এবারের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমাদেরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন লেখক : ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী। প্রতিটি বইয়ের পৃষ্ঠায় আছে এক অনন্য পৃথিবীর গল্প, যা আমাদের মনের জানালা খুলে দেয়। নবীন প্রজন্মের জন্য বই পড়া হচ্ছে মনের জন্য খাবার, যা তাদের সৃজনশীলতাকে আরো বৃদ্ধি করতে পারে। ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী বই পড়া সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন যা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা তার সম্পর্কে জানি।
প্রথমেই আপনার সম্বন্ধে আমরা জানতে চাই?
আমার জন্ম ঢাকায়। আমরা তিন ভাই। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। সেই সুবাদে প্রথম ঠিকানা ছিল মতিঝিল এজিবি কলোনীর কোয়ার্টার। ১৯৯৫ সালে বাবা মারা যাওয়ার পরে আমরা সপরিবারে শাহজাহানপুরে শিফট হই। সেই থেকে বাসাবো, খিলগাঁও, শান্তিনগর এইসব এলাকাতেই আছি। এস.এস.সি. পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক ঢাকা কলেজ, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। বর্তমানে কর্মরত আছি রাষ্ট্রয়ত্ত্ব নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডে (রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান) সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে। চাকরিরত থাকা অবস্থাতে রেডিয়েশন সেফটি নিয়ে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করি। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি এবং রূপপুর পারমানিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ নিয়েই বর্তমান ব্যস্ততা।
আপনার বিজ্ঞান লেখার যাত্রা সম্পর্কে কিছু বলুন। বাংলায় বিজ্ঞান লেখার জন্য আপনাকে কী অনুপ্রাণিত করেছে?
সময়টা ছিল খুব সম্ভবত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস। দেশে তখন করোনার সংক্রমণের মধ্য বিরতি চলছে। জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পথে। সে সময়ে অনেকটা হঠাৎ করেই হাতে চলে আসে একটি বই, ‘কোয়ান্টাম ফিজিক্স’। লেখক আবদুল গাফফার রনি। মন্ত্রমুগ্ধের মতন পড়ে ফেললাম সম্পূর্ণ বইটা। পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে কম বেশি জানাশোনা আমার আগে থেকেই ছিল। কিন্তু লেখকের সাবলীল লেখনী, সহজ উপস্থাপনা এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সম্পূর্ণ বিষয়টি উপস্থাপন করার কৌশল ভীষণভাবে দাগ কেটে গেল মনে। আমাদের ছেলেবেলায় বিজ্ঞান বিষয়ক এমন বইয়ের যথেষ্ট অভাব ছিল।
একাডেমিক পড়ালেখা, চাকরির প্রস্তুতি ইত্যাদি নানান কারণে এইচ.এস.সি. পরীক্ষার পরে বিজ্ঞানের বই পড়া থেকে একটু দুরেই ছিলাম। তবে ২০২০ সালে ফিরে এসে এক আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করলাম। এ সেক্টরে খুব নীরবে এক বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। বেশ কয়েকজন অসাধারণ লেখকের হাত ধরে বাংলা ভাষায় বেশ মান সম্মত মৌলিক এবং অনুবাদ বই পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে। অসাধারণ লেখকগণের মধ্যে আবদুল গাফফার রনি ভাই, আবুল বাসার ভাই, উচ্ছ্বাস তৌসিফ ভাই, চমক হাসান ভাই, বন্ধু রাতুল খান, হাসান তারেক চৌধুরী, নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখান থেকেই সর্বপ্রথম আমার বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করার ইচ্ছা জাগে। পরবর্তীতে বন্ধু আরাফাত সাকলায়েনের অনুপ্রেরণায় আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কলম হাতে তুলে নিয়েছিলাম। দীর্ঘ আট মাসের পরিশ্রম শেষে লেখা শেষ হয় আমার প্রথম বই, ‘একটুখানি জ্যোতির্বিজ্ঞান’-এর পান্ডুলিপি। এর মাঝেই আমার পরিচয় হয় দেশের অন্যতম সেরা মাসিক বিজ্ঞান পত্রিকা ‘বিজ্ঞানচিন্তা’ এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘বিজ্ঞান ব্লগ’-এর সাথে। ফলে লেখালেখিটা শুধু বইমেলা কেন্দ্রিক না হয়ে চলতে থাকে বছর জুড়ে।
বিজ্ঞান লেখক হিসেবে আপনার কোন অভিজ্ঞতা কিংবা পুরস্কৃার সম্পর্কে বলুন?
লেখালেখির জগতে আমি নিতান্তই একজন নবীন সদস্য। সম্মাননা বা পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য হয়ে উঠতে এখনও বহু পথ পাড়ি দেয়া বাকি। তবে লেখালেখি নিয়ে দুইটা অভিজ্ঞতা ভীষণভাবে আমার মনে দাগ কেটেছিল। প্রথমটা ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বরে। তখনও আমার কোন বই প্রকাশিত হয় নি। সেদিন বিজ্ঞানচিন্তার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছিল— ‘ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ’ শিরোনামে একটা ফিচার। সেটাই ছিল যে কোন প্লাটফরমে প্রকাশিত হওয়া আমার প্রথম লেখা। ভীষণ ভালো লাগার মুহূর্ত ছিল সেটি। অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্মরণীয় মুহূর্ত এসেছিল ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে। সেই মাসে বিজ্ঞান ব্লগে আমার দুইটি লেখা— ‘ওলবার প্যারাডক্স এবং কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন’ এবং ‘লেজার ফিজিক্সে হাতেখড়ি’ প্রকাশিত হয়। এগুলোর জন্য আমাকে বিজ্ঞান ব্লগের জানুয়ারি মাসের ‘সেরা লেখক’ ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘটনাটা মনে পড়লে আমার এখনও খুব ভালো লাগে।
আপনার প্রকাশিত বইগুলি কি কি?
এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চারটি।
অন্বেষা প্রকাশন থেকে ‘একটুখানি জ্যোতির্বিজ্ঞান’ ও ‘রোড টু ড্রাইভ এ নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর’ (সোলেমান সজীব ভাইয়ের সাথে যুগ্মভাবে);
আদর্শ প্রকাশন থেকে ‘মজার পদার্থবিজ্ঞান’;
প্রথমা প্রকাশন থেকে ‘এক্সোপ্ল্যানেটঃ বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজে’।
রকমারির লেখক প্রোফাইলে সব তথ্য একসাথে পেয়ে যাবেন-
https://www.rokomari.com/book/author/84253/ishtiak-hossen-chowdhury
বাংলায় বিজ্ঞান লেখায় আগ্রহী নবীন লেখকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?
লেখালেখি শুরুর আগে অবশ্যই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দেশি-বিদেশি হরেক রকম লেখকদের বই পড়া থাকলে (ফিকশন, নন-ফিকশন উভয়ই) সাবলীলভাবে লেখার মূল সূত্রটা আয়ত্ত করতে বেশ সুবিধা হয়।
আপনার ইমেইল : [email protected]
ফেসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/IshtiakWriter
বিজ্ঞানী অর্গ এর পক্ষ থেকে আমরা ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। তার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকার আমাদের জন্য সত্যিই এক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। তিনি নবীন গবেষকদের জন্য একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ ব্যক্তিত্ব, যারা তার পথ অনুসরণ করে নিজেদের গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে।
Interview with Ishtiak Hossen Chowdhury
Can you tell us a bit about yourself?
I was born in Dhaka, and I have two brothers. My father worked in government service, so our first home was in the AGB Colony quarters in Motijheel. After my father passed away in 1995, our family moved to Shahjahanpur, and since then, we’ve lived in areas like Basabo, Khilgaon, and Shantinagar. I completed my SSC at Motijheel Ideal School and College, my higher secondary at Dhaka College, and then my bachelor’s and master’s in Physics from the University of Dhaka. Currently, I’m working as an Assistant Manager at the state-owned Nuclear Power Plant Company Bangladesh Limited, which operates the Rooppur Nuclear Power Plant. While working, I also completed training in radiation safety. These days, my time is divided between writing on science topics and my responsibilities at the Rooppur Nuclear Power Plant.
Tell us about your journey in science writing. What inspired you to write about science in Bengali?
It was around December 2020. At that time, there was a lull in COVID-19 transmission, and life was slowly returning to normal. During that period, I happened to pick up a book called Quantum Physics by Abdul Gaffar Rony. I was captivated and read the entire book like I was under a spell. Though I already had some knowledge of quantum physics from my studies in physics, the author’s lucid language, clear presentation, and ability to maintain coherence throughout left a deep impression on me. Growing up, we had a scarcity of such science books.
After my HSC, I drifted away from reading science books due to academic studies and job preparation. But in 2020, I noticed something remarkable: a quiet revolution had occurred in this field. Thanks to several brilliant authors, many high-quality original and translated science books in Bengali had reached readers. Among these exceptional writers, I would especially mention Abdul Gaffar Rony, Abul Bashar, Uchchhash Tausif, Chamak Hasan, Ratul Khan, Hasan Tarek Chowdhury, and Naeem Hossain Faruki. Inspired by them, I first developed an urge to write about science. Later, with encouragement from my friend Arafat Saklayen, I officially picked up the pen. After eight months of hard work, I finished the manuscript of my first book, Ektukhani Jyotirbiggan (A Bit of Astronomy). During this time, I also connected with the prominent science magazine Biggan Chinta and the popular science website Biggan Blog, allowing me to continue writing throughout the year rather than only for book fairs.
Can you share some experiences or recognitions you’ve received as a science writer?
I am still very new to the world of writing, and I have a long way to go before I’m worthy of honors or awards. However, there are two experiences that left a significant mark on me. The first was on November 30, 2021, when my first article, titled “Electricity from Uranium,” was published in the online edition of Biggan Chinta. It was my first piece on any platform, and it was a moment of great joy. The second memorable experience came in January 2022 when two of my articles, “Olbers’ Paradox and the Cosmic Microwave Background Radiation” and “Introduction to Laser Physics,” were published on Biggan Blog. I was named Biggan Blog‘s “Author of the Month” for January for these articles. Thinking back to this still brings me immense happiness.
What books have you published so far?
To date, I have published four books:
- Ektukhani Jyotirbiggan (A Bit of Astronomy) and Road to Drive a Nuclear Reactor (co-authored with Soleman Sajib), published by Annesha Publications.
- Mojar Podartho Biggan (Fun Physics), published by Adarsha Publications.
- Exoplanet: In Search of Extraterrestrial Worlds, published by Prothoma Publications.
You can find all my information together on my Rokomari author profile: Rokomari
What advice would you give to aspiring science writers in Bengali?
Before starting to write, develop a habit of reading. Reading books by various authors from both home and abroad (both fiction and non-fiction) helps immensely in mastering the basics of fluent writing.
Email: [email protected]
Facebook Page: Ishtiak Hossain Chowdhury
On behalf of Biggani.org, we extend our heartfelt congratulations and best wishes to Ishtiak Hossain Chowdhury. This interview was a delightful experience for us, and he stands as an exemplary figure for young researchers who can follow in his footsteps and explore new horizons in their own research.
Leave a comment