ভূমিকাঃ
সবারই স্বপ্ন থাকে একটা বাড়ি হবে,তারপর একটা গাড়ি হবে। অনেকের স্বপ্নপূরণও হয়ে যায়,এদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা জানেন না তাদের এই স্বপ্নের বস্তুটা কিভাবে কাজ করে। আমি আমার লেখায় গাড়ি কিভাবে কাজ করে তাই লিখতে যাচ্ছি। একটা গাড়িতে বিভিন্ন ধরনের মেকানিজম,বিভিন্ন ধরনের টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়, যা আবার ইঞ্জিন থেকে শুরু করে টায়ার সবকিছুর জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই সবকিছুর জন্য চলছে নিত্য-নতুন গবেষণা,নিত্য-নতুন আবিষ্কার। আমার এই লেখায় আমি এত গভীরে আলোচনা করবোনা,শুধু গাড়ির গঠন এবং এর বিভিন্ন অংশ কিভাবে কাজ করে,তাই নিয়ে লিখবো।
চিত্রঃ www.honda.com থেকে সংগৃহীত
গঠনঃ
গাড়ির বিভিন্ন অংশঃ
১.ইঞ্জিন
২.ড্রাইভ ট্রেইন
৩.চেসিস
৪. ইঞ্জিন-ইলেক্ট্রিক্যাল
৫.বডি ইলেক্ট্রিক্যাল
৬.বডি
১.ইঞ্জিনঃ
গাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
অ.গ্যাসোলিন ইঞ্জিন
আ.ডিজেল ইঞ্জিন
ই. হাইব্রিড ইঞ্জিন
ঈ.ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন
উ.ফুয়েলসেল ইঞ্জিন
আমরা সধারনত গ্যাসোলিন ও ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করি,তাই এই দুই প্রকার ইঞ্জিন নিয়েই লিখলাম।
অ. গ্যাসোলিন ইঞ্জিনঃ
এই প্রকারের ইঞ্জিনে ফুয়েল হিসেবে গ্যাসোলিন ব্যবহৃত হয়। গ্যাসোলিন ইঞ্জিন সাধারনত প্যাসেঞ্জার কার অথবা প্রাইভেট কার এ ব্যবহৃত হয়। এর কারণ এই ইঞ্জিন আকারে ছোট এবং সেই সাথে শক্তিও বেশি পাওয়া যায়। আজকাল ফুয়েল হিসেবে সি.এন.জি, এল.পি.জি, এলকোহল ও ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্যাসোলিন ইঞ্জিনকে এস.আই (spark ignition)ইঞ্জিনও বলে।
গ্যাসোলিন ইঞ্জিনে বায়ু-ফুয়েল এর মিশ্রণকে বিস্ফোরিত করা হয় এবং এই বিস্ফোরণে উৎপন্ন শক্তিকে ঘূর্ণন শক্তিতে
রূপান্তরিত করে গাড়ি চলে।
গাড়ি চলবার জন্য ইঞ্জিন নীচের চারটি স্ট্রোক পুনরাবৃত্তি করতে থাকে
ক.অন্তর্গ্রহণ স্ট্রোক(Intake stroke)
খ.সংকোচন স্ট্রোক(Compression stroke)
গ.দহন স্ট্রোক(Combustion stroke)
ঘ.বহির্গমন স্ট্রোক(Exhaust stroke)
চিত্রঃ 1. অন্তর্গ্রহণ ভাল্ভ (Intake valve), 2.স্পার্ক প্লাগ (স্পার্কপ্লাগ), 3.বহির্গমন ভাল্ভ (Exhaust valve), 4. দহন কক্ষ (Combustion chamber), 5.পিস্টন(Piston)
ক.অন্তর্গ্রহণ স্ট্রোক
(Intake stroke)
এই স্ট্রোকে অন্তগ্রহণ
র্ভাল্ভ খোলে এবংবহির্গমন ভাল্ভ বন্ধ থাকে। পিস্টনের নিম্নগামী ভ্রমণের ফলে বায়ু-ফুয়েল মিশ্রণ অন্তর্গ্রহণ ভাল্ভ দিয়ে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে।
খ.সংকোচন স্ট্রোক (Compression stroke)
