নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
চোখ বন্ধ করলেও চারপাশ দেখা যাচ্ছে! শুনতে যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার দৃশ্য, কিন্তু বাস্তবে এমনই এক চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছেন চীনের গবেষকরা। ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অফ চায়নার (USTC) বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স তৈরি করেছেন যা দিয়ে রাতের অন্ধকারেও দেখা সম্ভব।
এই কনট্যাক্ট লেন্স ‘ইনফ্রারেড লাইট’ ধরতে পারে। সাধারণত, মানুষের চোখ ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো দেখতে পায়, যাকে আমরা দৃশ্যমান আলো বলি। কিন্তু ইনফ্রারেড আলো থাকে ৮০০ থেকে ১৬০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে — যা আমাদের চোখে দেখা যায় না।
কিভাবে কাজ করে এই লেন্স?
গবেষকরা এই লেন্সে ছোট ছোট ‘আপকনভার্শন ন্যানোপার্টিকল’ বসিয়েছেন। এসব কণার মধ্যে থাকে দুটি বিশেষ ধাতু — ইটারবিয়াম (Ytterbium) ও আরবিয়াম (Erbium)। এই কণাগুলো ইনফ্রারেড আলো শোষণ করে তা দৃশ্যমান আলোর রূপে রূপান্তর করতে পারে। ফলে চোখে পরা এই লেন্সের সাহায্যে অদৃশ্য ইনফ্রারেড আলোও মানুষ দেখতে পারে।
আরও মজার ব্যাপার হলো, ইনফ্রারেড আলো চোখের পাতার ভেতর দিয়েও প্রবেশ করতে পারে। তাই কনট্যাক্ট লেন্সটি চোখ বন্ধ থাকলেও কাজ করতে পারে। একে বলা হচ্ছে “closed-eye vision” — চোখ বন্ধ করেও ইনফ্রারেড সিগনাল দেখা।

শিক্ষার্থীদের জন্য কীভাবে উপকারী?
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রাতের বেলা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। ভবিষ্যতে এটি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, এমনকি চিকিৎসা খাতে ব্যবহার হতে পারে — বিশেষ করে যেখানে অন্ধকারে কাজ করতে হয়। বর্তমান প্রযুক্তিতে নাইট ভিশনের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি লাগে, কিন্তু এই লেন্সটি ছোট এবং কোনো ব্যাটারি ছাড়াই কাজ করতে পারে।
কিছু সীমাবদ্ধতা
এই লেন্স এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। লাইট স্ক্যাটারিংয়ের কারণে ছবি কিছুটা ঝাপসা দেখা যায় এবং শক্তিশালী ইনফ্রারেড লাইট (যেমন LED) দরকার হয়। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এর ছবি স্পষ্টতা ও সংবেদনশীলতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
প্রযুক্তিগত শব্দ সহজভাবে:
- ইনফ্রারেড (Infrared): চোখে না দেখা যাওয়া এমন এক ধরনের আলো, যা তাপ বহন করে এবং রাতের বেলায় সেন্সরের মাধ্যমে ধরা যায়।
- আপকনভার্শন ন্যানোপার্টিকল: ক্ষুদ্র কণা যা এক ধরণের আলো (যেমন ইনফ্রারেড) শোষণ করে অন্য ধরণের আলো (যেমন দৃশ্যমান আলো) তৈরি করে।
- ইটারবিয়াম ও আরবিয়াম: বিশেষ ধাতু যা ইনফ্রারেড আলো ধরা ও রূপান্তরে ব্যবহৃত হয়।
এই গবেষণাটি শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং মানবজীবনের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।
লেখক: নিউজ ডেস্ক, বিজ্ঞানী অর্গ
যোগাযোগ: [email protected]
Leave a comment