সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকারঃ ড. হাসান শহীদ

Share
সাক্ষাৎকারঃ ড. হাসান শহীদ
Share

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানী.অর্গ এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমাদেরকে সাক্ষাতকার দেবার জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।

ড. হাসান শহীদঃ আমাকে এ সাক্ষাতকার দেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য বিজ্ঞানী.অর্গকে ধন্যবাদ। বিজ্ঞানকে সমাজ এবং উৎসাহীদের সামনে তুলে ধরার এমন একটা উদ্যোগ আমাদের দেশে রয়েছে জেনে বেশ ভালো লাগছে।

আমার জন্ম বরিশালের বাকেরগঞ্জে থানার হানুয়া গ্রামে। স্থানীয় হানুয়া মতিজান স্কুলে প্রাথমিক সম্পন্ন করেছি, মাধ্যমিকের শুরুটাও সে স্কুলে। পরে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছি। উভয় পরীক্ষায় তৎকালীন যশোর বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় আমার স্থান ছিল তৃতীয়। অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স এবং ইলেকট্রনিক্স বিভাগ থেকে, উভয় পরীক্ষায় আমি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছি। স্বল্প সময়ের জন্য এ বিভাগে শিক্ষকতা করেছি।

 

 

ছাত্র-জীবনে পড়াশুনার পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ এসব নিয়ে লেখালেখাতি সচেষ্ট ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়কালে মাসিক কম্পিউটার জগৎ পত্রিকার কন্ট্রিবিউটিং এডিটর হিসেবে কাজ করেছি- এবং সে সময়ে কম্পিউটার এবং কমিউনিকেশনের উপর অনেকগুলো নিবন্ধ লিখেছি। আমার শিক্ষকদের সাথে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে দুটো বই লিখেছি। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন লেখালেখির প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে –‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের ভূমিকা’ প্রবন্ধ লিখে প্রথম হয়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের স্বর্ণ পদক। পরিবেশ বিষয়ক একটি লেখার জন্য বেসরকরাী সংস্থা ‘‘কমিটমেন্ট’’ থেকে প্রথম পুরস্কার, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ এবং আমাদের পরিবেশ বিষয়ক লেখার জন্য ইউএনও (ইউনাইটেড ন্যাশনস অর্গানাইজেশন) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনএফপিএ থেকে পর পর দু’বছর পুরস্কার। এখানে আসার পর এলিয়েন এবং মহাকাশ নিয়ে বেশ কিছু লেখা লেখি করেছি। ‘এলিয়েন সম্ভাবনা ও সন্ধান’ এবং ‘মহাবিষ্ময়ের মহাকাশ’ নামে সময় প্রকাশনী থেকে আমার দুটি বই রয়েছে।
বর্তমানে বেশিরভাগ সময় কাটে গবেষণায়। রিনিউয়্যাবল এনার্জি বিষয়ে গবেষণার জন্য অ্যানি সায়েন্টেফিক সেক্রেটারিয়েট ২০১৬ সালে আমাকে ‘অ্যানি অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য সম্ভাব্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। রিনিউয়্যাবল এনার্জি এবং পরিবেশ বিষয়ে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাশীল অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া বিবিপিআই-১০০ তাদের বৃটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপেইরেশন -১০০ এর তালিকায় দু’বার (২০১৪ এবং ২০১৫) অন্তর্ভুক্ত করেছে। লেখা-লেখির দিকে প্রচন্ড ঝোঁক রয়েছে, কিন্তু এ মুহূর্তে সময় দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা-লেখির স্কেচ তৈরি করে রাখছি। এর সব কিছু বিজ্ঞান নিয়ে নয়, বেশিরভাগই সমাজ, সমাজের অসংগতি এবং জীবনের উপলব্ধি নিয়ে । সময়-সুযোগ এসব লেখা সম্পন্ন করার ইচ্ছা আছে। [/box]

 

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি University of Sheffield এ পিএইচডি করেছেন। কি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। আপনার আবিষ্কার সম্বন্ধে আমাদের একটু বলুন।