পিস্টন নিম্নগামী ভ্রমন শেষ করে এবং অন্তর্গ্রহণ ভাল্ভ বন্ধ হয়। এবার পিস্টন তার উর্ধ্বগামী ভ্রমণ শুরু করে এবং সিলিন্ডারের বায়ু-ফুয়েল মিশ্রণকে উচ্চ-চাপে সংকোচিত করে।
গ.দহন স্ট্রোক (Combustion stroke)
পিস্টন
যখন
ঊর্ধ্বগামী স্ট্রোক সম্পূর্ণ করে তখন স্পার্ক প্লাগে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয় ফলে স্পার্ক উৎপন্ন হয়। এই
স্পার্ক
সংকোচিত
বায়ু-ফুয়েল মিশ্রণকে প্রজ্জ্বলিত করে এবং বিস্ফোরণ ঘটায়। এই
বিস্ফোরণ পিস্টনকে ধাক্কা দেয় এবং পিস্টনের নিম্নগামী ভ্রমণ ক্র্যাঙ্কশ্যাফট কে ঘোরায়।
ঘ.বহির্গমন স্ট্রোক
(Exhaust
stroke)
পিস্টন
যখন
তার
নিম্নগামী ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে থাকে তখন বহির্গমন ভাল্ভ খুলে যায়। এরপর
পিস্টন
আবার
ঊর্ধ্বগামী ভ্রমণ শুরু করে এবং দহন ও বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন
গ্যাস
গুলোকে
সিলিন্ডারের বাইরে নিক্ষেপ করে দেয়।
আ. ডিজেল ইঞ্জিন
ডিজেল ইঞ্জিনে ফুয়েল হিসেবে ডিজেল ব্যবহৃত হয়। ডিজেল ইঞ্জিন কম গতিতেও উচ্চ শক্তি উৎপন্ন করে। ডিজেল ইঞ্জিনকে কম্প্রেশন ইগনিশন(compression ignition) ইঞ্জিনও বলে।
চিত্রঃ 1.অন্তর্গ্রহণ ভাল্ভ(Intake valve) 2.বহির্গমন ভাল্ভ (Exhaust valve) 3.ইঞ্জেক্টর নোজল(Injection nozzle) 4.দহন কক্ষ (Combustion chamber) 5.পিস্টন (Piston) 6.সংযুক্তকারী রড (Connecting rod) 7. ক্র্যাঙ্কশ্যাফট(Crankshaft)
গতি শক্তি উৎপন্ন করার জন্য ডিজেল ইঞ্জিন নিম্নোক্ত চারটি স্ট্রোক পুনরাবৃত্তি করতে থাকে।
ক.অন্তর্গ্রহণ স্ট্রোক(Intake stroke)
খ.সংকোচন স্ট্রোক(Compression stroke)
গ.দহন স্ট্রোক(Combustion stroke)
ঘ.বহির্গমন স্ট্রোক(Exhaust stroke)
ডিজেল ইঞ্জিনে কোন স্পার্কপ্লাগ নাই। তার পরিবর্তে উচ্চ-চাপযুক্ত ফুয়েল সিলিন্ডারে ইঞ্জেক্ট করা হয় এবং তা সিলিন্ডারে রাখা উচ্চ-চাপ-তাপ যুক্ত বায়ুর সংস্পর্শে এসে স্ব-প্রজ্জ্বলিত হয়।
ক.অন্তর্গ্রহণ স্ট্রোক (Intake stroke)
বহির্গমন ভাল্ভ বন্ধ থাকে এবং অন্তর্গ্রহন ভাল্ভ খোলে। পিস্টনের নিম্নগামী ভ্রমণের ফলে অন্তর্গ্রহন ভাল্ভ দিয়ে শুধুমাত্র বায়ু সিলিন্ডারে প্রবেশ করে।
খ.সংকোচন স্ট্রোক (Compression stroke)
পিস্টনের ঊর্ধ্বগামী ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে ইঞ্জেক্টর নল দিয়ে উচ্চ-চাপযুক্ত ফুয়েল দহন কক্ষে প্রবেশ করানো হয়,যা উচ্চ-চাপ-তাপ যুক্ত বায়ুর সংস্পর্শে এসে স্ব-প্রজ্জ্বলিত হয়।ফলে দহন সম্পূর্ণ হয় এবং বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণ পিস্টনকে নিম্নমুখী ধাক্কা দেয় এবং তা ক্র্যাঙ্কশ্যাফট কে ঘোরায়।
গ.দহন স্ট্রোক (Combustion stroke)
