“সোলার গাড়ি” কথাটি তোমরা অনেকেই হয়তো শুনে থাকবে। কিংবা ছোটখাট খেলনার গাড়িতে হয়তো সেই ধরনের কিছু মডেল দেখেছো। কিন্তু সোলার সেল আসলে কী? চল, তা নিয়ে একটু জানা যাক। সোলার গাড়ি নিয়ে কথা বলার আগে সৌরশক্তি নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার। সৌর কোষ সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে তা বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। অনেক সময় তোমরা ক্যালকুলেটরে দেখতে পাবে যে তাতে সৌরকোষ লাগানো থাকে। এই ধরনের সৌরকোষ সমৃদ্ধ ক্যালকুলেটর কিংবা ঘড়িতে কোনো ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না। কেননা ক্যালকুলেটর চালানোর জন্য যে পরিমাণ শক্তি দরকার হয়, তা সৌরকোষ আলো থেকে সংগ্রহ করে।
এখন কল্পনা কর, সেই রকম সৌরকোষ যদি একত্রে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে তা থেকে অনেক বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে, যা দিয়ে একটি গাড়ি চালানো সম্ভব। সোলার গাড়ি ঠিক এভাবেই কাজ করে। তবে বাস্তবে ব্যাপারটি এত সহজ নয়। মূল সমস্যা হলো, সৌরকোষ আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে বলে মেঘলা দিনে কিংবা সন্ধ্যা বেলায় যখন আলো কম থাকে, তখন গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। ধরো, আমরা সোলার গাড়ি নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলাম। হঠাৎ করে আবহাওয়া বদলে গেল, যা প্রায়শই ঘটে। দেখা গেল, আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে। তখন কী হবে? আমরা যে গাড়ি চালাচ্ছিলাম, তা আর চলবে না এবং পথেই থেমে যাবে। এতে আমরা যে অবস্থায় পড়বো, তা সহজেই কল্পনা করা যায়। এটা সোলার গাড়ির একটি প্রধান সমস্যা।
বর্তমান অগ্রগতি ও সোলার গাড়ির সম্ভাবনা
বর্তমান সময়ে সোলার গাড়ির প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে টেসলা এবং লাইটইয়ার (Lightyear) কোম্পানিগুলো সোলার গাড়ির প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করেছে। লাইটইয়ার কোম্পানি তাদের ‘Lightyear 0’ মডেল বাজারে এনেছে, যা একবার চার্জে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। এই গাড়ির ছাদ এবং হুডে থাকা সোলার প্যানেলগুলো সূর্যের আলো থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে ব্যাটারিতে জমা করে, যা গাড়ির রেঞ্জ বাড়াতে সহায়তা করে। যদিও এই গাড়ির মূল্য বেশ উচ্চমানের, তবুও এটি সোলার গাড়ির প্রযুক্তিতে একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
২০২৪ সালে, সোলার গাড়ির বাজারের আয় প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোলার গাড়ির গ্লোবাল মার্কেটের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার (CAGR) ৩৫.২% হতে পারে বলে কিছু সমীক্ষা বলছে। এই দ্রুত বৃদ্ধির পিছনে বড় কারণ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং বিশ্বজুড়ে গ্রিন এনার্জি ব্যবহারের প্রবণতা।
সোলার গাড়ি নির্মাণকারী প্রধান কোম্পানিগুলো
এখন আমরা জানব বিশ্বের কিছু প্রধান কোম্পানি সম্পর্কে যারা সোলার গাড়ি তৈরি করছে:
- সোনো মোটরস (নেদারল্যান্ডস): এই কোম্পানি “সোনো সিয়ন” নামে একটি সোলার গাড়ি তৈরি করেছে। এটি এমন একটি গাড়ি যা নিজেই নিজেকে চার্জ করতে পারে!
