পৃথিবী জুড়ে এখন বড় প্রশ্ন—কীভাবে আমরা ধাতু ও প্লাস্টিক–নির্ভর শিল্প থেকে ধীরে ধীরে স্মার্ট, পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই উপাদানের দিকে যেতে পারি? ভবিষ্যতের বিমান, গাড়ি, ভবন, এমনকি আমাদের ব্যবহৃত চিকিৎসা–উপকরণও যদি স্মার্ট বায়োকম্পোজিট দিয়ে তৈরি হয়—তাহলে কেমন হবে সেই দুনিয়া? এই প্রশ্নগুলোর বাস্তব বৈজ্ঞানিক উত্তরের খোঁজে কাজ করছেন মালয়েশিয়ার Universiti Malaysia Sarawak (UNIMAS)–এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউর রহমান। তিনি Chemical Engineering and Energy Sustainability বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক, একই সঙ্গে জাপানের Tokushima University–এর Visiting Research Fellow হিসেবে বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগিতায় যুক্ত আছেন।
ড. রেজাউর মূলত স্মার্ট বায়োকম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল, প্রাকৃতিক তন্তু–নির্ভর কম্পোজিট, ন্যানোকম্পোজিট, এবং উন্নত পলিমার উপাদান নিয়ে কাজ করেন। তাঁর গবেষণার কেন্দ্রে আছে—জুট, নারিকেল–ছোবড়া (coir), কেনাফ, আকাসিয়া কাঠসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে এমন উপাদান তৈরি করা, যা একদিকে পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে যথেষ্ট শক্ত, স্থায়ী এবং শিল্পে ব্যবহারযোগ্য। Acacia Wood Bio-composites নিয়ে তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে স্থানীয় কাঠজ উৎস থেকে উচ্চ–দৃঢ়তা বায়োকম্পোজিট তৈরি করে শিল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং এর পরিবেশগত প্রভাব কেমন হতে পারে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—তিনি শুধু গবেষণাপত্রে সীমাবদ্ধ নন; Smart Biocomposite Materials: Fabrication, Applications and Sustainability এবং Advanced Nanocarbon Polymer Biocomposites–এর মতো একাধিক বইয়ের সম্পাদক/লেখক হিসেবে কাজ করছেন, যেখানে ভবিষ্যতের স্মার্ট উপাদান, ন্যানোকার্বন কম্পোজিট, সেন্সর, নির্মাণশিল্প, বায়োমেডিক্যাল ডিভাইস, ড্রাগ ডেলিভারি, অটোমোটিভ ও এ্যারোস্পেসসহ নানা ক্ষেত্রে বায়োকম্পোজিটের ব্যবহার একসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণার পরিসংখ্যান বলছে ড. রেজাউর –এর Google Scholar প্রোফাইল অনুযায়ী তাঁর প্রবন্ধসমূহ এখন পর্যন্ত ৬,৬০০–এর বেশি সাইটেশন পেয়েছে, h-index ৩৮ এবং ২০০–র বেশি আন্তর্জাতিক জার্নাল আর্টিকেল, বই ও বইয়ের অধ্যায়ে তিনি লেখক বা সহলেখক হিসেবে যুক্ত। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির Top 2% Scientists তালিকায় স্থান পাওয়া গবেষকদের মধ্যে তিনি একজন—যা তাঁর কাজের আন্তর্জাতিক প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতার শক্ত প্রমাণ।
বাংলাদেশি প্রেক্ষিতে তাঁর যাত্রা বিশেষভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি শিক্ষকতা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET)–এ টিচিং এসিস্ট্যান্ট হিসেবে, পরে মালয়েশিয়া ও জাপানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা–দলগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মালয়েশিয়ান উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেছেন। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া–সহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে External Supervisor ও আন্তর্জাতিক সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উঠে এসে বিশ্বমানের গবেষণা–মঞ্চে একজন বিজ্ঞানী কীভাবে জায়গা করে নিতে পারেন—ড. রেজাউর তার বাস্তব উদাহরণ।
