সাউন্ড ক্লাউডে অডিওটি শুনুন। https://soundcloud.com/mashiur-rahman-4/jogojit
অডিয়ো স্ক্রিপ্ট:
♥♪♥
সূচনা সংগীত: কথা: শফিকুল ইসলাম বাহার, সুর: শফিকুল ইসলাম বাহার ও এনামুল হক মুকুল; কণ্ঠ: এনামুল হক মুকুল।
গবেষণা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শফিকুল ইসলাম বাহার।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও নির্দেশনা: ড. শফিউল ইসলাম, বিজ্ঞানী.org
… … ….
… … ….
সমাপনী সংগীত: কথা: শফিকুল ইসলাম বাহার, সুর: শফিকুল ইসলাম বাহার ও এনামুল হক মুকুল; কণ্ঠ: এনামুল হক মুকুল।
গবেষণা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শফিকুল ইসলাম বাহার।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও নির্দেশনা: ড. শফিউল ইসলাম, বিজ্ঞানী.org
♥♪♥
অনুষ্ঠানটির ভিডিয়ো:
ভিডিয়োটিতে মো: জমির খান (গবেষক, বোস ইন্সটিটিউট) এর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম বাহার (বাংলাদেশ বেতার), শ্যামল মিত্র (ASSL Textile, ঢাকা, বাংলাদেশ), ড. নার্গিস আখতার বাণু (VOB, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া)।
♥♪♥
ভিডিয়ো স্ক্রিপ্ট:
সূচনা সংগীত: কথা: শফিকুল ইসলাম বাহার, সুর: শফিকুল ইসলাম বাহার ও এনামুল হক মুকুল; কণ্ঠ: এনামুল হক মুকুল।
গবেষণা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শফিকুল ইসলাম বাহার।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও নির্দেশনা: ড. শফিউল ইসলাম, বিজ্ঞানী.org
শফিকুল ইসলাম বাহার:
বৈজ্ঞানিক স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি একাধারে পদার্থবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিদ্যায় অসামান্য অবদান রেখে নিজের নাম শুধু বাঙালির ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও স্বর্ণাক্ষরে লিখে গিয়েছেন। ঢাকার অদূরে রাঢ়িখাল গ্রামে অবস্থিত স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পৈত্রিক ভিটা, যেখানে রয়েছে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু’র নামে একটি জাদুঘর। আজকে আমাদের সাথে উপস্থিত রয়েছেন একজন গবেষক, যিনি গবেষণা করেছেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসুকে নিয়ে। তিনি বই লিখেছেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসুকে নিয়ে যেখানে বইয়ের শিরোনাম ‘বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু নামটা সর্বজনীন।’ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আলাপের শুরুতেই আপনার পুরো পরিচয়টি জেনে নেই।
মোঃ জমির খান: আমার নাম মোঃ জমির খান। আমি জগদীশচন্দ্র বসু স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং উনার স্কুলেরই এখন আমি একজন কর্মকর্তা। বিশেষ করে উনার উপরে আমি আমার গবেষণা করছি। আমার নতুন প্রজন্মের কাছে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু কে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমার এই বইটি লেখা।
শফিকুল ইসলাম বাহার: কেন আপনার এই ভালোবাসাটা জন্মালো?
মোঃ জমির খান: আমি যখন এখানে ছাত্র ছিলাম এবং এখন যখন আমি এখানে কাজ করছি, আমার ইচ্ছা স্যার জগদীশচন্দ্র বসু কে ব্যাপকভাবে আবার নতুন যারা প্রজন্ম আছে তাদের মাঝখানে ছড়িয়ে দিতে এবং ওদের মাঝে থেকে নতুন একজন বিজ্ঞানীর সৃষ্টি হবে এটাই আমার চাওয়া।
শফিকুল ইসলাম বাহার: স্যার জগদীশচন্দ্র বসু জাদুঘরে আমরা কি কি জানতে পারবো এবং দেখতে পারবো এসব জেনে নেই মোঃ জমির সাহেবের কাছে থেকে।
মোঃ জমির খান: এখানে দেখার মত প্রত্নত্বাত্তিক কিছু ছবি সংগ্রহ করা রয়েছে এবং সেগুলো ডিসপ্লে করে রাখা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন শিল্পীর বিভিন্ন আঁকা ছবি দেখা যাবে এবং আমারও আঁকা কিছু ছবি রয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনি ব্যক্তিগতভাবে ছবি আঁকার পারদর্শী কীভাবে হলেন?
