদ্য সমন্বয়

এআই-ভিত্তিক ফিচারের পাশাপাশি খোঁজ টিম নিয়মিতভাবে অনলাইনে ছড়িয়ে থাকা নানা গুজব ম্যানুয়ালভাবে ফ্যাক্টচেক করে। উদ্দেশ্য একটাই, যাতে কোনো বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া সংবাদ সহজে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতি আর মানুষের বিশ্লেষণী ক্ষমতা একত্রিত হয়ে খোঁজকে সত্য যাচাইয়ের একটি নির্ভরযোগ্য মানদণ্ডে পরিণত করেছে।

চিত্রঃ এক নজরে খোঁজ

সীমাবদ্ধতা: 

কোনো সিস্টেমই একেবারে নিখুঁত নয়। উৎসের তালিকা যত বড়ই হোক, তার বাইরে থাকা খবর বাদ পড়ে যেতে পারে। এটাই সোর্স বায়াসের চ্যালেঞ্জ। আবার রিয়েল-টাইম আপডেট না থাকলে সামান্য দেরি দেখা দিতে পারে। এআই-ভিত্তিক সারাংশ কখনো কখনো সূক্ষ্ম ভুলও করতে পারে, তাই সবসময় মূল সোর্স লিঙ্ক যাচাই করা জরুরি। 

উপসংহার: 

খোঁজ শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম নয়—এটি বাংলা ভাষায় ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো এবং মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করার একটি নতুন উদ্যোগ। এর হাইব্রিড পাইপলাইন—এআই-চালিত অনুসন্ধান, উৎস নির্বাচন এবং সারাংশ—দেখাতে চায়, সত্যতা আরও সহজে যাচাইযোগ্য হতে পারে। আমরা আশা করি, খোঁজ ব্যবহারকারীদের সহায়তা করবে এবং ধীরে ধীরে আরও প্রভাব ফেলবে। সত্যের সন্ধানে থাকা প্রতিটি মুহূর্তে খোঁজ থাকবে আপনার পাশে।

ঘুরে আসুন খোঁজ থেকে: khoj-bd.com

তথ্যসূত্র:
[১] দেখুন এখানে: khoj-bd.com/fact-checking-verification

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
তথ্যপ্রযুক্তিতথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক খবর

মহাসাগরের তলদেশে লুকিয়ে থাকা ইন্টারনেটের মেরুদণ্ড

সমুদ্রের নীচে ইন্টারনেটের লুকানো মেরুদণ্ড আবিষ্কার করুন - সাবমেরিন কেবলগুলি। এই ফাইবার-অপটিক...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

সুপারইন্টেলিজেন্সের পরদিন

সুপারইন্টেলিজেন্স কীভাবে মানুষের পরিচয় এবং সম্পর্কগুলিকে নতুন করে রূপ দিতে পারে তা...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে কে টিকবে? ডুয়োলিঙ্গোর শিক্ষা বাংলাদেশের জন্য

AI-এর বিরুদ্ধে ডুওলিঙ্গোর উত্থান-পতন কীভাবে বাংলাদেশী স্টার্টআপগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় তা...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতথ্যপ্রযুক্তি

টাকো বেলের এআই ড্রাইভ-থ্রু: ক্ষুধার জ্বালা আর যন্ত্রের ঢং

মধ্যরাতে ক্ষুধার্ত, কিন্তু টাকো বেলের এআই ড্রাইভ-থ্রু গ্রাহকদের খাওয়ার পরিবর্তে হাসাতে বাধ্য...

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ডেটা সায়েন্টিস্ট: নতুন যুগের বিজ্ঞানী

তথ্য বিজ্ঞানীদের কেন নতুন যুগের বিজ্ঞানী বলা হয় তা আবিষ্কার করুন। বাংলাদেশ...

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org