ড. হাসান শহীদঃ শেফিল্ডে আমার মূল গবেষণা ছিল – আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (artificial intelligence –AI) ব্যবহার করে রোবট কন্ট্রোল। স্পেস বা মেডিকেল ফিল্ডে ব্যবহার করা যায় এমনসব রোবটগুলো খুব হালকা হতে হয়। হালকা রোবটের একটা সমস্যা হলো এর ভাইব্রেশন। আমার গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল খুব হালকা রোবটের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ এবং ভাইব্রেশন কমানো। পিএইচডি গবেষণার উপর ভিত্তি করে সে সময়ে আমার পাচটই গবেষণাপত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে এবং এ গবেষণার বিভিন্ন বিষয়গুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০টির মতো কনফারেন্সে উপস্থাপনা করা হয়েছে। [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ বর্তমানে আপনি রোবটিক্স নিয়ে গবেষণা করছেন। কোন ক্ষেত্রে রোবটিক্স ব্যবহারের গবেষণা করছেন তা আমাদের একটু বিস্তারিত বলুন।

ড. হাসান শহীদঃ রোবটিক্সের যে বিষয়গুলো নিয়ে আমি গবেষণা করছি তার মধ্যে রয়েছে, অ্যারিয়াল রোবট (aerial robot), সোলার অ্যারিয়াল রোবট (solar aerial robot), মাস্টার-স্লেইভ রোবট (master-slave robot), ক্যাপসিউল রোবট (capsule robot), রোবটিক রিট্রাক্টর (robotic retractor), এবং প্রসেথেটিক রোবটিক হ্যান্ড (prosthetic robotic hand).

অ্যারিয়াল রোবট নিয়ে আপনাদের আলাদা প্রশ্ন রয়েছে সেখানে এটির ব্যাপারে আলোচনা থাকবে। অন্যান্য রোবটগুলো নিয়ে এখানে বলছি।
একটি রোবট যখন অন্য একটি রোবটের অনুকরণে কাজ করে তখন সে সিস্টেমের নাম মাস্টার-স্লেইভ রোবট । স্লেইভকে নিয়ন্ত্রণ করে মাস্টার অন্য কথায় মাস্টারের অনুকরণে কাজ করে স্লেইভ। মানুষের জন্য নিরাপদ নয় এমনসব জায়গায় কাজ করার জন্য এ রোবট খুব উপযোগী, যেমন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট বা মাইনফিল্ড। এসব জায়গায় স্লেইভ রোবটটিকে পাঠিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে অপারেটর মাস্টার রোবট এর মাধ্যমে স্লেইভ রোবটটি নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করতে পারে। অপারেটর মাস্টার রোবট দিয়ে যা করাবে স্লেইভ রোবট তাই করবে। বয়স্ক লোক বা চলতে-ফিরতে অক্ষম এমনসব লোকের যত্ন নেয়ার জন্যও এ রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, ফলে বাড়ছে বয়স্ক লোকের সংখ্যা। পাশাপাশি জন্মগত ভাবে বা বিভিন্ন রোগে বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েও অনেক লোক চলাফেরায় অক্ষম হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের ব্যস্ততার চাপে এসব বয়স্ক লোকদের সেবা-যত্নের জন্য মানুষের অভাব দেখা দিচ্ছে – যা উন্নত বিশ্ব এরই মধ্যে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। মাস্টার-স্লেইভ রোবটের মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এ ক্ষেত্রে মাস্টার রোবটটি কাজ করবে একটি রিমোট কন্ট্রোলারের মতো। এর মাধ্যমে কমান্ড দিয়ে একজন বয়স্ক বা চলতে-ফিরতে অক্ষম ব্যক্তি স্লেইভ রোবট দিয়ে চা-বানানো বা নিয়ে আসা, দরজা খোলা, কাউকে ডাকা, তাঁকে দিনের কর্মতালিকা স্মরণ করিয়ে দেয়া, গান শোনানো এসব কাজ করাতে পারবে। আমার তত্ত্বাবধানে একটি ছোট মাস্টার-স্লেইভ রোবট তৈরি করা হয়েছে এবং একজন ছাত্র পিএইচডি সম্পন্ন করতে যাচ্ছে, এবং আর একজন পিএইচডি গবেষক আগামী সেপ্টেম্বরে আমার টিমে যোগ দিতে যাচ্ছে।