মোঃ জমির খান: ছোটবেলা থেকে আমি বিভিন্ন শিল্পীর ছবি আঁকা দেখে এসেছি এবং এগুলো থেকে আমি অনুপ্রেরণা পাই ছবি আঁকার প্রতি।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনি ছবি আঁকার জন্য কি কি সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন?
মোঃ জমির খান: ছবি আঁকার জন্য আমি মূলত যেসব জিনিস ফেলে দিতে হয় বা অব্যবহৃত সেগুলো ব্যবহার করেছি, যেমন: পাটের দড়ি দিয়ে তৈরি করেছি, ধান দিয়ে তৈরি করেছি, চাল দিয়ে তৈরি করেছি, হাঁসের ডিমের উপর ছবি এঁকেছি, মাটির প্লেটের উপর ছবি এঁকেছি। এভাবে যেসব জিনিস অব্যবহৃত সেগুলোই আমি কাজে লাগিয়েছি।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনি সংক্ষেপে বলবেন এখানে কি কি দেখার আছে?
মোঃ জমির খান: জগদীশচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর এবং মারা যান ২৩ নভেম্বর ১৯৩৭ সালে এবং উনাকে পোড়ানো হয় ২৪ নভেম্বর। জগদীশচন্দ্র বসুর বাবা ছিলেন তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং মায়ের নাম ছিল বামাসুন্দরী দেবী। এখানে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বাবা মায়ের ছবি দেখতে পাবেন।
শফিকুল ইসলাম বাহার: স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটা এবং আনুষঙ্গিক আরো অনেক কিছু যেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সব মিলিয়ে কি কি দেখার মত রয়েছে?
মোঃ জমির খান: এখানে আসলে মূলত স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি দেখতে পাবেন, পুকুরঘাট আছে, গাছপালা রয়েছে, সেই পুরাতন আমলে গাছ রয়েছে এবং পুরাতন আমলের বিরাট বড় জমিদার বাড়ি রয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বাহার: এখানে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর নামে একটি স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে, সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কত?
মোঃ জমির খান: এখানে স্কুল-কলেজ মিলিয়ে প্রায় ১১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আমরা একটু অভিযোগও শুনি, এই যে আশেপাশের পরিবেশের যে দৈন্যদশা দেখা যাচ্ছে এগুলো আরও উন্নত করার জন্য কি কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
মোঃ জমির খান: এগুলো নিয়ে অনেক কাগজে-কলমে এবং মুখে বলা হয় কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু করা হচ্ছে না।
শফিকুল ইসলাম বাহার: ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে যারা আছেন তারা কি করছেন?
মোঃ জমির খান: উনারা শুধু বলে যাই কিন্তু কোন কাজ করছেন না। উনাদের এগুলো নিয়ে বলা অনেক বছর হয়ে গেল কিন্তু কিছুই হচ্ছে না, শুধু বলা হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনার ভবিষ্যতের কি স্বপ্ন রয়েছে?
মোঃ জমির খান: আমি যদি সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কিছু সাহায্য পেতাম তাহলে আমি অনেক কিছু করতে পারবো। কারণ, অনুপ্রেরণা পেলে আমাদের দেশে ১৪ কোটি মানুষের মধ্যে অনেকেই হয়তো বৈজ্ঞানিক সৃষ্টি হবে, বিজ্ঞান পড়তে পারবে। এখন ম্যাক্সিমাম দেখতে গেলে শতকরা ৫ জন বিজ্ঞান পড়তে পারে। যে দেশে বিজ্ঞান চর্চা হয় না সে দেশের উন্নতি হয় না। আমাদের কেন দুর্দশা থাকে? আমরাও তো অনেককিছু সৃষ্টি করতে পারি, দেশকে অনেক কিছু দিতে পারি।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আমরা বই পড়ে যতটুকু জগদীশচন্দ্র বসু কে জেনেছি, তার বাইরেও তার কোন আবিষ্কার সম্পর্কে আপনার কোনো তথ্য জানা আছে?
