গবেষণায় হাতে খড়ি

নতুন গবেষকদের জন্য রিসার্চ আর্টিকেল লেখার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

Share
Share

অতিথি লেখক:
আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক, ইয়েংনাম বিশ্ববিদ্যালয়।

রিসার্চ আর্টিকেল লেখা শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ বা লেখার দক্ষতার উপর নির্ভর করে না, বরং এটি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং কৌশলগত প্রক্রিয়া। তাই একটি শক্তিশালী রিসার্চ আর্টিকেল লিখতে গেলে শুধুমাত্র বিষয়বস্তু জানা থাকাই যথেষ্ট নয়, বরং সঠিক কাঠামো, উপযুক্ত তথ্যসূত্র, সুনির্দিষ্ট যুক্তি এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সফল রিসার্চ আর্টিকেল লেখার জন্য নিচের ১০টি ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে—

১. বিষয়ের সাথে পরিচিত হওয়া এবং প্রাসঙ্গিক অংশ নির্ধারণ

গবেষণা শুরুর আগে বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রথমেই বুঝে নিতে হবে, আপনার শিক্ষক, গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক বা জার্নাল থেকে কী চাওয়া হয়েছে। অনেক সময় গবেষকেরা এই ধাপটি এড়িয়ে যায়, যার ফলে জার্নাল থেকে আর্টিকেল প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদি গবেষণা কোনো জার্নালে প্রকাশের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে প্রথমেই লক্ষ্য জার্নাল নির্ধারণ করুন। প্রতিটি জার্নালের নিজস্ব নির্দেশিকা থাকে, যা আগে থেকে জানা থাকলে গবেষণা পরিকল্পনা করা সহজ হয়।

২. গবেষণা শুরু করুন

লেখার জন্য নির্দিষ্ট বিষয় নির্ধারণের পর পরবর্তী ধাপ হল সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। গবেষণার উদ্দেশ্য অনুযায়ী, প্রাসঙ্গিক রিসার্চ আর্টিকেল, বই, জার্নাল, ইন্টারনেট রিসোর্স এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। তথ্য সংগ্রহের পর, এটি বিশ্লেষণ করুন এবং যাচাই করুন কোন তথ্যগুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ এবং গবেষণার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই গবেষণা শুরু করার পর সব সময় আপনার লক্ষ্য এবং প্রশ্নের প্রতি মনোযোগী থাকুন, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করুন।

৩. গবেষণা organize করুন

রিসার্চ আর্টিকেল লেখার প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে শুধু তথ্য সংগ্রহ করলেই কাজ শেষ হয় না। সংগ্রহ করা তথ্যগুলি সঠিকভাবে সংগঠিত করা প্রয়োজন, যাতে আপনি পরবর্তী সময়ে সেগুলো সহজে ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমত, যেসব সূত্র থেকে আপনি তথ্য সংগ্রহ করছেন, সেগুলির সঠিক রেফারেন্স তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রেফারেন্সগুলি পরবর্তীতে আপনার আর্টিকেলের সঠিক উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কোনো বই, রিসার্চ আর্টিকেল বা ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে থাকেন, তবে তার সঠিক নাম, লেখক, প্রকাশনা বছর ইত্যাদি তথ্য অবশ্যই নোট করে রাখুন। দ্বিতীয়ত, সংগ্রহ করা তথ্যগুলির আপনার গবেষণার মূল বিষয়ের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত, তা বিশ্লেষণ করুন। এছাড়াও, তথ্য সংগঠনের জন্য বিভিন্ন ধরনের টুল ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন: এক্সেল, মাইন্ড ম্যাপিং সফটওয়্যার, রেফারেন্স ম্যানেজমেন্ট টুলস (যেমন: Mendeley, Zotero) ইত্যাদি।

৪. মূল বক্তব্য তৈরি করুন

রিসার্চ আর্টিকেল লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো থিসিস স্টেটমেন্ট বা মূল বক্তব্য তৈরি করা। থিসিস স্টেটমেন্ট হলো গবেষণার উদ্দেশ্য বা মূল প্রতিপাদ্য, যা গবেষণার বিষয়বস্তু এবং লক্ষ্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এটি মূলত আপনার আর্টিকেলের কাঠামো নির্ধারণ করে এবং গবেষণার সমস্ত যুক্তি এবং তথ্য উপস্থাপন করতে সাহায্য করে। এটি এমন একটি বাক্য হতে হবে, যা গবেষণার পুরো ধারণা এবং যে প্রশ্নের উত্তর আপনি দিতে যাচ্ছেন, তা পাঠককে বোঝাতে সক্ষম হবে। থিসিস স্টেটমেন্টটি সংক্ষিপ্ত, কিন্তু যথেষ্ট তথ্যপূর্ণ হতে হবে, যাতে এটি পাঠককে আপনার গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে।