যে ক্যাপসিউল রোবট নিয়ে আমি কাজ করছি এর নাম হলো, রোবটিক অ্যাক্টিভ ক্যাপসিউল এন্ডোসকোপ (Robotic Active Capsule Endoscope – RaCE )। সংক্ষেপে আমরা নাম দিয়েছি রেইস। আমরা বলতে আমার সাথে এ গবেষণায় রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের একজন কনসাল্টেন্ট সার্জন যুক্ত আছেন। মানুষের বৃহদান্ত্র (Large intestine) বা ক্লোন (Clone ) এ যে ক্যান্সার হয় অপারেশন করে তা দূর করার সার্জন তিনি। অন্যান্য ক্যান্সারের মতো মানুষের বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারও তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা গেলে, তা নিরাময় করা সহজ হয়। এ ধরনের ক্যান্সার সাধারণত নির্ণয় করা হয় ক্লোনোসকপি/এন্ডোসকপি এবং সাম্প্রতিক সময়রে পিল-ক্যাম (pill-cam) বা ক্যামেরাযুক্ত পিল/ক্যাপসিউল এর মাধ্যমে। রোগী সাধারণ ক্যাপসিউল এর মতো এ পিল-ক্যাম গিলে খায়, এবং তা খাদ্যনালী দিয়ে খাবারের মতো বাহিত হওয়ার সময় বাইরে খাদ্যনালীর ছবি পাঠায়। এ ছবি দেখে ডাক্তার খাদ্যনালীর ক্যান্সার বা অন্য কোন সমস্যা বুঝতে পারেন। ইদীনিং আমাদের দেশে এ পিল-ক্যামের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং পত্রিকায় এর বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে পিল-ক্যামের ব্যবহার শুরু একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এতে ক্লোনোসকপির বা এন্ডোস্কোপির মতো কোন ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভব হয় না। তবে এর একটা বড় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। খাদ্যনালী দিয়ে বাহিত হওয়ার সময় এটি প্রতি সেকেন্ডে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সংখ্যক ছবি পাঠাতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়না ফলে ঘুরিয়ে বা উল্টো দিকে বাহিত করে ক্যান্সার বা রোগ আক্রান্ত স্থানের যতসংখ্যক সুবিধা মত ছবি নেয়া যায় ন। এ সমস্যা দূরীকরণে আমরা নিয়ন্ত্রণ বা কন্ট্রোল করা যায় এমন ক্যাপসিউল রবোট (রেইস) উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি এবং এ পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয়েছে তার প্যাটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রজেক্টে আমাদের দু’জনের তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং পোষ্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো কাজ করেছে এবং বর্তমানে আমাদের একজন পিএইচডি ছাত্র রয়েছে। এ প্রজেক্টে ফ্রি-হ্যান্ড নামে আমাদের সাথে একটি কোম্পানিও যুক্ত আছে।
