আমি আমার কম্পিউটার লাইফের শুরু থেকে উইন্ডোজ ব্যবহার করি।যখন প্রথম লিনাক্সের নাম শুনলাম অবাক হলাম।কি এই জিনিস?কেমন হবে?এই সব সাত সতেরো ভাবছিলাম।পরে নতুন এই জিনিস টেষ্ট করার সাহস হয় নাই। ২০১১ তে এসে এক দিন সাহস করে উবুন্টু ৯.১০ কিনে আনলাম।মনে ভয় ছিলো যে লিনাক্স ইন্সটল দিতে নাকি হার্ড ড্রাইভ এ সমস্যা হয়।অনেক ভয়ে ভয়ে বুট করলাম।গ্রাফিক্যাল ওয়ার্ক দেখে অবাক হলাম।জিনিস তো দেখি খারাপ না ।যাই হোক আল্লাহর নাম নিয়ে দিলাম ইন্সটল।ইন্সটলেশন অপশনে গিয়ে দেখি একটা মজার জিনিস আছে।এটাকে নাকি উইন্ডোজ এর সাথে একটা এ্যাপ্লিকেশন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।আমি তো খুশি হয়ে গেলাম।যাক হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন দিতে হবে না।দিলাম উইন্ডোজ এর সাথে এ্যাপ্লিকেশন হিসাবে ইন্সটল।এবং আমি অরীত্র আহমেদ উবুন্টুর প্রেমে পড়ে গেলাম।
কেন?
ভালো প্রশ্ন।আমার উইন্ডোজ লাইফের সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস হলো ভাইরাস এবং এর জন্য কখনো টাকা খরচ করে এন্টিভাইরাস এবং কখনো নেট প্যাকেজ খরচ করে এন্টিভাইরাস নামানো। মাঝে মাঝে গোটা উইন্ডোজ রি সেটাপ দেয়া।এবং নোড প্রোগ্রাম গুলো যেগুলো নেট থেকে ষ্ট্রিম ডাউনলোড এর মাধ্যমে সেটাপ দেয়া হয় সেগুলোর হারিয়ে যাওয়া(স্কাইপ,গুগল ক্রোম,ফেসবুক ভিডিও চ্যাট প্লাগিন)।তবে আসেন খুশির খবর শুনি
- লিনাক্সের যেকোন ডিষ্ট্রো(ডিষ্ট্রিবিউশন) ব্যবহারের সময় আপনাকে এইসব ভাইরাস নিয়ে মোটেও চিন্তা করতে হবে না।বছর শেষে এ্যান্টিভাইরাস বাবদ ২০০০-২৫০০ টাকা লাভ।
ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন ১৯৮৬ সালের প্রকাশিত সংজ্ঞা অনুযায়ী
ফ্রি সফটওয়্যার হচ্ছে একটি স্বাধীনতার বিষয়, মূল্যের বিষয় নয়। প্রথমত, সফটওয়্যারটির কপি পুনর্বিতরণ করার স্বাধীনতা, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবরা এটি ব্যবহার করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, প্রোগ্রামটির যেকোনো ধরনের পরিবর্তন করার স্বাধীনতা, যেন সফটওয়্যারটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, আর এর জন্য অবশ্যই সোর্স কোডে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
- আপনি জেনে অনেক খুশি হবে যে উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী লিনাক্স কারনেল এবং এর সকল ডিষ্ট্রিবিউশন(ওপেন জিপিএল) একদম ফ্রী।তাই আপনাকে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে উইন্ডোজ এর অরিজিনাল কপি সংগ্রহ করতে হবে না।অবশ্য আপনার যদি টাকা থাকে কিংবা বাধ্য হন তাহলে ভিন্ন কথা।
সেটাপ তো দিলেন।এখন কথা হলো কাজের জন্য তো হাজার টা সফট ওয়্যার দরকার।এতো সফট ওয়্যার খুঁজতে হবে।আপনি হয়তো এতোক্ষন এ গুগল এর হোম পেজ ওপেন ও করে ফেলেছেন।দাঁড়ান দাঁড়ান।এতো কষ্ট করার দরকার নাই।যেহেতু আমি উবুন্টূ নিয়ে কথা বলছি তাই উবুন্টুর আলোকেই সব বলবো।
উবুন্টু আপনাকে দিচ্ছে সিন্যাপ্টিক সফটওয়্যার রিপোজিটরী।যেখানে আপনি ভাবে অসংখ্য সফটওয়্যার।একদম……………ফ্রী।চোখে অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে আছেন?অবাক হবেন না।