মোঃ জমির খান: তথ্য মতে, উনি জীবিত অবস্থায় প্রায় ১৪ টি বই লিখেছেন। ইংরেজিতে, বাংলা টেক্সট বই লিখেছেন একটি। সেই বইগুলো যদি আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়তে পারতো, দেখতে পারতো, জানতে পারতো তাহলে অনেক বড় হতে পারতো। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে বৈজ্ঞানিক তৈরি হয় আমাদের দেশে হয় না। কারণ, তারা অনুপ্রেরণা পায় না।
শফিকুল ইসলাম বাহার: স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কি কি রয়েছে?
মোঃ জমির খান: স্যার জগদীশচন্দ্র বসু প্রায় ১০০ টি জিনিস আবিষ্কার করেছেন। রাডার, মোবাইল, সোলার তারপরে আরো অনেক কিছু আছে। আজকে যে চাঁদে যাচ্ছে এটার সূত্র স্যার জগদীশচন্দ্র বসু দিয়েছেন। কারণ চাঁদের ছবি গ্রহণ করা, অদৃশ্যকে দেখা একমাত্র রাডার দিয়ে সম্ভব। তারপর বিভিন্নভাবে মহাশূন্য নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে যায়। এটার মূল আমি মনে করি স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কে নিয়ে আমরা যত বেশি চর্চা করবো উনাকে বের করতে পারবো, উনাকে বের করতে পারলে নতুনদের মাঝে অনেক বৈজ্ঞানিক তৈরি হবে।
শফিকুল ইসলাম বাহার: এখানে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু যেভাবে ছড়িয়ে আছেন তাতে এটি একটি পর্যটন প্রধান এলাকা হতে পারতো, সেটার ব্যাপারে কি কোনো চিন্তাভাবনা আছে?
মোঃ জমির খান: শহর থেকে দূরে এই প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটানোর বিষয়টা খারাপ নয়। এখানে আছে ৫/৬ টি পুকুর সেখানে চাইলে সাঁতার কাটতে পারবে,মাছ দেখতে পারবে, ধরতে পারবে। লেখকরা এখানে এসে তাদের স্ক্রিপ্ট লিখতে পারবে আবার টিভির জন্য সিন নিতে পারবে। এইযে যান্ত্রিক যুগে আমরা যে এতটা ক্লান্ত অনুভব করি, এখানে আসলে ক্লান্তি দূর করা সম্ভব!
শফিকুল ইসলাম বাহার: আমরা অজানা জগদীশচন্দ্র বসু কে অনেকটাই জানলাম। হয়তো আরো বাকি রয়ে গেল কিন্তু আমরা বাকি থাকতে দিতে চাই না। অন্ধকার দূর করার জন্য আমরা আরও একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়ে যাব। আমাদের মনের প্রদীপ এবং সেই মনে যখন আমরা বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারবো, তখন আমরা অনেক আধুনিক হবো এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো।
আমরা ছোটোবেলা থেকে জেনে এসেছি যে বিজ্ঞানী মার্কনী রেডিও আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু এখন জানছি যে এটা প্রমাণিত হয়েছে, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও প্রথম আবিষ্কার করেন। এই জাদুঘরে কি এমন কোন প্রমাণ আছে যে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুই ছিলেন যিনি প্রথম রেডিও আবিষ্কার করেন?
