নতুন বছরের শুরুতে নতুন করে সব কিছু পর্যালোচনা করে দেখার সুযোগ হয়, তেমনি এই বছরে যে প্রযুক্তিগুলো আলোচিত হবে এবং ভূমিকা রাখবে তারই একটি তালিকা তৈরি করার প্রয়াস করলাম। কোভিড এর কারণে বেশ কিছু প্রযুক্তি গতবছর ভুমিকা রেখেছিল। বরাবরের মতন নতুন বছরের শুরুতে সিট বেল্টটি শক্ত করে আটকে নিন, চলুন প্রযুক্তির জগতে একটু ড্রাইভ দিয়ে ঘুরে আসি।
১. এডজ কম্পিউটিং (Edge Computing)
এডজ কম্পিউটিং: ডিভাইসের উপরেই ব্যবহারকারিদের আরো কাছে কম্পিউটিং এবং তথ্য এর প্রোসেস আরো দ্রুত করার অত্যাধুনিক একটি উপায়। গত কয়েকবছর ধরেই IoT ইন্টারনেট অফ থিংগ এর কারণে ডিভাইসের উপরেই আরো বেশি তথ্যকে প্রোসেস করার প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল। এই এডজ কম্পিউটিং সেই কাজগুলো আরো সহজতর হয়ে পড়েছে (করে ফেলেছে)। সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে ডিভাইস থেকে সার্ভারে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, সেখানে এই এডজ কম্পিউটিং এ ব্যাপারটি আরো দ্রুত সম্পন্ন করে যেখানে প্রতিনিয়ত সার্ভারের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন নেই। একটি কম্পিউটিং বা কোন কাজ শেষ হয়ে যাবার পরে তথ্যকে পরিশেষে পাঠানো হয়। আর এই এডজ কম্পিউটিং এর ব্যবহার আমরা এই ২০২১ এ আরো বেশি করে দেখতে পাব।
২. ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক (5G data networks)
এটি ৫ম প্রজন্মের নতুন ধরনের একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক। ২০২০ থেকে অনেক দেশে এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও আমরা এই বছরে আরো এর বিস্তার দেখতে পাব। এই সংযোগে ল্যাটেন্সি খুব কম এবং ডাটা ট্রান্সফার দ্রুত হয়। এর ফলে আপনি 8K রেজোলিউশনের ভিডিওগুলো বাফার ছাড়াই আপনার মোবাইলে উপভোগ করতে পারবেন। 5G নেটওয়ার্কের ডাউনলোড স্পিড 4G নেটওয়ার্কের থেকে ১০০ গুন বেশি এবং ডাউনলোড স্পিড ১০০০ এমবিপিএস থেকে ১০ গিগাবাইট হতে পারে। আপনি যদি অনলাইন গেমার হোন তবে 5G তে আপনি দ্রুত গেম খেলতে পারবেন। তবে দ্রুততার থেকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যার সম্ভবানা কমে যাবে।
৩. কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বুঝি কোন যন্ত্রের নিজস্ব বুদ্ধি বা চিন্তা শক্তি করার ক্ষমতা। মানুষ ও পশুপাখির মধ্যে যে চিন্তা করার ক্ষমতা আমরা দেখতে পাই, কোন একটি যন্ত্রের সেই চিন্তা করার সক্ষমতা। এর ফলে যন্ত্রটি নিজেই নিজের মতন করে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। যদিও অনেকই এই প্রযুক্তিকে মানবজাতির জন্য হুমকি হিসাবে মনে করে তবে আমাদের মনে রাখতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক রুটিন কাজগুলোর ক্ষেত্রে মানুষের কাজগুলোকে সহজ করে তুলতে পারে। তবে মানুষের মতন ডাইনামিকভাবে সবকিছুই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে করা সম্ভব নয়। আমরা সামনের বছরগুলোতে আরো এর ব্যাপক প্রয়োগ দেখতে পাবো। বিশেষ করে স্বাস্থসেবা, ব্যাংকিং, খুচরা বিক্রি, ম্যানুফ্যাকচারিং এ আমরা আরো প্রয়োগ দেখতে পাব।
৪. ইন্টেলিজেন্ট অ্যাপস (Intelligent apps)