দক্ষিন আফ্রিকার একটি প্রচলিত প্রবাদ উবুন্টু থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। এই শব্দের অর্থ হল “অপরের জন্য মানবতা”।এবং উবুন্টূর নির্মাতা প্রতিষ্টান ক্যানোনিক্যাল এবং ডেভোলপার গ্রুপ উবুন্টূ ফাউন্ডেশন এই উক্তি কে সামনে নিয়ে মাঠে নেমেছিল ২০ অক্টোবর, ২০০৪ এ।
- আপনি যেহেতু বাংলা ব্লগে এ আসেন তাই এখনি তাড়াহুড়ো করে বাংলা দেখার জন্য সফটওয়্যার খোজার জন্য মাঠে নামবেন।ভাই,ক্ষ্রান্ত দেন।উবুন্টূতে ব্যবহার করা হয়েছে ইউনিকোড এনকোডিং,তাই কোন চিন্তা ছাড়াই বাংলা দেখতে পাবেন।
লিনাক্স কারনেল এ তৈরী ডেবিয়ান অপারেটিং সিষ্টেম এর ওপরে তৈরী উবুন্টূ।যদি আজকের বিশ্বের যে কোন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ কে জিজ্ঞেস করেন মাইক্রোসফট এর দূঃসপ্ন কাকে বলা হয়?উবুন্টুর নাম আসবে।
- এখন আপনি ভাববেন গ্রাফিক্সের কাজের জন্য তো কিছু একটা দরকার।ফটোশপের তো আর উবুন্টু ভার্শন নেই।তাহলে?তাহলে সিন্যাপ্টিক সফটওয়্যার রিপোজিটরীতে গিয়ে গিম্প সেটাপ দিন।ফটোশপের চেয়ে কোন অংশে কম নয় এই ফ্রী সফট ওয়্যার টি।বরং অনেক বেশি হালকা।
উবুন্টুর প্রতিটা ভার্শন এর একটা নিজস্ব নাম থাকে।বর্তমান ভার্শন ১১.০৪ এর নামে ন্যাটি।
- কিন্তু উবুন্টু চালাতে গিয়ে যদি কোন সমস্যা ফেস করি?উইন্ডোজ এ তো কিছু হলে পাশের বাড়ির রহিম করিম রে বললেই হেল্প পাই।হুম,চিন্তার বিষয়।সমস্যা নাই।চিন্তা করে নিজের চূল কমাবেন না।উবুন্তু এই ক্ষেত্রে উইন্ডোজ এর চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে।আছে উবুন্টু ফাউন্ডেশন এবং উবুন্টু ফোরাম ।আছে উবুন্টু গিকস।আপনি শুধু সমস্যা টা লিখে দিন।হাজার হাজার উবুন্টু বিশেষজ্ঞ ঝাপিয়ে পড়বে আপনার সাহায্যে।একদম ফ্রীতে।কয়েকটা হেল্প সাইটঃ ubuntuforums.org www.ubuntu.com/community ubuntugeek.com/forum/
আরো আছে।উবুন্টুর প্রতিটা ভার্শন এর জন্য উবুন্টূ ফাউন্ডেশন বাজারে আসার পরের ১৮ মাস ইউজার দের হেল্প সাপোর্ট দেন।
- তো ভাই আমি তো গান শুনি।ড্রাইভার কোথায় পাবো অডিওর জন্য?কোথাও যেতে হবে না। আপনার কাজের যাবতীয় ড্রাইভার উবুন্টুর ভেতরেই দেয়া আছে।সেটাপ দিন আর ফূল ভলিয়মে গান শুনুন[অবশ্যই কাউকে বিরক্ত করে নয়]
এটি উবুন্টুর একটা অনন্য সৃষ্টী।আপনার কোন ড্রাইভার দরকার নেই।দরকার নেই কোণ মাদারবোর্ড এর সাথে আসা ড্রাইভার ডিস্ক।সাধারন অডিও ড্রাইভার থেকে শুরু করে,ব্লুটুথ,গ্রাফিক্স পর্যন্ত সব আছে উবুন্টুর ভেতরে।চালিয়ে যান।আরো অনেক কিছু আসা বাকিরে ভাই।
- এতো প্যাঁচাল তো পারলেন?কিন্তু আমার অফিসের কাজের কি হবে?চিন্তা নাই।আছে লিব্রে অফিস।উবুন্টু ১১.০৪থেকে পরে সব গুলি ভার্শন এ আছে লিব্রে অফিস।আগের গুলোতে আছে ওপেন অফিস।এটাতে মাইক্রোসফট অফিসের যাবতীয় কাজ করার পাশাপাশি সরাসরি পিডিএফ ডকুমেন্ট তৈরী করা যায়।তাও আবার কোন প্লাগিন ছাড়া।একদম ফ্রী।
উবুন্টু ১১.০৪ এ কি কি আছে সেটা জেনে নিন এক দফাঃ
লিনাক্স কার্নেলঃ ২.৬.৩৪ পাইথনঃ ২.৭.২ গনোম ডেস্কটপ এনভার্মেণ্টঃ ২.৩২.১ ফায়ারফক্সঃ ৪ গিম্পঃ ২.৬.১১
পরের ভার্শন মানে আমার প্রিয় ভার্শন উবুন্টু ১১.১০ এ আছেঃ
লিনাক্স কার্নেলঃ৩.০ পাইথনঃ ২.৭.২ গনোম ডেস্কটপ এনভার্মেণ্টঃ৩.২ ফায়ারফক্সঃ ৭
এটাতে অবশ্য গিম্প আগে থেকে দেয়া নেই।আপনাকে সেটাপ করে নিতে হবে।
আর কি কি আছে?
