নিউটনের প্রিন্সিপিয়া

লেখাটি আসলে একটি ভাবানুবাদ।মুল লেখাটি হল স্টিফেন হকিং কর্তৃক লিখিত “Newton’s Principia”।সেটির পূর্ণ অনুবাদ আরও অনেক বড়।তাছাড়া বেশ কঠিনও বটে।তাই সংক্ষিপ্ত করে এবং সহজ করে লিখে পাঠালাম-যেন সকল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের বোধগম্য হয়।

 

newton 

(চিত্র: www.library.usyd.edu.au থেকে সংগৃহীত)

‘ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া’(Philosophiae Naturalis Principia Mathematica) সম্ভবত ভৌতবিজ্ঞানের জগতে সর্বকালের সর্বোত্কৃষ্ট একক কাজ যার রচয়িতা হলেন মহান বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন। এটি প্রথম ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ল্যাটিন ভাষায় প্রকাশিত হয়। এই পুস্তকের তুলনা কেবল বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন(Charles Darwin) কর্তৃক রচিত ‘দি অরিজিন অফ স্পিসিস’(The Origin of Species)-এর সাথেই করা চলে, যা কিনা জীব বিজ্ঞান জগতের এক শ্রেষ্ঠ রচনা। এডমন্ড হ্যালী (Edmund Halley)-এর এক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগ্রহ থেকেই নিউটন প্রিন্সিপিয়া লেখার প্রয়াস পান।প্রশ্নটি হল-বিপরীত বর্গীয় বলের ধারণা হতে সূর্যের চারিদিকে গ্রহসমূহের উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব কিনা? যদিও নিউটন বেশ আগেই এই সম্পর্কে গবেষণা করেন,কিন্তু তা প্রকাশ করেননি। এ প্রশ্নের উত্তর ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁকে প্রথমে বলবিদ্যার তত্ত্ব উদ্ভাবন করতে হয় – যা মূলত নিউটনের গতিসূত্র নামে পরিচিত।কিন্তু এই গতি সূত্র হতে সরল পথে চলমান বস্তুর গতির ব্যাখ্যা সহজে দেয়া গেলেও গ্রহ সমূহের গতির ব্যাখ্যা দেয়া বেশ কঠিন ছিল কারণ এদের উপর প্রযুক্ত বলের মান ও দিক উভয়ই পরিবর্তনশীল। গ্রহসমূহের গতি প্রকৃতি ব্যাখ্যার জন্য তাঁকে সম্পূর্ণ নতুন এক গাণিতিক পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হয়। এ নব আবিষ্কৃত গাণিতিক পদ্ধতিটি হল বর্তমানের বহুল ব্যাবহৃত ডিফারেনসিয়াল ক্যালকুলাস(Differential calculus) পদ্ধতি।কিন্তু কিছু কারণে তিনি এই পদ্ধতি প্রিন্সিপিয়াতে প্রকাশ করেননি। ফলে তাঁকে অন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হয়, যা দিয়ে তিনি দেখান যে – একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর চারিদিকে ঘূর্ণায়মান কোন বস্তুর গতিপথ,ঐ বিন্দুর দিকে বস্তুটির বিপরীত বর্গীয় আকর্ষণ বলের কারণে উপবৃত্তাকার হয়।সুতরাং হ্যালীর প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল।আবার নিউটনের প্রকাশিত তত্ত্ব গ্রহ সম্পর্কিত কেপলার(Kepler)-এর সূত্রের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল, প্রিন্সিপিয়া প্রকাশের পরে লিবনিজ(LeibnitZ) সম্পূর্ণ এককভাবে ক্যালকুলাস পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ও প্রকাশ করেন।যদিও নিউটন পরবর্তীতে তাঁর আবিষ্কৃত পদ্ধতি প্রকাশ করেন,তবুও এই মহান আবিষ্কারের একক অংশীদার হওয়ার সুযোগ হারান। গ্রহসমূহের উপবৃত্তাকার গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যার পাশাপাশি নিউটন এও দেখান যে, মহাকর্ষীয় বলের কারণেই জুপিটার ও শনির উপগ্রহগুলো উহাদের কক্ষপথে গতিশীল,চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে ঘূর্ণায়মান-এমনকি জোয়ার-ভাটা হওয়া,গাছ থেকে আপেল পড়াও এই বলেরই ফল। এককথায় মহাকর্ষ হল সার্বজনীন বল। স্বাভাবিক ভাবেই ধারণা করা হয়েছিল আলোর উপরেও এই বল ক্রিয়াশীল। পরবর্তীতে মহাকাশ হতে আগত আলোকরশ্মি পর্যবেক্ষণ কালে প্রমাণিত হয় যে, ভারি এবং অত্যাধিক ঘনত্বের বস্তুপিন্ড (যেমন-ব্ল্যাকহোল)-এর পাশ দিয়ে আলো আসার সময় উহার দিকে কিছুটা বেঁকে যায় – যা মহাকর্ষ বলেরই ফল। মহাবিশ্ব-এর বিস্তার অসীম এবং সময় ও স্থান সাপেক্ষে প্রায় সমান ঘনত্ববিশিষ্ট নক্ষত্রমন্ডলী মহাবিশ্বের সর্বত্র বিস্তৃত।নক্ষত্রগুলোর একে অপরের মধ্যবর্তী মহাকর্ষ বলের কারণে দিনদিন মহাবিশ্বের সংকোচন হওয়ার কথা।কিন্তু তেমন কেন ঘটছে না?-এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিউটন বলেন যে,নক্ষত্রগুলো যেহেতু অসীম দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত সেহেতু প্রতিটি নক্ষত্র উহার সকল দিকে অবস্থিত অন্যান্য নক্ষত্র কর্তৃক আকৃষ্ট হচ্ছে।ফলে প্রতিটি নক্ষত্রের উপর অনুভূত নীট বল এতটাই ক্ষুদ্র যে উহারা একে অপর হতে মোটামুটি ধ্রুব দূরত্বেই থাকে।ফলে মহাবিশ্ব সংকুচিত হয় না।নক্ষত্র সমূহের ধ্রুব দূরত্ব সংক্রান্ত এ ব্যাখ্যা হতে এও প্রমাণিত হয় যে,মহাবিশ্ব অপ্রসারণশীল।কিন্তু ১৯২০ সালে আবিষ্কৃত হয় যে, মহাবিশ্ব প্রসারমান। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, মহাবিশ্বের প্রসারণশীলতা সম্পর্কিত ধারণা না করা ছিল প্রাচীন পদার্থবিজ্ঞানের এক মহা অক্ষমতা।প্রিন্সিপিয়াতে নিউটন পরম কাল ও পরম স্থান-এর ধারণার সূচনা করেন।পরম কাল বলতে বোঝানো হয়েছে যে, বস্তুর গতি থাকুক বা না থাকুক, কোন ঘটনা ঘটার কাল সকল ঘড়িতে একই হবে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আপেক্ষিকতা আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পরম কাল সম্পর্কে কোন দ্বিমত হয়নি। কিন্তু আপেক্ষিকতার তত্ত্ব পরম কালের ধারণাকে নাকোচ করে দেয়। নিউটনের পরম স্থান সম্পর্কিত ধারণাও আপেক্ষিকতার সাথে লড়াইয়ে টিকতে পারেনি। প্রিন্সিপিয়া-তে উপস্থাপিত সূত্রগুলো দুইশত বছরেরও অধিক সময় ধরে বলবিদ্যা এবং মহাকর্ষের গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।এমনকি আজও এগুলো ব্যাবহৃত হয় পদার্থবিদ্যার প্রায় সকল ক্ষেত্রে।শুধুমাত্র অত্যন্ত সূক্ষ্ম হিসাবের সময় আইনস্টাইন কর্তৃক প্রদত্ত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব(১৯০৫) এবং সাধারণ তত্ত্ব(১৯১৫) বিবেচনায় আনতে হয়। আপেক্ষিকতার তত্ত্বে পরম কাল এবং পরম স্থানের ধারণাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে যে, কোন ঘটনা ঘটার কাল ঘড়ির বেগের উপর নির্ভরশীল এবং ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনা একই সময়ে ঘটছে কিনা তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। আবার সংঘটন কাল প্রসংগ কাঠামোর উপরেও নির্ভরশীল। নিউটন ও আইনস্টাইন উভয়ই আলোড়ন সৃষ্টিকারী দুটি তত্ত্বের আবিষ্কারক। কিন্তু এই তত্ত্বদ্বয়ের ভিত্তি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব বক্র স্থান সম্পর্কিত যেই গাণিতিক তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত তা রায়ম্যান(Reimann) কর্তৃক প্রদত্ত।অপর দিকে নিউটনের তত্ত্ব তাঁর নিজেরই প্রতিষ্ঠিত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এক গাণিতিক প্রক্রিয়ার উপর দন্ডায়মান।অর্থাৎ নিউটনের তত্ত্ব পুরোপুরি স্বনির্ভর এক তত্ত্ব।