ক্লোন ক্যান্সার অপারেশন সহজ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা দুজন আর একটা বিষয়ে গবেষণা করছি তা হলো একটি উপযুক্ত রোবটিক রিট্রাকটর (robotic retractor) উদ্ভাবন। এটার প্রয়োজনীয়তা বুঝানোর জন্য আমার সহ-গবেষক সার্জন ক্লোন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর তিন ঘন্টার পুরো সার্জারি আমাকে দেখিয়েছেন। আমি এখানে কীহোল/ল্যাপারোসকপিক (keyhole or laparoscopic) সার্জারির কথা বলছি। ক্লোন বা বৃহদান্ত্রে কোন ক্যান্সারের অপারেশন করার সময় ইনস্ট্রুমেন্টসগুলো ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রান্ত্র (small intestine) বাঁধা হয়ে দাড়ায় এবং বার বার এসে অপারেশনের জায়গাটুকু দখল করে সার্জনের দৃষ্টি আটকে দেয়। এ ক্ষুদ্রান্ত্রকে সরিয়ে রাখার জন্য হাতের মতো একটা ডিভাইস (device) প্রয়োজন, কিন্তু এ ডিভাইস রোগীর পেটে সর্বোচ্চ ১২ মিলিমিটারের একটি ছিদ্র দিয়ে ঢুকাতে হবে এবং তা ভেতরে গিয়ে হাতের আকৃতি নিয়ে সার্জনকে সহায়তা করবে। এ ডিভাইসের নাম রোবটিক রিট্রাক্টর। আমরা সফট রোবটিক্স (soft robotics) টেকনোলজি ব্যবহার করে এমন একটি ডিভাইস উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমাদের দুজনের তত্ত্বাবধানে একজন ছাত্র পিএইচডি সম্পন্ন করেছে। আর একজন পিএইচডি গবেষক এ বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু করবে।
প্রসথেটিক রোবটিক আর্ম জন্মসূত্রে বা দুর্ঘটনায় হাত/বা বাহুর অংশ সহ হাত হারানো লোকদের জন্য কৃত্রিম হাত। আমরা হাত দিয়ে যা কিছু করি, তার কমান্ড আসে আমাদের ব্রেইন থেকে। যেমন আমি বা আপনি যখন টাইপ করি বা হাত দিয়ে কিছু ধরি তখন হাতের আঙ্গুলগুলো কিভাবে মুভ করবে বা সঞ্চালিত হবে, তা ভাবার সাথে সাথে সে অনুযায়ী সিগন্যাল ব্রেইন থেকে আঙ্গুলগুলোতে চলে আসে, আঙ্গুলগুলো সে সিগন্যাল অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়ে কাজ সম্পন্ন করে। যার হাত নেই সেও যখন হাত দিয়ে কোন কিছু ধরার চিন্তা করে, তার হাত বা বাহুর অক্ষত অংশে ব্রেইন থেকে সিগন্যাল আসে। সে সিগন্যালকে সেন্সরের (sensor) মাধ্যমে সংগ্রহ করে রোবটিক হাত দিয়ে সাধারণ হাতের মতো কাজ করানো যায়। এ ক্ষেত্রে গবেষণার বিষয়গুলো হলো আঙ্গুল এবং হাতের ডিজাইন তৈরি, থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যম হাত নির্মাণ, বাহু বা হাত থেকে সিগন্যাল সংগ্রহ, কাঙ্খিত মুভমেন্টের ধরণ অনুযায়ী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে সে সিগন্যালের কার্যকরণ নির্ধারণ ইত্যাদি। এ বিষয়ে আমার তত্ত্বাবধানে একজন ছাত্র পিএইচডি করছে। [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ Aerial Robotics কি? কোন ধরণের অ্যারিয়াল রোবট নিয়ে আপনি গবেষণা করছেন।? বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটির ক্ষেত্রে কোন জিনিসটি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয় আপনার?