আমাদের মোবাইলের জগতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে যাকে আমরা বলছি বুদ্ধিমান অ্যাপস। যে সমস্ত মোবাইল অ্যাপসগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযু্ক্ত থাকছে সেগুলোকেই আমরা বলছি বুদ্ধিমান অ্যাপস। এই সমস্ত অ্যাপগুলো আপনার মোবইলের তথ্যগুলোকে ব্যবহার করে আরো ভালো সার্ভিস প্রদান করছে। দেখতে খবু সাধারণ মনে হলেও এই অ্যাপগুলোর পিছনে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। খুব সাধারণ সুউফট কিবোর্ড যা আমরা দ্রুত মোবাইলে টাইপ করতে ব্যবহার করি তা একটি ইন্টেলিজেন্ট অ্যাপস। কিংবা আপনি যখন কোন সাইটের সাপোর্ট বট এর সাথে সাপোর্ট সংক্রান্ত কোন কথোপথন করছেন, তখন কিন্তু কোন মানুষ এটির উত্তর দিচ্ছে না। একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার সমস্যাটির সম্ভাব্য উত্তর তার ডাটাবেস থেকে খোঁজ করে আপনাকে জানাচ্ছেন। কিংবা আপনি মোবাইলে যে সিরি বা গুগল এসিসটেন্ট এর সাথে কথা বলছেন তাও কিন্তু একটি বুদ্ধিমান অ্যাপস। এই বছরে আমরা আরো এই ধরনের স্মার্ট অ্যাপস দেখতে পাব।
৫. নিরাপদ ইন্টারনেট (Unhackable internet)
আমরা যে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি তা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ নয়। এটিকে নিরাপদ করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি যা শেষ পর্যন্ত একেবারেই নিশ্ছিদ্র নয়। হয়তোবা তা ক্রাক বা হ্যাক করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন কিন্তু একেবারেই অসম্ভব নয়। কিন্তু একেবারেই হ্যাক করা যাবে না এমন ইন্টারনেট তৈরী করছেন বিজ্ঞানীরা। কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন ইন্টারনেট তৈরীর কাজ হচ্ছে। সাধারণত আমরা যখন তথ্য আদান প্রদান করি তখন ইলেকট্রন ব্যবহার করি। কিন্তু কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে ইলেকট্রনের পরিবর্তে প্রোটন ব্যবহৃত হবে এবং এর মধ্যে তথ্যকে সংযুক্ত করে প্রেরণ করা হবে যা হ্যাক করা যাবে না। গত কয়েকবছর ধরে পরীক্ষাগারে এই ধরনের ইন্টারনেট তৈরী হলেও এই বছরে আমরা এই নতুন ধরনের নিরাপদ ইন্টারনেটের বানিজ্যিক প্রয়োগ দেখতে পাবো।
৬. ডিজিটাল হেলথকেয়ার (Digital HealthCare)
আমরা কোভিডের কারণে দেখতে পেয়েছি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্য সেবাই ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রযুক্তিগুলো হলো, টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল মেডিসিন, ভার্চুয়াল ডাক্তার, ভার্চুয়াল রোগী ইত্যাদি। সংক্রামন ও নিরাপত্তার ভয় আছে এবং পরিবহন করে যাওয়া কঠিন, সেই ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি কিভাবে এই ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো স্বাস্থ্যসেবাকে আমাদের ঘরে পৌছে দেয়। এই বছরে আমরা এর আরো প্রয়োগ দেখতে পাব এবং শুধু মাত্র জরুরী প্রয়োজনেই নয়, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার মধ্যেই এটি জায়গা করে নিবে। এগুলো ছাড়াও অনলাইন ভিত্তিক কাজ ও শিক্ষার প্রসারের কারণে আরো নতুন নতুন প্রযুক্তি ও প্লাটফর্ম এইবছর আমরা দেখতে পাবো বলে আশা করি।
তথ্যসূত্র:
https://www.computer.org/publications/tech-news/research/digital-health-five-things-you-should-know
https://www.delawareconsulting.com/en-us/solutions/intelligent-apps
https://www.investopedia.com/terms/a/artificial-intelligence-ai.asp
অনেক সুন্দর আর্টিকেল,
nice
Greetings ♥♪♥ Thanks
Oww..nice