মোঃ জমির খান: এই জাদুঘরে একটি ছবি রয়েছে যেটিতে বিশ্লেষণ করা আছে। অর্থাৎ রেডিওর মাঝখানে যে একটি ডাইওয়ার্ড আছে সেই যন্ত্রটির বিষয়ে। উনি যখন ইংল্যান্ডে যান ওখানে ব্রিটিশ কুলি যারা আছেন তারা যন্ত্রটির বোঝা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। তখন সম্ভবত ১৮৯৭ সালে উনি রয়েল সোসাইটি তে এক্সপেরিমেন্ট করেন যন্ত্রটি কাঁচের তৈরি থাকার কারণে উনি যখন স্টেজে দাঁড়ান তখন বুঝতে পারেন মেশিন টি আর চলছে না। সেই মুহূর্তে তিনি সেটি খুলে ঠিক করতে চান। তখন মার্কনির ৩ জন শিষ্য ছিলেন, তারা বলেন আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারি। এই কথা বলে সেই যন্ত্রটির হাতের লেখা নোটটি তারা চুরি করে ফেলে। স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর যন্ত্রটি ছিলো কাচের একটি লম্বা নল যার মধ্যে পারদ এবং লোহা ছিলো। মার্কনির লোক সেটিকে তৈরি করে U আকারে। এটিই পার্থক্য ছিল শুধু। এদিকে বলে Crystal Lad। ক্রিস্টালের কাজ হলো কোনো তরঙ্গ বা কথা কে সজা নিয়ে যায় বিদ্যুতে, বিদ্যুৎ থেকে আবার কথায় রূপান্তরিত হয়। আপনারা যারা মোবাইল চার্জার ব্যবহার করেন, Adapter এর মধ্যে সেই crystal lad থাকে।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনি যে তথ্যটি আমাদের দিলেন, এটির সত্যতা কীভাবে প্রমান করবেন?
মোঃ জমির খান: এটা স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর যে এক্সপেরিমেন্ট করা আছে বা লেখা আছে বা তার যে চিত্র আঁকা আছে এর থেকে বোঝা যায়। এবং এটাকে আমেরিকাতে যে রেডিও ইনস্টিটিউশন আছে সেখানে এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে, মার্কনী এবং জগদীশচন্দ্র বসুর মধ্যে যে কার কতটুকু পার্থক্য রয়েছে। রয়েল সোসাইটি এর যে নথিপত্র রয়েছে তাতে দেখা যায় জগদীশচন্দ্র বসু প্রথম রেডিও আবিষ্কার করেন।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনার ছোটো থেকে বড় হওয়ার পর জীবনের এই পর্যায়ে এসে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতি যে পরিমাণ ভালোবাসা রয়েছে সেই ভালোবাসা থেকে অন্যদের জন্য কি বলবেন?
মোঃ জমির খান: আমি আশা করবো আমাদের দেশে যত নবীন বা প্রবীণরা আছেন প্রত্যেকে অনুপ্রেরণা দিবেন যেন ছোটোদের মাঝখান থেকে আরো বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র বসু তৈরি হয়। এতে সমাজ এবং জাতি উভয়ই অনেক কিছু পাবে, এটাই আমি কামনা করি।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনার গবেষণা সম্পর্কে একটু বলুন?
মোঃ জমির খান: আমার গবেষণা আমি যে বইটি লিখেছি বইটির নাম ‘জগদীশচন্দ্র বসু একটি সর্বজনীন নাম।’ এটাকে দ্বিতীয় মূদ্রণ করে আরও বহু তথ্য সংগ্রহ করেছি এটিকে আবার পুনর্মুদ্রণ করবো। আর আমি দেখতে চাই যে আমার হাতেও যেন কিছু বৈজ্ঞানিক জগদীশচন্দ্র বসু তৈরি হয় এটাই আমার কামনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক বৈজ্ঞানিক তৈরি হচ্ছে, আমাদের দেশে হবে না কেন? এটাই আমার প্রশ্ন। সরকারি-বেসরকারিভাবে এটিকে যদি আরো সাহায্য সহযোগিতা করা যেতো তাহলে অনেক কিছু সহজে করতে পারতাম কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের দেশে কেউ এগিয়ে আসে না। শুধু কথাই বলে, কাজ করেন না। আমি আশা করি, আরো যেনো এরকম বহু জগদীশ আমাদের দেশে তৈরি হয়।আমাদের দেশে এই দারিদ্রতা দূর হয়ে যাক। আমি চাই, আমাদের দেশে ডঃ ইউনূসের মতো বহু ইউনুস যেন তৈরি হয়। যারা দেশবাসী আছেন তারা আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করলে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবো।
শফিকুল ইসলাম বাহার: আপনার সকল ইচ্ছে পূরণ হোক এবং আপনার ইচ্ছের আলো আমাদের জন্য ভালোয় পরিণত হোক। আরো সমৃদ্ধ হোক দেশ ও জাতি এবং আমরা সবাই।
♥♪♥
নার্গিস আখতার বাণু: আপনি স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউট স্কুল এন্ড কলেজ এর সাথে কত বছর যাবত জড়িত?