পিস্টনের ঊর্ধ্বগামী ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে ইঞ্জেক্টর নল দিয়ে উচ্চ-চাপযুক্ত ফুয়েল দহন কক্ষে প্রবেশ করানো হয়,যা উচ্চ-চাপ-তাপ যুক্ত বায়ুর সংস্পর্শে এসে স্ব-প্রজ্জ্বলিত হয়।ফলে দহন সম্পূর্ণ হয় এবং বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণ পিস্টনকে নিম্নমুখী ধাক্কা দেয় এবং তা ক্র্যাঙ্কশ্যাফট কে ঘোরায়।
ঘ.বহির্গমন স্ট্রোক (Exhaust stroke)
পিস্টনের নিম্নগামী ভ্রমণের শেষপর্যায়ে বহির্গমন ভাল্ভ খুলে যায় এবং
পরবর্তীতে পিস্টনের উর্ধ্বগামী ভ্রমণের ফলে পরিত্যক্ত গ্যাস কে বাইরে
নিক্ষেপ করে দেয়।
২.ড্রাইভ
ট্রেইনঃ
চিত্রঃ 1.ইঞ্জিন (Engine) 2.ট্রান্সএক্সেল (Transaxle) 3.ট্রান্সমিশন (Transmission) 4.ড্রাইভ
শ্যাফট (Driveshaft) 5. প্রপেলার (Propeller shaft) 6.ডিফারেনশিয়াল (Differential) 7.এক্সেল শ্যাফট (Axle
shaft) 8.এক্সেল (Axle) 9.টায়ার এবং চাকা (Tires
& wheels)
ড্রাইভ ট্রেইন শক্তিকে ইঞ্জিন থেকে চাকায় প্রেরণ করে।
ড্রাইভ ট্রেইনকে প্রধানত নিম্নোক্ত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
1
ফ্রন্ট ইঞ্জিন ফ্রন্ট হুইল ড্রাইভ গাড়ি (Front engine Front – wheel drive vehicle)
2
ফ্রন্ট ইঞ্জিন রিয়ার হুইল ড্রাইভ গাড়ি (Front engine
Rear – wheel drive vehicle)
3
হস্তচালিত ট্রান্সমিশন (Manual transmission)
4
স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন (Automatic transmission)
শক্তি সঞ্চারণ (Power Transmission)
ফ্রন্ট ইঞ্জিন ফ্রন্ট হুইল ড্রাইভ গাড়ি এবং ফ্রন্ট ইঞ্জিন রিয়ার হুইল ড্রাইভ গাড়ির হস্তচালিত ট্রান্সমিশন এবং স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন যেসব অংশ নিয়ে গঠিতঃ
1
ইঞ্জিন(engine)
2
ক্লাচ (clutch)
3
প্রপেলার শ্যাফট(propeller
shaft)
4
ডিফারেনশিয়াল(differential)
5
টর্ক কনভার্টার(torque
converter)
6
এক্সেল (Axle)
7
টায়ার এবং চাকা(Tires & wheels)
এরা কিভাবে কাজ করে,আমি এখানে তা বর্ণনা করবো।
ইঞ্জিন নিয়ে প্রথমেই বলেছি,এখন ক্লাচ নিয়ে শুরু করবো।
ক্লাচ
(clutch):
হস্তচালিত ট্রান্সমিশন গাড়িতে ক্লাচ এর মাধ্যমে ইঞ্জিন থেকে প্রাপ্ত শক্তির সঞ্চারণ কে নিয়ন্ত্রন করা হয়।
চিত্রঃ 1.ক্লাচ পেডাল (Clutch
pedal) 2.পুশ রড (Push rod) 3.প্রধান সিলিন্ডার (Master cylinder) 4.পানির পাইপ (Hydraulic hose) 5.রিলিজ
সিলিন্ডার (Release
cylinder) 6.রিলিজ ফর্ক (Release fork) 7.ক্লাচ
ঢাকনা (Clutch
cover)
চিত্রঃ A.মেকানিক্যাল অপারেশান(Mechanical
operation) B.হাইড্রোলিক অপারেশন(Hydraulic
operation) 1.ক্লাচ পেডাল(Clutch pedal) 2.পুশ রড (Push rod) 3.প্রধান সিলিন্ডার(Master cylinder) 4.পানির পাইপ(Hydraulic hose) 5.রিলিজ সিলিন্ডার(Release
cylinder) 6.রিলিজ ফর্ক(Release
fork) 7.রিলিজ বিয়ারিং(Release
bearing) 8.ডায়াফ্রাম স্প্রিং(Diaphragm