ড. হাসান শহীদঃ রোবটিক্সের ভাষায় ড্রোন এর অন্য নাম হলো অ্যারিয়াল রোবট। সামগ্রিকভাবে উড়তে সক্ষম এমন সব ভেহিকল অ্যারিয়াল রোবট। তবে বিশেষ করে ড্রোন অ্যারিয়াল রোবট হিসেবে বেশি পরিচিতি পেয়েছে।আমার গবেষণার বিষয় রোটারি উইং অ্যারিয়াল রোবট এবং রোটারি উইং সোলার অ্যারিয়াল রোবট। রোটারিং উইং ভেহিকল বলতে এমন সব অ্যারিয়াল ভেহিকলকে বুঝানো হয় যেগুলো তাদের উইং বা পাখার ঘূর্ণনের মাধ্যমে উড়ার ক্ষমতা অর্জন করে। হেলিকপ্টার রোটারি উইং কিন্তু প্লেইন ফিক্সড উইং। আমার তত্ত্বাবধানে পৃথিবীর প্রথম সোলার হেলিকপ্টার – সোলারকপ্টার (কোয়াডরোটর) আবিষ্কৃত হয়েছে। এ খবর ডিসকভারি চ্যানেল প্রচার করেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় বিজ্ঞান এবং ডিজাইন বিষয়ক ম্যাগাজিন গিজম্যাগ, ডিজাইনবুম, ফাষ্ট কোম্পানি সোলারকপ্টারের উপর নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বিবিসি আমার সাক্ষাতকার নিয়েছে। আমাদের দেশে চ্যানেল আই তাদের মূল নিউজের একটি আইটেম হিসেবে সারাদিন এ খবরে প্রচার করেছে। এ ছাড়া কালের কণ্ঠ, ডেইলি স্টার, বাংলাদেশ প্রতিদিন সহ বিভিন্ন পত্রিকা সোলারকপ্টার নিয়ে খবর ছেপেছে। প্রথম আলো পত্রিকা তাদের ‘ছুটির দিনে’ সোলারকপ্টারের উপর একটি বিশেষ ফিচার ছেপেছে। ‘অ্যারোস্পেইস সায়েন্স এবং টেকনোলজি’ জার্নালে ‘সোলারকপ্টার’ এর উপর গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। আমার তত্ত্বাবধানে একজন ছাত্র সোলার হেলিকপ্টারের উপর এ বছর পিএইচডি সম্পন্ন করেছে এবং আরো দুইজন পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত আছে। সম্প্রতি আমার তত্ত্বাবধানে সবচেয়ে ক্ষুদ্র সোলার অ্যারিয়াল রোবট বা মাইক্রো অ্যারিয়াল ভেহিকল (এমএভি) উদ্ভাবিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ০.১৫ মি., প্রস্থ ০.১৫ মি. এবং উচ্চতা ০.০২ মি.। এর ওজন মাত্র ০.০৭ কিলোগ্রাম। ছবি এবং ভিডিও পাঠানোর জন্য এর সাথে যুক্ত রয়েছে একটি ক্যামেরা, মাত্র ৭৫ মিনিটে এটিকে সৌরশক্তি দিয়ে রিচার্জ করা যায়। যে কোন স্থানে ল্যান্ড করে এটি সৌরশক্তি ছাড়া ৩৩ দিন পর্যন্ত হাইবারনেশনে থাকতে পারে। এর পর সৌরশক্তি পেলে আবার রিচার্জ হয়ে আকাশে উড়তে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে অ্যারিয়াল রোবট এর বেশিরভাগ প্রয়োগ হতো সামরিক ক্ষেত্রে। এখন আর তা নয়। অ্যারিয়াল রোবট এর এখন বেশি ব্যবহার হচ্ছে ফটোগ্রাফি এবং ফিল্মিং এ। এ ফ্লিমিং এর প্রয়োগের পরিধি খুব বড় – যেমন, আবহাওয়া বিষয়ক সার্ভে, কৃষি সার্ভে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য তথ্য প্রদান, বন্য জীবজন্তুর মাইগ্রেশন পর্যবেক্ষণ আরো অনেক কিছু। এছাড়া মাল-পত্র পরিবহনে এ রোবটের ব্যাপক ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।