মোঃ জমির খান: ১৯৬০ সালের দিকে আমি এখানে ছাত্র ছিলাম এরপর বিভিন্ন জায়গায় চলে যায় এবং পরে ১৯৯৩ সালে ইনস্টিটিউটের সাথে যোগদান করি।
নার্গিস আখতার বাণু: আপনি কি এই এলাকার মানুষ?
মোঃ জমির খান: জ্বি,আমি রাঢ়িখাল ইউনিয়ন এর ছেলে।
নার্গিস আখতার বাণু: আপনার পরিবার কোথায় থাকে?
মোঃ জমির খান: তারা সকলেই দেশে থাকে, ছেলেরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করে।
নার্গিস আখতার বাণু: আপনি এই ইনস্টিটিউটের সাথে কিভাবে জড়িত হলেন?
মোঃ জমির খান: আমি পড়ালেখা শেষ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করতাম তারপর এখানে এসে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউটে যোগদান করি।
নার্গিস আখতার বাণু: এখানে কি জিনিস আছে যেটি আপনাকে আগ্রহী করে তুলেছিলো?
মোঃ জমির খান: আমি যখন চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম তখন মানুষের মুখে শুনতে পেতাম জগদীশচন্দ্র বসু অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি। তখন তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ হলো। ছোটোবেলায় আমি এই স্কুলের ছাত্র ছিলাম তারপরে মনে ইচ্ছা হলো জানার যে, এই ব্যক্তি টা কেমন ছিলেন? মানব সভ্যতার জন্য তিনি কি কি করেছেন? আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তার অবদান কতটা?
নার্গিস আখতার বাণু: মূলত আপনার মনে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। আপনি কি ওনার আত্মীয়স্বজনকে দেখেছেন?
মোঃ জমির খান: স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু আত্মীয়স্বজনদের আমি দেখেছি। উনার ভাগ্নে ছিল হ্যানবুস। তার নাতি নাতনীদের দেখেছি। তখন থেকে আমার একটা ইচ্ছে জাগলো আরো বেশি জানার। আমি জানলে অপরকে জানাতে পারবো, শিখতে ও শিখাতে পারবো।
নার্গিস আখতার বাণু: আপনার যে উনার সম্পর্কের জানার এতো আগ্রহ, এই জানার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কী করেছেন?
মোঃ জমির খান: এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কে নিয়ে গবেষণা করেছি, বই লিখেছে, ছবি এঁকেছি এবং বিভিন্ন জিনিসের মাধ্যমে উনাকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি।
নার্গিস আখতার বাণু: ইনস্টিটিউটের ছোট্ট একটি ভাঙা রুম রয়েছে যেটি স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পৈত্রিক সম্পদ এর উদাহরণ হিসেবে রয়েছে। এই ছোট্ট রুমে কি কি কালেকশন রয়েছে?
মোঃ জমির খান: এখানে কলকাতা থেকে বড় বড় ছবি সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলো কালেকশন করা হয়, তৈরি করা হয়। এছাড়া আমিও কিছু তৈরি ছবি তৈরি করেছি।
নার্গিস আখতার বাণু: আপনি যে বই লিখেছেন, সেই বইয়ের তথ্যগুলো কোথায় থেকে পেয়েছেন?