৫. রিসার্চ আর্টিকেলের কাঠামো নির্ধারণ করুন

নির্দিষ্ট মূল বক্তব্য তৈরি করার পর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো গবেষণার কাঠামো নির্ধারণ করা। গবেষণাপত্র লেখার সময় কাঠামো এমনভাবে সাজানো উচিত যাতে পাঠক সহজেই আপনার কাজ বুঝতে পারে এবং বিষয়বস্তুর সারাংশ থেকে বিস্তারিত আলোচনায় যেতে পারে। আর্টিকেলের কাঠামো তৈরির জন্য প্রথমে গবেষণার বিষয়বস্তু অনুযায়ী একটি রূপরেখা (outline) তৈরি করা দরকার। এই রূপরেখা আর্টিকেলের প্রধান অংশগুলোর লজিক্যাল বিন্যাস তৈরি করতে সহায়তা করে এবং লেখার প্রতিটি ধাপকে সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা করার সুযোগ দেয়। কাঠামো তৈরি করার সময় প্রথমে ভূমিকা, গবেষণার পটভূমি, সমস্যা নির্ধারণ, গবেষণার উদ্দেশ্য এবং থিসিস স্টেটমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এরপর মূল অংশে গবেষণার বিভিন্ন দিক, প্রাপ্ত তথ্য এবং বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধের শেষ অংশে উপসংহার, গবেষণার সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ গবেষণার প্রস্তাবনা উল্লেখ করা যেতে পারে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, গবেষণাপত্রের কাঠামোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো কঠোর ফর্মুলা নেই। কাঠামো নির্ধারণের সময় গবেষণার উদ্দেশ্য ও পাঠকের বোধগম্যতার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

৬. কীওয়ার্ড নির্বাচন করুন

আর্টিকেলের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য এবং সহজে অনলাইনে খুঁজে পাওয়ার জন্য কীওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিসার্চ আর্টিকেলে এমন কীওয়ার্ড নির্বাচন করুন যা গবেষণার মূল বিষয়বস্তুকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে। কীওয়ার্ড নির্বাচনের সময় জনপ্রিয় এবং প্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৭. প্রথম খসড়া (draft) লিখুন

গবেষণার কাঠামো ঠিক করার পর প্রথম খসড়া লেখা শুরু করুন। প্রথম খসড়াকে চূড়ান্ত লেখা মনে করার প্রয়োজন নেই। লেখার সময় যুক্তি সুসংগত এবং স্পষ্টভাবে তুলে ধরার দিকে মনোযোগ দিন। লেখার ধরণ এমন হতে হবে যাতে গবেষণার মূল পয়েন্ট পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।

৮. সম্পাদনা ও সংশোধন (editing & correction) করুন

প্রাথমিক খসড়া সম্পন্ন হলে নিজে তা পড়ুন এবং কোথায় উন্নতি করা যায় তা দেখুন। ভাষাগত ত্রুটি, যুক্তির অসংগতি বা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য থাকলে তা সংশোধন করুন। প্রয়োজনে সহকর্মী বা গবেষণা তত্ত্বাবধায়কের সাহায্য নিন। আর্টিকেল প্রকাশযোগ্য করতে এডিটিং ও প্রুফরিডিং অপরিহার্য।

৯. চূড়ান্ত পর্যালোচনা করুন

একটি ভালো রিসার্চ আর্টিকেলের জন্য চূড়ান্ত পর্যালোচনা (review final draft) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চূড়ান্ত খসড়া সম্পন্ন হলে এটি একাধিকবার পড়ুন এবং যাচাই করুন যে গবেষণার মূল প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা। একাধিক পর্যালোচনার মাধ্যমে ভুলত্রুটি কমিয়ে আনা সম্ভব।

১০. গাইডলাইন অনুসরণ করে জমা দিন

আর্টিকেল জমা দেওয়ার আগে নিশ্চিত করুন যে নির্ধারিত গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণার তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে কিনা এবং citation যথাযথভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা তা ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। সম্ভব হলে একজন অভিজ্ঞ গবেষক বা প্রফেশনাল এডিটরের সাহায্য নিন।

বিদ্র: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত:——–
https://www.facebook.com/share/p/15fa7ccFbC

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগবেষণায় হাতে খড়ি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল প্রশিক্ষণের সমস্যা

দুর্বল ডেটা, লুকানো ভেরিয়েবল এবং অতিরিক্ত ফিটিং এর কারণে AI এবং মেশিন...

গবেষণায় হাতে খড়ি

রিভিউ আর্টিকেলের প্রধান তিনটি ধরন

তিনটি প্রধান ধরণের পর্যালোচনা প্রবন্ধ সম্পর্কে জানুন - সাহিত্য পর্যালোচনা, পদ্ধতিগত পর্যালোচনা...

গবেষণায় হাতে খড়িবিজ্ঞান বিষয়ক খবর

বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের সাফল্যের গল্প: AIUB-এর গবেষণা দলের অনন্য অর্জন

AIUB-এর UCH গবেষণা গ্রুপ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে, IEEE চতুর্থ...

গবেষণায় হাতে খড়ি

জার্নালে গবেষণাপত্র সাবমিশনের জন্য কাভার লেটার কিভাবে লিখবেন?

জার্নাল জমা দেওয়ার জন্য কীভাবে একটি কার্যকর গবেষণাপত্রের কভার লেটার লিখতে হয়...

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগগবেষণায় হাতে খড়ি

বাংলাদেশে গবেষণার ভবিষ্যৎ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয়

বাংলাদেশে গবেষণার ভবিষ্যৎ আবিষ্কার করুন, যার মধ্যে রয়েছে তরুণ গবেষকদের মুখোমুখি হওয়া...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.