spring) 9.প্রেশার প্লেট (Pressure plate) 10.ক্লাচ
ডিস্ক(Clutch disc)
ক্লাচ ২টা অংশ নিয়ে গঠিত ১.মেকানিক্যাল ,যা মেকানিক্যাল উপায়ে শক্তি সঞ্চারিত করে এবং ২. হাইড্রোলিক,যা পানির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারিত করে।
ট্রান্সএক্সেল (transaxle):
ট্রান্সএক্সেল এর মধ্যে ট্রান্সমিশন এবং ডিফারেনশিয়াল থাকে, আর এটা ব্যবহৃত হয় ফ্রন্ট হুইল ড্রাইভ গাড়িতে।
টান্সএক্সেল আবার ২ প্রকারের হয়, হস্তচালিত এবং স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সএক্সেল।
হস্তচালিত ট্রান্সএক্সেল (manual transaxle):
চিত্রঃ
1.ইঞ্জিন(Engine) 2.ক্লাচ(Clutch) 3.ইনপুট শ্যাফট (Input shaft) 4.হাব স্লীভ (Hub sleeves) 5.শিফট
লিভার (Shift lever) 6.আউটপুট শ্যাফট (Output shaft) 7.ডিফারেনশিয়াল (Differential) 8.ড্রাইভ
শ্যাফট (Drive shafts) 9.টায়ার (Tires)
হস্তচালিত ট্রান্সএক্সেল শক্তি কে যুক্ত-বিযুক্ত
(engages
and disengages) করতে এবং গিয়ার বিন্যাস পরিবর্তন করতে
সাহায্য করে।
স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সএক্সেল (automatic transaxle):
চিত্রঃ 1.টর্ক
কনভার্টার (Torque Converter) 2.তেল
পাম্প (Oil Pump) 3.প্ল্যানেটারি গিয়ার অংশ (Planetary Gear Unit) 4.ভেহিকল স্পীড সেন্সর(Vehicle speed sensor) 5.কাউন্টার গিয়ার স্পীড সেন্সর (Counter gear speed
sensor) 6.ইনপুট
টারবাইন স্পীড সেন্সর(Input turbine speed sensor) 7.সেন্সর(Sensors) 8.ই.সি.ইউ (Engine
& ECT ,ECU (Electronic Control Unit)) 9.সলিনয়েড ভাল্ভ(Solenoid valves) 10.হাইড্রলিক কন্ট্রোল ইউনিট(Hydraulic Control Unit) 11.শিফট লিভার (Shift Lever)
স্বয়ংক্রিয়
ট্রান্সএক্সেল টর্ক কনভার্টার,
প্ল্যানেটারী
গিয়ার অংশ এবং হাইড্রলিক কন্ট্রোল সিস্টেম নিয়ে গঠিত। এতে হাইড্রলিক প্রেশার
স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতি পরিবর্তনের সাথে সাথে গিয়ার পরিবর্তন করে। তাই এতে ক্লাচের কোন
প্রয়োজন নেই। এতে ECT (Electronically Controlled Transmission) থাকে যা গতি পরিবর্তন অনুধাবন(detect) করতে সহায়তা করে।
ডিফারেনশিয়াল (differential):
ডিফারেনশিয়াল
নিম্নোক্ত তিনটি কাজ করেঃ
1.মন্দন করন (Deceleration function): টর্ক বৃদ্ধি করার জন্য
ঘূর্ণন গতিকে মন্দিত করে।
2.মোড় কাটা (Differential function) গাড়ি: যখন মোড় কাটে তখন ডান ও
বাম চাকার মাঝে গতির সামঞ্জস্যতা আনে। ডিফারেনশিয়াল না থাকলে নিরাপদভাবে মোড় কাটা
সম্ভব না।
3.ড্রাইভ বলের দিক্ পরিবর্তন
(Drive
force direction conversion function): ট্রান্সমিশন থেকে যে ঘূর্ণন শক্তি আসে তার দিক ৯০ ডিগ্রি
পরিবর্তন করে চাকায় প্রদান করে।
চিত্রঃ
A.