মোঃ জমির খান: এই তথ্যগুলো ৯০% কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। বাংলাদেশে কোথাও তথ্য পাওয়া যায় না। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে তথ্যগুলো কালেকশন করা হয়েছে।
নার্গিস আখতার বাণু: আপনি নিজের উদ্যোগেই এই সব করেছেন?
মোঃ জমির খান: জ্বি, আমি এইসব তথ্য সংগ্রহ নিজের উদ্যোগে করেছি।
নার্গিস আখতার বাণু: এই বইটি যে আপনি বের করেছেন, এটিতে কেউ কি আপনাকে আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়েছে?
মোঃ জমির খান: আর্থিক সহায়তা খুব কম বরং তিরস্কার বেশি পেয়েছি। আপনাদের মত যারা বাইরে থেকে আসে তারা আমাকে অনুপ্রেরণা বেশি দেয়। তাই আপনাদের অনুপ্রেরণাতেই আমি এসব করতে পেরেছি।
নার্গিস আখতার বাণু: এই তিরস্কার বলতে কি বুঝিয়েছেন?
মোঃ জমির খান: তিরস্কার বললাম কারণ অনেকের মনে এরকম প্রশ্ন জাগে যে এই কাজ করে তো কোনো লাভ নাই, কেন আমি করছি? এটাতে তো আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় না। এই জন্য আমি অনেকের কাছে কথা শুনেছি।
নার্গিস আখতার বাণু: এরকম বিষয় হয়েছে যে, নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত অবস্থা। কিন্তু এটা বললেও ভুল না যে আপনার মনে যা এসেছে আপনি সেটাই করেছেন। এইযে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু এত বড় বিজ্ঞানী ছিলেন, আমরা এটাও জানি যে বেতার প্রথম আবিষ্কার তিনি করেছেন। কিন্তু এই বিষয়টা আমাদের বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক মানুষই জানে না। এই বিষয়টাই আপনার কোন ক্ষোভ আছে?
মোঃ জমির খান: তা তো অবশ্যই আছে। আমাদের দেশ ছাড়া সব দেশে মানুষ সাহায্য করে তাদের দেশের বিজ্ঞানীদের। কিন্তু আমাদের দেশে বিজ্ঞানীদের কেন গুরুত্ব দেয়া হয় না? যেমন, কলমটা কোথায় কীভাবে তৈরি হলো এটি আমরা জানতে চাই না কিন্তু কলমকে শুধু উপভোগ করতে চাই। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে প্রত্যেকটা লোক যদি বিজ্ঞানকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারতো, তবে দেশ উন্নত হতো। পরাধীন সময়েও এদেশের বাংলার লোক স্বাধীনতার জন্য অনেক কিছু করেছে। তবে আমরা এখন বিজ্ঞান সাধনা করতে পারব না কেন? এটাই আমার প্রশ্ন।
নার্গিস আখতার বাণু: এই ইনস্টিটিউশন যেটি স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি ছিল একসময়ে। এটা যে এখন ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে, এটি কি আরও সুন্দর করে মেরামত করা যেত না?
মোঃ জমির খান: হ্যাঁ যেত। একটু আর্থিকভাবে এগিয়ে আসলে, একটু সাহায্য করলে আমরা অনেক কাজ করতে পারবো।
নার্গিস আখতার বাণু: এতে জাতি কিভাবে উপকৃত হবে?
মোঃ জমির খান: এতে দেশ উন্নত হবে, জাতি উন্নত হবে। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো আমরা বাঙালি এবং এই বাংলায় বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম।
নার্গিস আখতার বাণু: আমরা যে অন্যান্য দেশের থেকে পিছিয়ে আছি তার পিছনে প্রধান কারণ কী?