স্মার্ট বায়োকম্পোজিট নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক কাজগুলোর ভেতরে আছে—প্রাকৃতিক তন্তু–নির্ভর কম্পোজিটের রিওলজিক্যাল (প্রবাহগত) বৈশিষ্ট্য, অ্যাকাসিয়া কাঠ–ভিত্তিক বায়োকম্পোজিটের যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য উন্নয়ন, গ্রাফিন/ন্যানোসেলুলোজ–সমৃদ্ধ ন্যানোকম্পোজিট মেমব্রেন দিয়ে ডাই রিমুভাল এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, ওয়েস্ট বায়োমাস পেলেট দিয়ে সবুজ জ্বালানি উৎপাদন, বায়োকম্পোজিটের সেলফ–হিলিং (স্ব–মেরামত) ক্ষমতা, এবং অটোমোটিভ, এ্যারোস্পেস, নির্মাণশিল্প ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং–এ বায়োকম্পোজিটের ব্যবহার–এর মতো অগ্রগণ্য বিষয়। এ ধরনের কাজ আমাদের শেখায়—“পরিবেশবান্ধব” মানে শুধু প্লাস্টিক বন্ধ করা নয়; বরং বিজ্ঞানের সাহায্যে এমন নতুন উপাদান তৈরি করা, যা একই সঙ্গে শক্তিশালী, দীর্ঘস্থায়ী, ব্যবহারযোগ্য এবং পৃথিবীর জন্য কম ক্ষতিকর।
বিজ্ঞানী অর্গ এর বিশেষ সাক্ষাৎকার সেশন: ভবিষ্যতের স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল ও ক্যারিয়ার–পথ নিয়ে সরাসরি কথা
বিজ্ঞানী.অর্গ এবার আয়োজন করছি ড. রেজাউর কে নিয়ে একটি অনলাইন সাক্ষাৎকার ও মুক্ত আড্ডা সেশন, যেখানে তিনি নিজেই তুলে ধরবেন তাঁর গবেষণা–ভবিষ্যৎ, ক্যারিয়ার যাত্রা এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবমূলক পরামর্শ।
এই সেশনে মূলত আলোকপাত করা হবে—
- স্মার্ট বায়োকম্পোজিট কী? কেন এগুলো ভবিষ্যতের উপাদান?
- কীভাবে প্রাকৃতিক তন্তু, কাঠ, কৃষিজ বর্জ্য থেকে উচ্চমানের ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়াল বানানো হয়
- মালয়েশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে গবেষক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা
- বাংলাদেশ থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্রে জায়গা করার বাস্তব গল্প
- উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা–জীবন, বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষার পথনির্দেশ
👨🎓 কারা অবশ্যই অংশ নেবেন?
এই প্রোগ্রামটি বিশেষভাবে উপকারী হবে—
- রসায়ন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স, মেকানিক্যাল/সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং–এ আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য
- যারা বায়োমেটেরিয়াল, ন্যানোটেকনোলজি, সবুজ জ্বালানি ও টেকসই উপাদান নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চান
- যারা বিদেশে এমএস/পিএইচডি ও গবেষণা ক্যারিয়ার গড়তে চান, কিন্তু পথটা পরিষ্কারভাবে জানেন না
- বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও গবেষক, যারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও যৌথ গবেষণায় আগ্রহী
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আমাদের আহ্বান
বাংলাদেশের অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভাবেন—“আমাদের দেশ থেকে কি সত্যিই বিশ্বমানের গবেষণা জগতে পৌঁছানো সম্ভব?” ড. রেজাউর এর যাত্রা আপনাদের সেই প্রশ্নের জোরালো উত্তর দিতে পারে। তিনি প্রমাণ করেছেন, মজবুত ভিত্তি, অধ্যবসায়, সঠিক দিকনির্দেশনা আর গবেষণার প্রতি অগাধ ভালবাসা থাকলে দেশের ভেতর থেকে শুরু করেও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানের মূলধারায় জায়গা করে নেওয়া যায়।
তাই আমরা বিজ্ঞানী অর্গ এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিজ্ঞান–মনস্ক শিক্ষার্থীকে আহ্বান জানাচ্ছি—
এই সেশনে যুক্ত হোন, প্রশ্ন করুন, নোট নিন, অনুপ্রাণিত হোন। আপনি ভবিষ্যতে উপাদানবিজ্ঞানী হোন আর ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার–ডেটা সায়েন্টিস্ট—টেকসই পৃথিবী গড়ার চিন্তা আজ থেকেই শুরু করতে পারেন।
🗓️ ইভেন্টের তারিখ, সময় ও যোগদানের লিংক
📌 রেজিস্ট্রেশন লিংক : https://forms.gle/CtZfLDDr5tGcKRCn6
ইভেন্টের সময়: ২৯ জানুয়ারি ২০২৬, সন্ধ্যা ৭ (বাংলাদেশ সময়)
অনলাইনে গুগল মিট এর মাধ্যমে ইভেন্টটি পরিচালিত হবে এবং রেজিস্ট্রেশনকারিদেরকে মিটিং এর লিংক পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

Leave a comment