ফ্রন্ট
ইঞ্জিন
ফ্রন্ট
হুইল
ড্রাইভ
গাড়ি (Front engine Front –
wheel drive vehicle) B.ফ্রন্ট
ইঞ্জিন
রিয়ার হুইল
ড্রাইভ
গাড়ি
(Front engine Rear – wheel drive vehicle) 1.প্রপেলার শ্যাফট (Propeller shaft)
2.ড্রাইভ গিয়ার/পিনিয়ন (Drive gear / Drive pinion)
3.রিং গিয়ার (Ring gear) 4.পিনিয়ন
গিয়ার (Pinion gear) 5.সাইড গিয়ার (Side gear) 6.ড্রাইভ
গিয়ার (Drive shaft)
ডিফারেনশিয়াল
সাইড গিয়ার এবং পিনিয়ন গিয়ার নিয়ে গঠিত। গাড়ি যখন মোড় কাটে তখন এই গিয়ারগুলো
স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘূর্ণন পার্থক্য(rotational
difference) সৃষ্টি
করে।
ড্রাইভ শ্যাফটঃ
চিত্রঃ 1. ডিফারেনশিয়াল
(Differential) 2. ড্রাইভ
শ্যাফট (Drive Shafts) 3.এক্সেল শ্যাফট (Axle Shafts) 4.এক্সেল ধারক (Axle Housing)
ড্রাইভ
শ্যাফট – ট্রান্সমিশন এবং ডিফারেনশিয়াল এর মাধ্যমে ইঞ্জিনের ঘূর্ণন শক্তিকে চাকায়
প্রদান করে। ড্রাইভ শ্যাফট ড্রাইভ হুইলের সাথে থাকে এবং একটি মুক্ত সমালম্বন(independent
suspension) একে
ধারণ করে।
৩.চেসিস
(Chassis):
চেসিস—ইঞ্জিন,
ভেতরের
অংশ এবং বাহিরের অংশগুলো নিয়ে একটি পূর্ণ গাড়ি গঠন করে। এটি গাড়ির চালনা,ঘোরানো এবং থামানো
নিয়ন্ত্রণ করে।
চেসিস নিম্নোক্ত কয়েকটি অংশ নিয়ে গঠিতঃ
Ø
সমালম্বন(suspension)
Ø
স্টিয়ারিং(steering)
Ø
ব্রেক(brake)
Ø
টায়ার ও ডিস্ক হুইল (tires and disk wheel)
সমালম্বন (suspension):
চিত্রঃ
A.সামনের
সমালম্বন (Front
suspension) B.পেছনের
সমালম্বন (Rear
suspension) 1. স্প্রিং
(spring) 2 শক–শোষক (shock-absorber) 3. স্থিতিস্থাপক দন্ড (stabilizer bar) 4.বল–জয়েন্ট (ball
joint)
সমালম্বন সিস্টেম গাড়ির চলনকে মসৃণ করার জন্য গাড়ির ফ্রেম কে
চাকার সাথে সংযুক্ত করে । গাড়ির চলার সময় রাস্তা টায়ারের উপর যে বল প্রয়োগ করে(ঝাঁকি) ,সেই বল কে ড্যাম্পিং করা
এবং মসৃণ চলন নিশ্চিত করাই এর কাজ।
সমালম্বন সিস্টেমে স্প্রিং (spring) ,শক–শোষক (shock-absorber)
, স্থিতিস্থাপক
দন্ড (stabilizer bar) এবং বল–জয়েন্ট (ball joint) থাকে।
Ø
স্প্রিং এর কাজ হচ্ছে রাস্তা গাড়ির উপরে
যে বল–প্রয়োগ
করে তা শোষণ করা এবং গাড়ির কম্পন কমানো। গাড়িতে বিভিন্ন ধরনের স্প্রিং ব্যবহৃত হয়,যেমন– কয়েল স্প্রিং, লীফ স্প্রিং, টরশন বার স্প্রিং ইত্যাদি।
Ø
শক–শোষক –স্প্রিং
এর গতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সাথে কম্পন নিয়ন্ত্রণ করে গাড়িকে মসৃণ গতি প্রাপ্ত
হতে সহায়তা করে।
Ø
স্থিতিস্থাপক দন্ড– গাড়ি
যখন মোড় কাটে তখন কেন্দ্রাতিগ (centrifugal
force)বলের