- লাইটইয়ার (নেদারল্যান্ডস): এরা “লাইটইয়ার 0” নামে একটি অত্যাধুনিক সোলার গাড়ি তৈরি করেছে। এই গাড়িটি একবার চার্জ দিলে ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
- অপোর্টুনিটি ইলেক্ট্রিক ভেহিকলস (অস্ট্রেলিয়া): এই কোম্পানি “স্টেলা এরা” নামে একটি সোলার গাড়ি তৈরি করেছে যা চার জন যাত্রী বহন করতে পারে।
- হাইউন্ডাই (দক্ষিণ কোরিয়া): এই বিখ্যাত কার কোম্পানি “সোনাটা হাইব্রিড সোলার” নামে একটি গাড়ি তৈরি করেছে যেটি সোলার প্যানেল ও ইলেকট্রিক মোটর উভয়ই ব্যবহার করে।
- টয়োটা (জাপান): জাপানের এই বিশ্বখ্যাত কোম্পানি “প্রিয়াস প্রাইম” নামে একটি হাইব্রিড সোলার গাড়ি তৈরি করেছে।
বাংলাদেশেও কিছু প্রতিষ্ঠান সোলার গাড়ি নিয়ে গবেষণা করছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শিক্ষার্থীরা কয়েকটি সোলার গাড়ির মডেল তৈরি করেছে।
মজার বিষয় হল, এই কোম্পানিগুলো শুধু গাড়ি তৈরি করছে না, তারা নতুন নতুন প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করছে। যেমন, অধিক কার্যকর সোলার প্যানেল, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি, এবং হালকা কিন্তু শক্তিশালী গাড়ির কাঠামো। তোমরা কি কল্পনা করতে পারো, একদিন হয়তো বাংলাদেশের রাস্তায় এই সব অত্যাধুনিক সোলার গাড়ি চলবে? আর সেই গাড়িগুলো হয়তো তোমাদের মতো কোনো বাংলাদেশী বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলী তৈরি করবে!
উন্নত ব্যাটারি প্রযুক্তি
সোলার গাড়ির ব্যাটারি প্রযুক্তিতেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির পরিবর্তে বর্তমানে সলিড-স্টেট ব্যাটারি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এই ধরনের ব্যাটারি উচ্চ ঘনত্বের শক্তি ধারণ করতে সক্ষম, ফলে গাড়ি দীর্ঘ সময় ধরে চালানো সম্ভব হয়। তাছাড়া, সৌরশক্তি থেকে সঞ্চিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি সংযুক্ত করার কাজও চলছে। যেমন, ‘তেসলা’র নতুন প্রোটোটাইপ গাড়ি ব্যাটারি মাত্র ১৫ মিনিটেই ৮০% চার্জ সম্পূর্ণ করতে সক্ষম, যা দূরপাল্লার যাত্রায় বাড়তি সুবিধা দেয়।
সাম্প্রতিক খবর
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, জার্মানির একটি স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের নতুন প্রোটোটাইপ সোলার গাড়ি প্রকাশ করেছে। এই গাড়ির বিশেষত্ব হলো এটি দিনে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত সৌরশক্তি ব্যবহার করে চলতে পারে। এর ফলে দৈনন্দিন কাজের জন্য চার্জ করতে হবে না। এমনকি শহরের ট্রাফিক জ্যামে থেমে থাকার সময়ও সৌর প্যানেলগুলো শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়াতে, ‘ওয়ার্ল্ড সোলার চ্যালেঞ্জ’ নামে একটি প্রতিযোগিতা হয় যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সোলার গাড়ির মডেল তৈরি করে এবং তা পরীক্ষায় অংশ নেয়। ২০২৩ সালের প্রতিযোগিতায় একটি দল এমন একটি গাড়ি তৈরি করেছে, যা সূর্যের আলো ছাড়া মাত্র ১০০ গ্রাম ব্যাটারি ব্যবহারে ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পেরেছে। এ ধরনের প্রতিযোগিতা সোলার গাড়ির প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
যদিও সোলার গাড়ি পরিবেশবান্ধব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তবুও এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সৌর প্যানেলের কার্যকারিতা, ব্যাটারির ব্যয়বহুলতা, এবং সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন এ ধরনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে সোলার গাড়ির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। উন্নত ব্যাটারি এবং হালকা ওজনের গাড়ির নকশা সোলার গাড়ির রেঞ্জ বাড়াতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে সোলার গাড়ির প্রযুক্তি উন্নত হলে আমরা হয়তো এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি দেখতে পাবো। সোলার গাড়ি নিয়ে গবেষণা চলতে থাকুক এবং একদিন হয়তো আমরা দেখতে পাবো আরও উন্নত এবং ব্যবহারযোগ্য সোলার গাড়ি, যা আমাদের পরিবেশের জন্য একটি চমৎকার সমাধান হতে পারে।
এই উন্নত প্রযুক্তি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আরও টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে সোলার গাড়িকে জনপ্রিয় করবে বলে আশা করা যায়।
Apner kothai thik
Thanks
ashola ki kalkulator ar shouro kosh onek gulo ak shatha kora 3/5/9 volt utponno kora shomvob?
plz ganaban.
ashola ki kalkulator ar shouro kosh dia 3/5/9 volt utponno kora shomvob.
plz ganaban
খুব সুন্দর কিছু সহজ সূলভ .কাযকর সমাধান বাতিয়ে দেয়া হয়েছে এতে।