কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আজ আমাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। কিন্তু এআই ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এক মৌলিক সত্য আমরা প্রায়ই ভুলে যাই—এআই যতটা ভালোভাবে শেখানো হবে, ততটাই ভালোভাবে ফলাফল দেবে। অর্থাৎ, যদি ডেটা হয় ভুল, অসম্পূর্ণ বা প্রেক্ষাপট-বিহীন, তবে এআই যা দেবে, তা-ও হবে ভুল। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “Garbage in, garbage out.”
একটি সাম্প্রতিক আলোচনায় এক বক্তা বলেন, “আমাদের এআই নিয়ে চ্যালেঞ্জ হলো, যখন আমরা সাধারণ তথ্য খুঁজতে যাই, এআই প্রচুর তথ্য দেয়। কিন্তু সেই তথ্যগুলো সিঙ্গাপুর বা আমাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য নয়। ফলে আমাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ ডেটাবেসের উপর নির্ভর করতে হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যদি আপনার ডেটাবেসে আবর্জনা থাকে, তাহলে আপনি এআই থেকে আবর্জনাই পাবেন। তাই আমরা এখন সেই তথ্যের মানোন্নয়নে কাজ করছি।”
এই বক্তব্যে উঠে এসেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা—এআই যতই উন্নত হোক না কেন, তার কার্যকারিতা নির্ভর করে যে ডেটার উপর সেটি প্রশিক্ষিত। পশ্চিমা প্রেক্ষাপটের তথ্য দিয়ে তৈরি এআই মডেল অনেক সময় এশিয়ান বা সিঙ্গাপুরের সামাজিক-প্রশাসনিক বাস্তবতায় প্রযোজ্য নয়। যেমন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কিংবা নাগরিক সেবার মতো ক্ষেত্রে স্থানীয় নীতি, সংস্কৃতি, ভাষা ও জনসংখ্যাগত পার্থক্যকে উপেক্ষা করলে এআই-এর সিদ্ধান্ত প্রায়ই ভুল হতে পারে।
বক্তা আরও বলেন, “আমরা এখন অনেক প্রকল্পে কাজ করছি, কিন্তু প্রশ্ন হলো—কীভাবে আমরা এআই ব্যবহার করে আমাদের হাতে থাকা তথ্যকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগাব। আপাতত আমরা কিছুটা খালি হাতে চলছি, তাই পরিস্থিতি কিছুটা বিশৃঙ্খল।” এই কথাগুলো শুধু প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার সমস্যা নয়; এটি এক গভীর শিক্ষা—ডেটা-নির্ভর ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি হয় ডেটার মান থেকে।
এই প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই ভাবতে হবে, তাদের অভ্যন্তরীণ ডেটাবেস কতটা হালনাগাদ, নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তখনই সঠিকভাবে কাজ করবে, যখন সেটিকে খাওয়ানো ডেটা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। নতুবা এআই যতই উন্নত হোক, ফলাফল ততটাই বিভ্রান্তিকর হবে।
আজকের এই প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে, “ডেটা হচ্ছে নতুন তেল” — কিন্তু অপরিশোধিত তেল যেমন ইঞ্জিনে ক্ষতি করে, তেমনি অপরিশোধিত বা ভুল ডেটা এআই-এর ফলাফলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তাই ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নয়, বরং সেই বুদ্ধিমত্তার খাদ্য—অর্থাৎ ডেটার মানোন্নয়নে।
এই বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হোক, তা কখনও মানবিক প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। কারণ, সঠিক তথ্যই হচ্ছে সত্যিকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাণশক্তি।

Leave a comment