গবেষণার প্রথম পদক্ষেপ

রিসার্চ পেপার কোথায় পাবেন?

Share
Share

তরুণ গবেষকদের জন্য গবেষণার সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তথ্য। গুগল স্কলার, রিসার্চগেট এবং ওপেন অ্যাকসেস জার্নাল কীভাবে এই তথ্যের ভাণ্ডার খুলে দেয়, সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই এই নিবন্ধ।

গবেষণার সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তথ্য। একজন তরুণ গবেষক যখন নতুন কোনো বিষয়ে কাজ শুরু করেন, তখন তাঁর প্রথম কাজই হলো সেই বিষয়ে যত বেশি সম্ভব প্রবন্ধ, বই ও গবেষণা সংগ্রহ করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে প্রবেশাধিকার সবসময় সহজ হয় না। সাবস্ক্রিপশন ফি অনেক বেশি, যা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই দরকার বিকল্প পথ। এই বিকল্প পথ খুলে দেয় গুগল স্কলার, রিসার্চগেট এবং ওপেন অ্যাকসেস জার্নাল।

গুগল স্কলারকে বলা যায় গবেষণার জন্য সবচেয়ে সহজ দরজা। এখানে শুধু একটি কীওয়ার্ড লিখলেই হাজারো প্রবন্ধ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এর বিশেষত্ব হলো—এটি শুধু একাডেমিক লেখা খুঁজে বের করে। তবে একটি সমস্যা হলো, সব প্রবন্ধই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। অনেক সময় কেবল সারসংক্ষেপ দেখা যায়, মূল প্রবন্ধের জন্য আবার অর্থ চাওয়া হয়। কিন্তু হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রবন্ধের পাশে যদি “PDF” বা “Full text” লিংক দেখা যায়, তবে সেটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা সম্ভব। অনেক গবেষক তাঁদের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় নিজের প্রবন্ধ উন্মুক্ত করে দেন। তরুণ গবেষকদের উচিত নিয়মিতভাবে এই লিংকগুলো খুঁজে দেখা।

রিসার্চগেট হলো গবেষকদের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এখানে পৃথিবীর নানা প্রান্তের গবেষকরা নিজেদের কাজ শেয়ার করেন। আপনি যদি কোনো প্রবন্ধ পড়তে চান, যা সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে না, তবে লেখককে অনুরোধ জানাতে পারেন। অধিকাংশ লেখকই তাঁদের কাজ শেয়ার করতে আগ্রহী হন, বিশেষত যদি জানতে পারেন এটি একজন তরুণ গবেষকের কাজে লাগবে। রিসার্চগেটে অ্যাকাউন্ট খোলা খুব সহজ, আর এর মাধ্যমে কেবল প্রবন্ধ সংগ্রহই নয়, গবেষক নেটওয়ার্ক তৈরি করাও সম্ভব। অনেক বাংলাদেশি তরুণ ইতিমধ্যেই এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছেন।

ওপেন অ্যাকসেস জার্নালের গুরুত্বও ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে জ্ঞানকে উন্মুক্ত করার একটি আন্দোলন এখন জোরদার হয়েছে। ওপেন অ্যাকসেস প্রবন্ধ মানে হলো—যে প্রবন্ধ পড়তে কোনো অর্থ দিতে হয় না। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী হোক কিংবা একজন নীতিনির্ধারক, সবার জন্যই জ্ঞান সহজলভ্য হয়। বাংলাদেশ থেকেও এখন অনেক গবেষণা ওপেন অ্যাকসেসে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তি বিষয়ক প্রবন্ধে ওপেন অ্যাকসেসের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

তবে মনে রাখা দরকার, ওপেন অ্যাকসেস মানেই সবসময় মানসম্মত নয়। তাই তরুণ গবেষকদের উচিত জার্নালের মান যাচাই করা—সেটি কি স্বনামধন্য ডাটাবেসে সূচিবদ্ধ? এর রিভিউ প্রক্রিয়া কেমন? এসব না বুঝে কেবল বিনামূল্যে পাওয়া যায় বলে যে কোনো প্রবন্ধ ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

তথ্যের ভাণ্ডারে প্রবেশের আরেকটি দিক হলো সঠিক কীওয়ার্ড ব্যবহার। গুগল স্কলার বা রিসার্চগেটে যখন অনুসন্ধান করবেন, তখন আপনার গবেষণার প্রশ্ন থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু শব্দ বেছে নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, “air pollution Dhaka” বা “health impact Bangladesh” এর মতো নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করলে প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হবে।

গবেষণার যাত্রা কখনো একাকী নয়। এটি এক ধরনের সমষ্টিগত প্রচেষ্টা, যেখানে এক গবেষকের কাজ অন্য গবেষকের ভিত্তি গড়ে দেয়। তাই তরুণ গবেষকদের জন্য গুগল স্কলার, রিসার্চগেট এবং ওপেন অ্যাকসেস জার্নাল কেবল তথ্যের উৎস নয়, বরং একটি বড় পরিবারে প্রবেশের দরজা। এই ভাণ্ডারে যত বেশি প্রবেশ করা যাবে, তত বেশি নতুন জ্ঞানের সূচনা ঘটবে।

বাংলাদেশের তরুণ গবেষকরা যদি এই উন্মুক্ত ভাণ্ডারকে কাজে লাগাতে পারে, তবে দেশীয় গবেষণার মান আরও উন্নত হবে। সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, সঠিক তথ্য ও সাহিত্যের ভাণ্ডার ব্যবহার করে বিশ্বমানের গবেষণা সম্ভব। আর সেই যাত্রা শুরু হয় একটি ক্লিক থেকেই—গুগল স্কলার, রিসার্চগেট বা ওপেন অ্যাকসেস জার্নালের দুনিয়ায়।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

Copyright 2024 biggani.org