মোঃ জমির খান: আমাদের পিছিয়ে থাকার প্রধান কারন হচ্ছে বিজ্ঞান চর্চা না করা। বিজ্ঞান চর্চা করতে প্রথমে ইংরেজি জানতে হবে। ইংরেজিতে কথা বলতে জানতে হবে। ইংরেজিতে আমরা কথা বলতে জানি না, ইংরেজি বুঝতে পারি না। রেডিও-টিভিতে ইংরেজি কথা হলে আমরা চ্যানেল চেঞ্জ করে দিই। বাইরের দেশের বিজ্ঞান চর্চা সম্পর্কে আমরা খবর রাখি না। পৃথিবীর সব দেশেই বিজ্ঞান ক্লাব রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে বিজ্ঞানের কোন চর্চা নেই।
নার্গিস আখতার বাণু: আমরা আশা করি আপনি আপনার সকল স্বপ্ন পূরণ করুন এবং দেশ ও জাতির জন্য আপনি যা করছেন সেটিতে এগিয়ে যান। বিজ্ঞান চর্চা আমাদের দেশ ও জাতিকে উন্নত করতে পারে এবং এই চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর মতো আরো অনেক বিজ্ঞানী তৈরি হোক এই বাংলার মাটিতে। বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে মানুষ অবাস্তব ধারণা থেকে বিজ্ঞানসম্মত বাস্তব ধারণায় উপনীত হতে পারে। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো।
Stay tuned …. More to come ….
বিশ্ববরেণ্য বাঙালী বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু (৩০ নভেম্বর ১৮৫৮ – ২৩ নভেম্বর ১৯৩৭) এর সৃজনশীল কর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন এইভাবে- “তাঁর প্রতিটি আবিষ্কারের জন্য হওয়া উচিত এক একটি বিজয়স্তম্ভ।” – আলবার্ট আইনস্টাইন (১৪ মার্চ ১৮৭৯ – ১৮ এপ্রিল ১৯৫৫) [সংগ্রহ: শফিউল ইসলাম]
Sir J C Bose Science Museum, 2006, শ্রীনগর, বিক্রমপুর :: Photo by শফিউল ইসলাম
Featured Insights:
Biganacharya Jagadish Chandra Bose
প্রথম আলো – জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলি
আমাদের বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু – Prothom Alo Blog
আবিষ্কারের ইতিকথা: উদ্ভিদের প্রাণ
জগদীশ চন্দ্র বসু – উইকিপিডিয়া
লেখক:জগদীশ চন্দ্র বসু – উইকিসংকলন
biggani.com – বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু
ছোটদের বিজ্ঞান মনীষা: বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু | টেকনোলজি টুডে
বিজ্ঞান স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু | টেকনোলজি টুডে
জগদীশ চন্দ্র বসু
আমাদের বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু – ভাবসাধক এর বাংলা ব্লগ । bangla …
বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু | Techtunes | টেকটিউনস
জগদীশ চন্দ্র বসু : মুন্সিগঞ্জের খবর
গলাচিপায় জগদীশ চন্দ্র বসু ও সত্যেন বোস স্মারক বক্তৃতামালা শুরু – প্রথম …
খবর-দার ব্লগ: আত্মনিবেদিত জগদীশ চন্দ্রের পথে
ছোটদের বিজ্ঞান মনীষা: বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু-Blogging …
জগদীশ চন্দ্র বসু – The Daily Ittefaq – January 28, 2011
জগদীশ চন্দ্র বসু | Dhaka Division
জগদীশ বসু খুবই ভাল মানুষ ছিলেন… – Kidz – bdnews24.com
বিষয়শ্রেণী:জগদীশ চন্দ্র বসু – উইকিসংকলন
জয়তু স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু । তোমার স্মৃতি ও সৃষ্টির প্রতি জানাই রেড …
শফিউল ইসলাম
ইমেইল:
[email protected] :: ওয়েবঃ textek.weebly.com :: Canada :: www.linkedin.com/in/shafiul2009
বিক্রমপুরের রাড়িখাল গ্রামে আমার দুইজন প্রিয় মানুষ জন্মেছেন, স্যার জগদিশচন্দ্র বসু এবং অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।
স্যার জগদিশচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে।
বিক্রমপুরের রাড়িখাল গ্রামে আমার দুইজন প্রিয় মানুষ জন্মেছেন, স্যার জগদিশচন্দ্র বসু এবং অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।
স্যার জগদিশচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে।
আসিফ মহিউদ্দীন, আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা….