কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

২০৩১: মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?

Share
Share

কল্পবিজ্ঞানের মতো শোনালেও বাস্তবতা যে দ্রুত এগিয়ে আসছে, তা বোঝালেন গুগলের সাবেক সিইও এরিক শ্মিট।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Special Competitive Studies Project এর এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে এরিক শ্মিট এক বিস্ময়কর ও বিতর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী করেন: “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ২০৩১ সালের মধ্যেই মানুষের সামগ্রিক বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে।”

শ্মিট তার বক্তব্যে বলেন, “এই বিষয়ে সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি নেতৃত্বের মধ্যে একটি ‘নীরব ঐকমত্য’ তৈরি হয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, AI এখন ‘আন্ডার-হাইপড’ অর্থাৎ এর সম্ভাবনা যতটা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা তার চেয়েও অনেক বেশি।”

ভবিষ্যতের টাইমলাইন: AI কীভাবে এগোবে?

শ্মিট একটি তিন ধাপের টাইমলাইন তুলে ধরেন—

  • ২০২৬ সালের মধ্যে: অধিকাংশ প্রোগ্রামারকে বদলে দেবে এআই এবং এটি এলিট গণিতবিদদের সমতুল্য হতে পারবে।
  • ২০২৮–২০৩০ সালের মধ্যে: এআই পৌঁছাবে Artificial General Intelligence বা AGI-তে—যা হবে সেরা চিন্তাবিদ, শিল্পী এবং বিজ্ঞানীদের সমান বুদ্ধিমত্তার।
  • ২০৩১ সালের মধ্যে: জন্ম নেবে Artificial Superintelligence বা ASI—যা হবে গোটা মানবজাতির সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তার চেয়েও বেশি সক্ষম।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই বিবর্তন ঘটবে “recursive self-improvement” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে—যেখানে AI নিজেই নিজের কোড লিখবে, নিজে নিজে শিখবে এবং মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজের সক্ষমতা বাড়াবে।

‘সান ফ্রান্সিসকো কনসেনসাস’: ভবিষ্যতের রূপরেখা?

শ্মিট এই ধারণাকে বলেন “San Francisco Consensus”—কারণ, এই দৃঢ় বিশ্বাস মূলত সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি নেতাদের মধ্যেই ব্যাপকভাবে প্রচলিত, যদিও বিশ্বের অন্য প্রান্তে অনেকেই এই মতবাদে একমত নন।

এই অগ্রগতির বিপদ কী?

এরিক শ্মিটের মতে, বিশ্বের সরকারগুলো এখনো এই দ্রুতগতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য প্রস্তুত নয়। শাসনব্যবস্থা, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আইন এখনো পিছিয়ে। তার উদ্বেগ—একটি এমন AI আসছে, যেটি নিজে নিজেই উন্নত হবে, ছড়িয়ে পড়বে এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া:

শ্মিটের এই বক্তব্য অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ এবং AI বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট রাসেল বলেন, “সময়সীমা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মূল ধারণাটা খুবই বাস্তব। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা জরুরি।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কী বার্তা বহন করে?

বাংলাদেশেও AI নিয়ে আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে AI গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিল্পক্ষেত্রেও অটোমেশন শুরু হয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ে এখনো স্পষ্ট কোনো নীতিমালা বা প্রস্তুতির অভাব স্পষ্ট। AI বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে এখন থেকেই ব্যাপক পরিকল্পনা জরুরি।

উপসংহার:

মানুষের তুলনায় অধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন AI যদি সত্যিই আসে, সেটি হবে মানব ইতিহাসের এক মোড় ঘোরানো ঘটনা। আমাদের এখনই প্রশ্ন করা উচিত: “আমরা কি প্রস্তুত এমন এক জগতে, যেখানে মানুষের সিদ্ধান্তের চেয়ে মেশিনের সিদ্ধান্ত বেশি নির্ভরযোগ্য হবে?” প্রস্তুতির জন্য নীতিমালা, নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিকল্প নেই।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact:

biggani.org@জিমেইল.com

সম্পাদক: ড. মশিউর রহমান

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ইমেইল নিউজলেটার, টেলিগ্রাম, টুইটার X, WhatsApp এবং ফেসবুক -এ সাবস্ক্রাইব করে নিন।

Copyright 2024 biggani.org