কিভাবে কাজ করে?

মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে

Share
Share

বর্তমানে যে ইলেকট্রনিক পণ্যটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আলোড়িত করছে তা নি:সন্দেহে “মোবাইল ফোন”, আবার কেউ কেউ বলে “সেলুলার ফোন”৷ কিন্তু কিভাবেই বা কাজ করে এই ফোন? সাধারণ ফোন থেকে এর পার্থক্য কি? মোবাইল ফোন এর কর্মপদ্ধতি সাধারণভাবে আপনাদের কাছে আজ তুলে ধরবো৷

প্রথমেই বলে নিই, মোবাইল ফোন কিন্তু একটি “রোডিও”৷ প্রথমদিকে মোবাইল সাধারণ ফোনের মত কাজ করলেও বর্তমানে এর ব্যাবহার অনেক বিস্তার হচ্ছে৷ নিম্নে তার কিছু ব্যাবহার
উল্লেখ করা হল –
১. ফোন নং ও ঠিকানা সংরক্ষণ করে
২. ক্যালেন্ডার ও To-do লিস্ট রাখে
৩. এপয়েন্টমেন্ট ও তার এলার্ম রাখে
৪. ক্যালকুলেটর
৫. ইমেইল এর সুবিধা
৬. ওয়েব পেজ দেখবার সুবিধা
৭. সাধারণ গেম
৮. জিপিএস হিসাবেও কাজ করে, ফলে আপনি কোথায় আছেন
তার ম্যাপও দেখতে পারবেন৷
৯. ক্যামেরা: অনেক মোবাইল ফোনে আপনি ডিজিটাল ক্যামেরা
দিয়ে ছবি তুলে তা অন্যকে মেইলে পাঠাতে পারবেন৷


এছাড়া বাজারে আরো সুযোগ সুবিধা সম্বলিত মোবাইল ফোন বাজারে আসছে৷

প্রাথমিক কথা: মোবাইল ফোন ঠিক কবে থেকে শুরু হল? তা ঠিক হিসাব করে বলা মুশকিল৷ তবে প্রথম যে দুটি টেকনলজি এর পূর্বপুরুষ তা হল রোডিও ও টেলিফোন৷ এই দুটির সংমিশ্রন ও আধুনিক রুপই হল আজকের মোবাইল ফোন৷ টেলিফোন আবিষ্কার করেন গ্রাহাম বেল ১৮৭৬ সনে এবং এর ১৮ বছর পরে ১৮৯৪ সনে মার্কনি রেডিও আবিষ্কার করেন৷

মোবাইল ফোন এর আগে যারা মোবাইল কমিউনিকেশন এর জন্য গাড়িতে রেডিও ফোন অনেকে ব্যাবহার করতো৷ কিন্তু এটির সাইজ অনেক বড় হওয়াতে সহজে হাতে করে ঘুরে বেড়ান যেতনা৷ আর সাধারণত তা ২৫ টি মাত্র চ্যানেলের মাধ্যমে সেন্ট্রাল এন্ট্যানে এর সাথে যোগাযোগ করতো৷ তার মানে, রেডিও ফোন এর ট্রান্সমিশন ক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ মাইলের মত হতে হত৷ আর চ্যানেল সংখ্যা
কম হওয়ার কারণে এক সাথে অনেকে ব্যবহার করতে পারতোনা৷ এবার দেখা যাক বর্তমান মোবাইল ফোন কিভাবে কাজ করে৷ বর্তমানে একটি শহর বা যায়গাকে মোবাইল কম্পানি অনেকগুলি সেল (Cell) এ ভাগ করে নেয়৷ সাধারণত প্রতিটি সেল ১০ বর্গমাইলের সমান ও ষষ্ঠভূজ হয়ে থাকে আর প্রতিটি সেলে একটি বেস ষ্টেশন থাকে৷ আর প্রতিটি সেলে ৮০০ টি Frequency তে কথা বলা যায়৷ যদিও মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য একটি শহরে অনেকগুলি টাওয়ার প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে এর ব্যাবহারকারীর সংখ্যা খুব বেশী হবার কারণে এর খরচ কম হয়ে যায় ও ব্যবসায়ীক ভাবে
সফল হয়৷ প্রতিটি শহরে একটি সেন্ট্রাল অফিস থাকে যা বেস ষ্টেশন বা টাওয়ার গুলির সাথে যোগাযোগ রাখে৷ এই সেন্ট্রাল অফিসগুলিকে Mobile Telephone Switching Office (MTSO) বলে৷ সেল মোবাইল ফোন ও বেস ষ্টেশন Low powere transmissins ব্যবহার করে৷ ফলে মোবইল ফোন অল্পক্ষমতা সম্পনড়ব ব্যাটারি দিয়ে চলতে পারে, যার ফলেই আজকের মোবাইল ফোন এত ছোট আকার হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরো ছোট হবে৷


যখন আমরা মোবাইল অন করি, তখন এটি কন্ট্রোল চ্যানেলের মাধ্যমে SID (System Indentification Code) গ্রহণ করে এবং তা মোবাইল ফোনের ভিতরের এর সাথে মিলিয়ে দেখে৷ এছাড়া এটি MTSO এর সাথেও যোগাযোগ রাখে৷ সেন্ট্রাল অফিস মোবাইল ফোনের অবস্থান একটি ডাটাবেস এ রাখে৷ অর্থাত্‍ আপনি শহরের ফিতরে কখন কোন সেলে থাকছেন তা সেন্ট্রাল অফিস এর ডাটাবেসে থাকে৷ যখনই কেউ আপনাকে ফোন করে, তখন এই সেন্ট্রাল অফিস তার ডাটাবেস থেকে বাহির করে আপনি কোন টাওয়ারের কাছাকাছি আছেন, এবং সেই টাওয়ার থেকে আপনার মোবাইলের ফ্রিকিয়েন্সিতে যোগাযোগ করে দুইজনের সাথে যোগাযোগ করে দেয়৷ এবং আপনি কথা বলতে পারেন৷

