পদার্থবিদ্যা

মহাবিশ্বের শুরু, সমাপ্তি ও বিগ ব্যাং

Share
Share

{mosimage}বিগ
ব্যাং , পার্টিকল ফিজিক্স ও ওয়েভ মেকানিক্স নিয়ে সম্প্রতি ইউরোপের
বিজ্ঞানীরা একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। জার্মানী , ফ্রান্স ও
অষ্ট্রিয়ার বিজ্ঞানীদের এই প্রবন্ধ মহাবিশ্বের শুরু ও বিস্তৃতি নিয়ে যেমন
তথ্য উপস্থাপন করেছে তেমনি এটি উপস্থাপন করেছে মহাবিশ্বের সমাপ্তি। 
পাশাপাশি এই প্রবন্ধে সার্ন পরিচালিত বিগ ব্যাং গবেষণার তথ্যও
বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়।
সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্স বর্ডারে সার্ন পরিচালিত বিগ ব্যাং গবেষণা বর্তমান
সময়ে বিজ্ঞান বিশ্বের একটি অত্যন্ত আলোচিত বিষয়। এ গবেষণা নিয়ে বিশ্বব্যাপী
বিজ্ঞানী মহল এবং মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ গবেষণার মাধ্যমে নাকি
মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব হবে।

প্রোটনের দুটি বিম ঘড়ির দিকে এবং ঘড়ির বিপরীত দিকে তাক করে সার্নের
বিজ্ঞানীরা ছুড়ে দিয়েছেন ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে অবস্থান নেয়া
ট্যানেলে। এ দুই বিপরীতমুখী বিমের যখন সংঘর্ষ হয় তখন ঘটে বিগ ব্যাংয়ের
সময়কার পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা জানান, যে কোনো বেগে বিম ছুড়লে এ পরিবেশ অর্জন
সম্ভব নয়। ছুড়তে হবে আলোর প্রায় কাছাকাছি বেগে। সার্নের বিজ্ঞানীরা এ
কাজটিই করেছেন।
এ ধরনের প্রোটন বিমের সংঘর্ষের মাধ্যমে বিগ ব্যাং শুরুর সময়কার পরিবেশ
পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বিজ্ঞানীরা অর্জন করবেন তা হচ্ছে নতুন
নতুন কণা আবিষ্কার। তারা আশা করছেন হিগ বোসোন নামক কণিকা আবিষ্কারের। এ হিগ
বোসোন পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কণিকা। এ কণিকাকে অনেকে
মজা করে ঈশ্বরের কণিকাও বলে থাকেন। হিগ বোসোন কণিকা নিয়ে গবেষণার দিক
দিয়েও তাই এই গবেষণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
লার্জ হাডরন কলাইডারের মাধ্যমে এ গবেষণা পরিচালিত করেছে ইউরোপিয়ান
অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চের বিজ্ঞানীরা। এ প্রতিষ্ঠানটি সংক্ষেপে
সার্ন হিসেবে পরিচিত। উচ্চতর পদার্থবিজ্ঞানের বেশকিছু প্রশ্নকে সামনে রেখে
১৯৭১ সাল থেকে এই লার্জ হাডরন কলাইডারের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ২০০৮ সাল থেকে
এই লার্জ হাডরন কলাইডারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এবারের
পরীক্ষা থেকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হচ্ছে
সুপারসিমেট্রিক পদার্থ হিগবোসোন আবিষ্কার। হিগ বোসোন বিজ্ঞানীদের কাছে একটি
হাইপোথেটিকাল কণিকা হিসেবে বিবেচিত ছিলো। পদার্থবিজ্ঞানের বিশেষ থিওরী
‘স্টান্ডার্ড মডেল’ থেকে বিজ্ঞানীরা এই কণিকা সম্পর্কে ধারণা পান। হিগ
বোসোনের ভর ১১৫ থেকে ১৮৫ এবং এই কণিকার স্পিন হচ্ছে শূন্য। হিগ বোসোন হচ্ছে
সৃষ্টির শুরুর সময়কার প্রাথমিক কণিকা। এই কণিকার কথা মাথায় রেখেই অনেক
বিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন হিগ বোসোনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুর
সময়কার পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। হিগ বোসোনকে মিডিয়াতে অনেক সময় মজা
করে গড কণিকা বলা হয়ে থাকে। বেশকিছু জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রে হিগ
বোসোনের কথা উঠে এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লেক্স , সোলারিস , হোয়াইট মারস ,
ফ্লাশফরওয়ার্ড, ইনটো দ্য লুকিং গ্লাস , দ্য গড পারটিকলস , এ হোল ইন
টেক্সাস ইত্যাদি।
হিগ বোসোনের ব্যাপারটি ছাড়াও আরোও বেশকিছু কারণে এই সার্ন লার্জ হাডরন
কলাইডারের কার্যক্রমের দিকে সকলের মনোযোগ রয়েছে । এগুলোর মধ্যে এক্সটা্রা
ডাইমেনশন , সুপারসিমেট্রিক পার্টনার, স্ট্রিং থিওরি , গ্রান্ড ইউনিফিকেশন
থিওরি , গ্রাভিটি এন্ড ফান্ডামেন্টাল ফোর্সেস , কোয়ার্ক ফ্লাভোর মিক্সিং ,
সিপি ভায়োলেশন বা ম্যাটার-এন্টিম্যাটার ভায়োলেশন , কোয়ার্ক-গ্লুয়োন প্লাজমা
প্রবেস্নম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সার্নের বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা ধীরে ধীরে তাদের লক্ষ্য
অর্জনে সক্ষম হবেন। তবে অষ্ট্রেলিয়া , জাপান , ভারত , রাশিয়া এবং ল্যাটিন
আমেরিকার বেশকিছু বিশেষজ্ঞ পদার্থবিজ্ঞানী এই পরীক্ষা সতর্কতার সাথে
পরিচালনা করার দিকে জোর দিয়েছেন। কারণ মারাত্মক ঝুঁকি এই পরীক্ষার সাথে
অতপ্রতভাবে জড়িত।
ইউরোপের এই বিজ্ঞানীরা তাদের প্রবন্ধে উপরের এই সকল বিষয়েও বিশ্লেষণধর্মী
তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

 

প্রকাশিত: যায় যায় দিন

 

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
অন্যান্যচিকিৎসা বিদ্যানতুন সংবাদপদার্থবিদ্যা

এক নজরে দেখে নেয়া যাক ২০২৪ সালের সকল নোবেল বিজয়ী কে?

১। পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারঃ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন জন হপফিল্ড (John Hopfield)...

পদার্থবিদ্যাবই আলোচনা

প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা: বিজ্ঞানের মহাকাব্য

কালজয়ী বিজ্ঞানের বই যা বদলে দিয়েছিল পৃথিবী ও মানুষের গতানুগতিক ধারণা। আজকে...

পদার্থবিদ্যাপ্রথম পাতায়

জ্বালানী বিহীন বিশ্ব

বাংলাদেশে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সমস্যায় সমাধান করতে পারছিনা, তা নিয়ে হিমশিম...

পদার্থবিদ্যাস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

স্পেস-টাইম কন্টিনিউয়াম

কখনও ভেবে দেখেছেন যে কেন মানুষের বাস্তব চেতনা শুধু দৈর্ঘ্য বা দূরত্ব...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.