জন্য বাইরের দিকে হেলে পড়ে। স্থিতিস্থাপক দন্ড স্প্রিংয়ের সহায়তায় এই হেলে পড়াকে
নিয়ন্ত্রণ করে এবং চাকাকে রাস্তার সাথে আকঁড়ে থাকতে সহায়তা করে।
Ø
বল–জয়েন্ট –অনভূমিক
এবং উলম্ব ভর বহন করে এবং যখন স্টিয়ারিং ঘোরানো হয় তখন স্টিয়ারিং গাঁটের(knuckle) জন্য আবর্তনকীলক(pivot) হিসেবে কাজ করে।
স্টিয়ারিং (steering):
চিত্রঃ 1.স্টিয়ারিং হুইল (Steering wheel) 2.স্টিয়ারিং প্রধান শ্যাফট ও কলাম টিউব (Steering main shaft &
column tube) 3.স্টিয়ারিং গিয়ার (Steering gear) 4.স্টিয়ারিং রেক ধারক (Steering rack housing) 5.পিনিয়ন
(Pinion)
6.রেক (Rack)
স্টিয়ারিং সিস্টেম স্টিয়ারিং হুইল দ্বারা গাড়ির সামনের চাকাগুলোকে ঘোরায়।
স্টিয়ারিং হুইল তার ঘূর্ণন গতিকে স্টিয়ারিং রেকে স্থানান্তরিত করে এবং স্টিয়ারিং
রেক পরবর্তীতে চাকায় প্রদান করে।
স্টিয়ারিং সাধারণত ২ ধরণের হয়– ১. রেক ও পিনিয়ন (Rack-and-pinion type) এবং রিসার্কুলেশন–বল (Recirculation-ball
type)
ব্রেকঃ
চিত্রঃ ১.ফুট ব্রেক(foot brake) ২. পার্কিং ব্রেক (parking brake)
গাড়ি থামাতে এবং মন্দন সৃষ্টি করতে ব্রেক ব্যবহার করা হয়। গাড়িতে ২
টি ব্রেক থাকে–১.ফুট ব্রেক(foot brake) ২. পার্কিং ব্রেক (parking brake)
৪. ইঞ্জিন–ইলেক্ট্রিক্যাল
চিত্রঃ
1.ব্যাটারী
(Battery) 2.স্টার্টার (Starter) 3.অল্টারনেটার (Alternator) 4.ইগনিশন কয়েল (Ignition coil) 5.ইগনিশন
সুইচ (Ignition
switch) 6.কম্বিনেশন
মিটার (Combination meter) 7.সেন্সর (Sensors
ইঞ্জিন
চালু করতে এবং স্থিতভাবে চালাতে
বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশের প্রয়োজন
পড়ে। যেমনঃ
১.ব্যাটারী(battery): এটি গাড়ির
ইলেক্টনিক যন্ত্রাংশের জন্য পাওয়ার সাপ্লাই হিসেবে কাজ করে।
২.স্টার্টার(starter): ইঞ্জিন চালু
করতে এই সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।
৩. অল্টারনেটার(alternator): এর মাধ্যমে
বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয় এবং ব্যাটারী চার্জ করা হয়।
৪. ইগনিশন
কয়েল(ignition coil): এর মাধ্যমে সঙ্কোচিত বায়ু–ফুয়েল
মিশ্রণ কে প্রজ্জ্বলিত করা হয়।
৫. ইগনিশন
সুইচ(ignition switch): এটি গাড়ির মেইন সুইচ।
৬. কম্বিনেশন
মিটার(combination meter): চার্জ না থাকলে এটি সংকেত দেয়।
৭ সেন্সর(sensor): গাড়িতে অনেক ধরনের সেন্সর থাকে,যেমন– পানির তাপমাত্রা সেন্সর, ইঞ্জিনের গতি সেন্সর, নক সেন্সর ইত্যাদি। এরা
সময়ে সময়ে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেমন কাজ করছে তা ইলেক্টনিক কন্ট্রোল ইউনিট কে
জানায়।
৫.বডি
ইলেক্ট্রিক্যাল
