কৃষি

কৃষিতে মিলিবাগের আক্রমণ : ফসল ধ্বংস ও অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন

Share
Share

গল্পটি বছরখানেক আগের। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার দরিদ্র কৃষক রহমত আলীর।অন্যের জমি বর্গা চাষ করে যার জীবিকা নির্বাহ হয়।বাড়ির পাশের বিঘাখানেক উঁচু জমি বর্গা নিয়ে তিনি মরিচের চারা রোপন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।বিগত তিন বছর ধরে মরিচের দাম চড়া কিনা,তাই অধিক মুনাফার আশায় তিনি একটি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা থেকে চড়া সুদে কিছু টাকা ঋণ করে মরিচের চারা রোপন করলেন।রোদ,আলো,পানি পেয়ে তরতরিয়ে চারা বড় হতে লাগল।গাছে গাছে ফুল এলো এখন অপেক্ষা সবুজ চকচকে ঝাঁঝালো মরিচের।হঠাৎ একদিন তিনি খেয়াল করলেন, মরিচের কান্ড,পাতায় ও ফুলে সাদা তুলার মতো আস্তরণ। তিনি বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই কয়েকদিনের ব্যবধানে পুরো ক্ষেতজুড়ে আক্রমণ হলো এই তুলার মতো অজানা রোগের।গাছ নেতিয়ে পড়তে শুরু করল।দিশেহারা কৃষক যোগাযোগ করলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সাথে।

ফসলের ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করে কর্মকর্তা জানালেন মরিচ গাছে মিলিবাগের আক্রমণ হয়েছে। মিলিবাগের আক্রমণ বলতে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণকে বোঝায়,যা গাছকে দূর্বল করে দেয় এবং ফলন কমিয়ে দেয়।এই পোকাগুলো দেখতে সাদা তুলার মতো এবং এরা পাতা ও কান্ডের রস চুষে খায়।এরা কয়েক একর জমির ফসল নিমেষেই সংক্রমিত করে ফেলতে পারে।

আক্রমনের লক্ষণ:
১।গাছের পাতা,কান্ডে ও ফুলে সাদা তুলার মতো আস্তরণ দেখা যায়।
২।গাছ দূর্বল হয়ে যায় ও পাতা ঝরে যায়।
৩।মুকুল ও কচিফল শুকিয়ে যায় এবং ছোট ফল ঝরে পড়ে।
৪।অনেকসময় পোকার সাথে পিঁপড়াও দেখা যায়, যা মিলিবাগদের রক্ষা করে।

প্রতিরোধের উপায়:
▪️প্রাকৃতিক পদ্ধতি
১।নিমতেল স্প্রে করা(প্রতি লিটার পানিতে ৫-১০ মিলি)
২।আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
৩।সাবান যুক্ত পানি স্প্রে করা(ডিটারজেন্ট ও লিকুইড শ্যাম্পু)

▪️রাসায়নিক পদ্ধতি:
১।প্রথমে ক্লোরপাইরিফস ও ৩-৪ দিন পর কার্বাইল জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করা।
২।ইমিডাক্লোপ্রিড বা অ্যাসিটামিপ্রিড যুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা।

মিলিবাগ আক্রমণ বেশি হলে গাছ মরেও যেতে পারে,তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার নির্দেশিত ব্যবস্থা গ্রহন করে দরিদ্র কৃষক রহমত আলী অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেলেন।সেই সাথে রক্ষা পেল আমাদের অর্থনীতি।নয়ত এবছরও ৩০০-৫০০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিনতে হতো সকলকেই। কৃষি আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তাই কৃষিকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে,সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সকলকেই সচেষ্ট হতে হবে।

আমরাই রক্ষা করব
আগামী দিনের কৃষি।


তাহসিন আহমেদ সুপ্তি
স্নাতক (সম্মান) ২য় বর্ষ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ইমেইল নিউজলেটার, টেলিগ্রাম, টুইটার X, WhatsApp এবং ফেসবুক -এ সাবস্ক্রাইব করে নিন।

Copyright 2024 biggani.org