মোবাইল ফোনের আরেকটি বড় সুবিধা হল আপনি গাড়িতে কিংবা অন্য কিছুতে চলমান থাকলেও কথা বলতে পারবেন৷ আপনি যখন কথা বলতে বলতে একটি সেল থেকে অন্য একটি সেলের দিকে এগুতে থাকেন, তখন বর্তমানে ব্যাবহার করা টাওয়ারটি থেকে দূরত্ব বেড়ে যাবার কারণে অন্য টাওয়ারটির সাথে সংযোগ স্থাপন করে, এর ফলে আপনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে গেলেও
নির্বিঘেড়ব আপনার কথোপথন চালিয়ে যেতে পারেন৷


মোবাইল দেখতে ছোট হলেও এতে মুহুর্তের মধ্যে এত কিছু করে ফেলতে পারে কেননা এর ভিতরে DSP(Digital Signal Processor) এর কারণেই আজকের মোবাইল এত স্মার্ট হয়েছে!

 

ডুপ্লেক্স চ্যানেল (Duplex channel) কি?

মোবাইল ফোন ডুপ্লেক্স চ্যানেল (Duplex channel) ব্যাবহার করে৷ আপনি হয়তোবা ওয়াকিটকি যা পুলিশ সার্জেন্টরা ব্যাবহার করে৷ এই ওয়াকিটকি সিঙ্গেল চ্যানেল ব্যাবহার করে৷ যার ফলে শুধু মাত্র কথা বলা কিংবা শোনা সম্ভব৷ এক সাথে দুইজনেই কথা বলা ও শোন সম্ভব নয়৷ যেমন ওয়াকিটকি তে সার্জেন্টরা কথা বলা শেষ করে ওভার শব্দটি বলে৷ তা শুনে অপরপক্ষ তখন কথা বলে৷ কিন্তু

মোবাইল ফোনে ডুপে-ক্স চ্যানেল ব্যাবহার হবার কারণে, আপনি ফোনের মতই এক সাথে কথা বলতে ও শুনতে পারেন৷


GSM কি?

জিএসএম একটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড যা মূলত ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা ও অষ্ট্রেলিয়াতে বহুল পরিমানে ব্যাবহৃত হয়৷ বাংলাদেশে এই জিএসএম এর প্রচলন খুব বেশী৷ গ্রামীণ ফোনও এই জিএসএম ব্যাবহার করে৷ জিএসএম ইউরোপ ও এশিয়াতে ৯০০ মেগাহার্জ থেকে ১৮০০ মেগাহার্জ এ চলে এবং আমেরিকাতে ১৯০০ মেগাহার্জ এ চলে৷ জিএসএম ফোন কিনে আপনি বাংলাদেশে ব্যবহার করতে হলে আপনাকে শুধু সিম কার্ড SIM (Subscriber indenification module) কিনতে হবে৷ এই সিম কার্ড মূলত ছোট একটা চিপ এর মত দেখতে, যার ভিতরে মোবাইল কম্পানির সংযোগ আইডি ও ব্যাবহারকরীর তথ্য সংরক্ষীত থাকে৷ ফলে যে
কোন সেটে আপনার সিম কার্ডটি ঢুকিয়ে নিয়ে তত্‍ক্ষণাত তা আপনার সেটা হিসাবে কাজ করবে৷


(অসমাপ্ত)

Share
Written by
ড. মশিউর রহমান -

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

7 Comments

  • আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগল । আর ও আশা করছি ।

  • লেখাটি আমার অনেক পুরান এবং অসম্ভব দূর্বল একটি লেখা। আরো একটু ইমপ্রুভ করা দরকার। বিশেষ করে 3G, IMS ইত্যাদি এর উপর লেখার ইচ্ছে রয়েছে।

  • এই প্রবন্ধে মোবাইল ফোন সমন্ধে বিশেষ ভাবে দুটি নতুন বিষয় জাবতে পারলাম। ধন্যবাদ প্রাবন্ধিক মশিউর রহমান ভাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কিভাবে কাজ করে?পরিবেশ ও পৃথিবী

সোলার সেল বা সৌরকোষ কীভাবে কাজ করে?

পরিচিতি সোলার সেল বা সৌরকোষের এর অপর একটি নাম হল, ফটোভোলটাইক সেল।...

কলামকিভাবে কাজ করে?

অগ্নি নির্বপক যন্ত্র সমন্ধে কিছু তথ্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন। [mc4wp_form...

কিভাবে কাজ করে?

নতুন পদ্ধতির ট্রাকিং : ইনডোর বেসড পজিশনিং সিস্টেম

ইংরেজিতে এটি Indoor Based Positioning System অথবা Location Based Service নামে পরিচিত।...

কম্পিউটার টিপসকিভাবে কাজ করে?

ই-মেইল সার্ভার সিস্টেম যেভাবে কাজ করে

লেখাটি অনলাইন থেকে সংগ্রীহিত। মূল লেখক মিলন মনি ইমেইল কি? ইলেকট্রনিক মেইলের...

কিভাবে কাজ করে?

সৌরশক্তির বিমান – Solar-Powered Aircraft

  Dedicated to: Prof. Khalilur Rahman, Department of Mathematics, Habibullah Bahar College,...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.