বডি ইলেক্ট্রিক্যাল নিম্নোক্ত কয়েকটি অংশ
নিয়ে গঠিতঃ
Ø
তার
হারনেস (Wire
harness)—এর মাধ্যমে গাড়ির সকল ইলেক্ট্রিক্যাল অংশ সংযুক্ত করা হয়।
Ø সুইচ ও রিলে (Switches
and relays)—কিছু
সুইচ হস্তচালিত এবং কিছু স্বয়ংক্রিয়। সুইচ তেলের চাপ,পানির তাপমাত্রা ইত্যাদি
নির্দেশক(senses)। যেসব
বৈদ্যুতিক সার্কিটে বেশি বিদ্যুত প্রয়োজন সেসব সার্কিটকে সরলীকরণই হচ্ছে রিলে এর
কাজ।
Ø
আলোক
সরঞ্জাম (Lighting system)—এটি গাড়ির নিরাপদ চলন নিশ্চিত করে।
Ø কম্বিনেশন মিটার ও গেজ (Combination
meter and gauges)
নিম্নোক্ত
কয়েকটি মিটার এবং গেজ গাড়ির বিভিন্ন অংশের তথ্য দেয়।
§
টেকোমিটার
(tachometer) প্রতি মিনিটে ইঞ্জিনে ঘূর্ণন সংখ্যা নির্দেশক।
§
স্পীডোমিটার
(Speedometer)—গাড়ির গতি নির্দেশক।
§
পানির
তাপমত্রামাপক গেজ (Water temperature gauge)—কূল্যান্ট পানির(coolant water) তাপমাত্রা
নির্দেশক।
§
ফুয়েল
গেজ (Fuel gauge)— কতটুকু ফুয়েল বাকি আছে তা জানায়।
§
তেল
চাপমাপক গেজ(Oil pressure gauge)— ইঞ্জেনের তেলের পরিভ্রমণ(oil circulation) চাপ
নির্দেশক।
§
ভোল্টমিটার(Voltmeter)—অল্টারনেটার যে ভোল্টেজ উৎপন্ন তা নির্দেশ করে।
Ø
ওয়াইপার
ও ওয়াশার (Wipers
and washers)—
চিত্রঃ1.ওয়াইপার মটর (Wiper
motor and linkage) 2.ওয়াইপার আর্ম ও ব্লেড (Wiper
arm and blade) 3.ওয়াশার তরল ধারক (Washer fluid
reservoir) 4সামনের ওয়াশার নোজল (Front washer
nozzle) 5.পেছনের ওয়াইপার
আর্ম ও ব্লেড (Rear wiper arm and blade) 6.
পেছনের ওয়াশার নোজল (Rear
washer nozzle) 7.পেছনের ওয়াইপার
মটর (Rear
wiper motor)
ওয়াইপার গাড়ির সামনের কাঁচ পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়। আর ওয়াশার
কাঁচের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য তরল স্প্রে করে।
Ø
এয়ার
কন্ডিশনিং (Air
conditioning)— এর মাধ্যমে গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৬. বডি :
বডি বলতে বোঝায় যেখানে প্যাসেঞ্জার বসে
এবং মালামাল রাখা হয়। বডি বিভিন্ন ধরণ হতে পারে,যেমন, সেডান(sedan), কূউপ(coupe), লিফট ব্যাক(lift
back), পিক–আপ(pick-up) ইত্যাদি। বডির মাঝে বডির গঠন,সীট,কাঁচ, জানালা ইত্যাদি আসে। এরা কিভাবে কাজ
করে তা আর এ লেখায় বর্ণনা করলাম না।
অতঃপর এই সবকিছুর সমন্বয় ঘটিয়ে একটি
গাড়ি কাজ করে ।
রেফারেন্সঃ
এবং
বিশেষ সাহায্যার্থে
প্রফেসর ইজাজ ইয়াকুব
কলেজ
অফ ইলেক্টিক্যাল এবং মেকানিক্যাল
ন্যাশনাল
ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি,রাওয়ালপিন্ডি,
পাকিস্তান।
চিত্রগুলো
প্রফেসর ইজাজ ইয়াকুব
থেকে প্রাপ্ত।
Leave a comment