সোলারকপ্টার চ্যানেল আই নিউজ

সোলারকপ্টার প্রথম আলো – ছুটির দিনে ফিচার
https://www.prothomalo.com/we-are/article/141940/

সোলারকপ্টার – দি ডেইলি স্টার নিউজ
https://www.thedailystar.net/news/first-solar-powered-chopper-invented-under-supervision-of-bangladeshi [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ চিকিৎসা ক্ষেত্রের কিছু বিষয় নিয়েও গবেষণা করছেন। কি ধরনের গবেষণা করছেন?

ড. হাসান শহীদঃ ক্যাপসিউল রোবট এবং রোবটিক রিট্রাক্টর নিয়ে আমার কাজ চিকিৎসা ক্ষেত্রের প্রয়োগ নিয়েই। মাস্টার-স্লেইভ রোবট এরও প্রয়োগ রয়েছে রবোটিক সার্জারিতে। বিখ্যাত দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেম একটি মাস্টার-স্লেইভ রোবটিক সিস্টেম। তবে এর দাম খুব বেশি। আমি যে ধরনের মাস্টার-স্লেইভ রোবট নিয়ে কাজ করছি, তাকে একটি কম দামী এবং ছোট হাসপাতালে ব্যবহার উপযোগী রোবটিক সার্জিক্যাল সিস্টেমে উন্নীত করা সম্ভব। এগুলো ছাড়া আমি জেনেটিক ডেটার উপর ভিত্তি করে ক্যান্সারের টাইপ এবং পর্যায় নিরূপণের উপর কাজ করছি। এ বিষয়ের উপর আমার দুটি গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে। [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ বর্তমানে আপনি Queen Mary University of London বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। কোন বিষয়গুলি আপনি শেখান।

ড. হাসান শহীদঃ কুইন মেরীতে আমার মূল কাজ গবেষণা, পাশাপাশি শিক্ষকতা। গবেষণা ফোকাসড শিক্ষকদের সময়ের মোটামুটি ভাগ হয় এভাবে – ৫০% গবেষণা, ২৫% শিক্ষকতা এবং বাকী ২৫% অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। আমি এখানে অনার্স ২য় বর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্ট্রুমেন্টেশন এবং কন্ট্রোল সিস্টেম ডিজাইন এবং অ্যানালাইসিস আর অনার্স তয় বর্ষে এবং মাস্টার্স পর্যায়ে রোবটিক্স শেখাই। [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ ২০১৭ সনে আপনি National Teaching Fellowship পুরষ্কার পান। এটি সম্বন্ধে আমাদের বলুন।

ড. হাসান শহীদঃ প্রাথমিক থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে শিখেছি। তাদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। তবে যাদের পড়ানো আমাকে মুগ্ধ করেছে তাদের সংখ্যা অনেক নয়। তাই খুব ভালো একজন শিক্ষক হওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করেছি, পাশাপাশি একজন বিজ্ঞানী হিসেবে সব সময় একটি দায় অনুভব করেছি – তা হলো পরবর্তী জেনারেশনের বিজ্ঞানী তৈরি। ছাত্ররা আমার পড়ানো বিষয়গুলো যদি না বুঝে বা আত্মা দিয়ে সেগুলোর প্রয়োজন অনুভব না করে তবে শিক্ষক হিসেবে আমার সার্থকতা কোথায়? কতটা সফল হয়েছি ছাত্ররা তা বলতে পারবে তবে অনেকগুলো পুরস্কারের মাধ্যমে এক ধরনের স্বীকৃতি পেয়েছি। এর মধ্যে কুইন মেরীর ‘ ড্রেপার্স প্রাইজ ইন ইনোভেশন ইন লার্নিং অ্যান্ড টিচিং’, ‘কুইন মেরী ড্রেপার্স ফেলোশিপ’ এবং পরিশেষে ২০১৭ সালে জাতীয় স্বীকৃতি ‘ন্যাশনাল টিচিং ফেলোশিপ’।
দীর্ঘ সময় ধরে শেখানোতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউকে এর ইউনিভার্সিটি গুলো থেকে প্রতি বছর সর্বমোট ৫৫ জনকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিভার্সিটি সর্বোচ্চ তিনজনকে এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করে জাতীয় পর্যায়ের হায়ার এডুকেশন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাডভান্স হায়ার এডুকেশন’ এর কাছে পাঠায়। অ্যাডভান্সড হায়ার এডুকেশন সেখান থেকে ৫৫ জনকে নির্বাচন করে ন্যাশনাল টিচিং ফেলোর স্বীকৃতি দেয়। সাথে ৫০০০ পাউন্ড দেয়া হয় শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রজেক্ট বা উদ্যোগে ব্যয় করার জন্য। জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম টাইমস পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
আমার পুরস্কার পাওয়ার পেছনে অনেকগুলো বিষয়ে অবদান ভূমিকা রেখেছে। এগুলো এ স্বল্প পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে এর মধ্যে একটি হলো রিসার্চ ইনফর্মড টিচিং অর্থাৎ গবেষণার বিষয়গুলো বা প্রাপ্ত ফলাফল দিয়ে আমার টিচিং এর বিষয়গুলো সমৃদ্ধ বা মজাদার করে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তুলে ধরা।

সাক্ষাৎকারঃ ড. হাসান শহীদ

Channel S News link: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=874355829395757&id=562059863958690&notif_t=like&notif_id=1504976053453842&ref=m_notif

Queen Mary School of Engineering and Material Science news: https://sems.qmul.ac.uk/news/4648/sems-academic-awarded-prestigious-national-teaching-fellowship

Times Higher Education NTF 2017 List at the end of the article: https://www.timeshighereducation.com/news/daughter-follows-father-winning-uks-top-teaching-award

Queen Mary University of London news: http://www.qmul.ac.uk/media/news/items/199683.html [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ ভবিষ্যতে কি নিয়ে কাজ করতে চান?

ড. হাসান শহীদঃ গবেষণার যে বিষয়গুলো উপরে উল্লেখ করেছি তা সব চলমান বিষয়। ওগুলোর কোন কোন প্রয়োগিক পরিণতিকে সামনে রেখে গবেষণা চালিয়ে যেতে চাই। এর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পানি বিশুদ্ধিকরণ (রিনিউয়্যাবল এনার্জি এবং ওয়াটার পিউরিফিকেশন) নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। এনার্জি এবং ওয়াটার বর্তমান বিশ্বের বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুটি বড় সমস্যা। এ উপলব্ধি থেকেই এ দুটো বিষয়ে গবেষণায় হাত দিয়েছি। [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]

বিজ্ঞানী.অর্গঃ তরুন শিক্ষার্থি যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় তাদের জন্য আপনার কোন উপদেশ বা বক্তব্য কি?

ড. হাসান শহীদঃ উন্নত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ছোট জনসংখ্যার খুব বড় একটা অংশ উচ্চ শিক্ষায় আসে কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশের বড় জনসংখ্যার খুব ছোট একটা অংশ উচ্চ শিক্ষা বা বিজ্ঞান বিষয় শিক্ষার সুযোগ পায়। সুতরাং আমাদের দেশে যারা বিজ্ঞান শিক্ষা/গবেষণায় আসতে পারছে, তারা একটা অত্যন্ত মেধাবী গোষ্ঠী, তারা নিজেদের যতটা যোগ্য মনে করে তার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। এ বিশ্বাস ধারণ করে বড় স্বপ্ন নিয়ে তরুণ বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত। তবে পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে বিজ্ঞান/গবেষণা নিয়ে কাজ করতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন এবং অন্য অনেক পেশার মতো রাতা রাতি অর্জন বা সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ এখানে কম। এ পেশায় আসার জন্য তাই বিজ্ঞান/গবেষণার প্রতি টান বা ভালোবাসাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
আমাদের আরো মনে রাখতে হবে আমরা যা করছি বা করতে চাচ্ছি তার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সমাজ/মানবতার কল্যাণ। এজন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে বন্ধন থাকা জরুরী। মানুষ এবং শেকড় বিচ্ছিন্ন হয়ে তার কল্যাণের অনুভূতি লালন করা কঠিন। [/box]

[divider style=”solid” top=”20″ bottom=”20″]

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।

[mc4wp_form id=”3448″]

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের এআই ও ভাষা প্রযুক্তির রূপকার:তাসমিয়াহ তাহসিন মায়ীশা!

তাসমিয়াহ তাহসিন মায়ীশা আইসিটি ইব্লিক্ট প্রকল্পের অধীনে এনএলপি গবেষক হিসেবে কাজ করছেন।...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

বন্যার ধ্বংস থেকে জাহাজের স্থায়িত্ব: এক তরুণ গবেষক  মোহাম্মদ ইব্রাহীম এর গল্প!

এবারের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমাদেরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম।তিনি মাদারিপুরের শিবচরের একজন কৃষক পরিবারে...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

বিজয় চন্দ্র ঘোষের সাথে সাক্ষাৎকার: সৌরশক্তি ও পরিবেশ রসায়নে আধুনিক গবেষণা!

বর্তমান সময়ে আমরা একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছি বিশিষ্ট গবেষক বিজয় চন্দ্র ঘোষের সাথে।...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.