তাই বলা যায় যে, গাণিতিক পদার্থ বিদ্যার জগতে নিউটনই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার এবং প্রিন্সিপিয়া হল তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান।

About MD MAHFUZUL HAQUE

Check Also

তেজস্ক্রিয়তা ও কুরি দম্পতির কারিকুরি

আবুল বাসার আধুনিক জার্মানি আর চেক রিপাবলিকের সীমান্ত এলাকা। ১৬ শতকের শুরুতে এই অঞ্চলকে দুই …

ফেসবুক কমেন্ট


  1. I had hard time reading the materials in such a small letters. I do I chage it in regular format?

  2. i liked the way you analyzed the whole story…but which i don’t like the comment at the
    end.Where you(completely my thinking) deliberatety presented the einestein’s special theory of relavity and the general theory of relavity…in a way that it seems that nothing he did all the works already done by Riemann’s. Newton is great but don’t comare einestein’s volume of work and thinking with such a disgrace.

  3. Very good blog

    Fun,Bollywood,mp3,Gallery,Tamil,Natok,Download,Movie,Free Software,Tutorials,Screensavers,Wallpapers,
    Computer Bazar Update,market,Latest Bollywood News, Star Interviews, Bollywood Chat, Hindi Songs, Movies
    Reviews and Previews, Bollywood Gossip, Shop Online, Free E-mail, Chat with Bollywood stars,
    Download hindi songs in Real Audio and mp3 format and much much more..

    Visit http://www.moonbd.com

  4. লেখককে অনেক ধন্যবাদ লেখাটি প্রকাশ করার জন্য। সত্যিই গাণিতিক পদার্থ বিদ্যার জগতে নিউটনই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার এবং প্রিন্সিপিয়া হল তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।