জিজ্ঞেস করেন কি নাই?
- আপনার সকল ধরনের চ্যাট এর জন্য আছে এম্প্যাথি।ফেসবুক থেকে শুরু করে দূনিয়ার যাবতীয় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং কমিনিটি চ্যাট ক্লায়েন্ট এটা।বিন্দাস চ্যাট করে।আর হ্যা,চ্যাটের ইমোটিকন গুলো মজার
- ফায়ারওয়াল?উইন্ডোজ ফায়ার ওয়ালের বাপ এটা।যদি হ্যাকার হন তো উবুন্টু তে দৌড় দেন।সেফ এ থাকবেন
- এ্যাডোবি ফাশ টা সেটাপ দিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখুন বিন্দাস।ফ্লাশ প্লেয়ার এর উবুন্টু ভার্শন আছে
- ক্রোম ব্যবহার করে অভ্যস্ত?সেটাও আছে।
- আছে “লাইফ এরা” যেটা দিয়ে আপনি পড়তে পারবেন সমস্ত বড় বড় নিউজ নেটওয়ার্কের নিউজ,ব্রাউজার ছাড়াই আর এস এস ফীড এর মাধ্যমে
- আছে শট ওয়েল,আপনার ছবি গুলো দেখুন বিন্দাস।ক্যামেরা থেকে সহজ এ ছবি ইম্পোর্ট করার জন্য এটা আমার দেখা সেরা টূলস
- ফোন দিয়ে নেট চালান?সমস্যা নেই আছে ব্লুম্যান।নোকিয়া পিসি স্যূট ছাড়াই পারবেন নেট চালাতে ব্লুটুথ দিয়ে।
- আপনার সমস্ত ফাইল এনক্রিপ্টেড অবস্থায় থাকবে।
- বুটে একটা পাসওয়ার্ড দিলে কারো বাপের সাধ্য নাই আপনার পিসি তে বসে
- ফিসিং কারীদের সর্বনাশ হলো উবুন্টু।পিসি ফিশিং কাজ করে না
- আপনার পিসির হার্ডওয়্যারে কোণ সমস্যা না থাকলে সর্বোচ্চ ৮ সেকেন্ডে চালু হবে উবুন্টু।
এবার আমার প্রিয় একটা ফিচার।আপনি চান আপনার কিছু জরূরী ডাটার ব্যাকাপ নিতে।কিন্তু কোন ফাইল শেয়ারে রাখতে চান না।কি করবেন?ডিস্কে নিলে নষ্ট হতে পারে,পেন ড্রাইভ হারিয়ে যেতে পারে।হার্ডডিস্ক ক্রাশ করতে পারে।আছে উবুন্টু ওয়ান।ক্লাউড সার্ভিস।আপনাকে ১ জিবি স্পেস দিবে বিলকুল ফ্রী।পিসি তে বসে একটা এ্যাকাউন্ট খুলুন।ডাটা আপলোড দিন।যদি পিসি অথবা হার্ডড্রাইভ নষ্ট হয়ে যায়,ব্রাউজার থেকে কিংবা অন্য উবুন্টু পিসি থেকে এ্যাকাউন্ট খোলার সময় দেয়া ইউজার নেম পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করুন এবং আপনার ডাটা ফেরত নিয়ে আসুন।কোন আলাদা সফট ওয়্যার দরকার নেই ফাইল আপলোড অথবা ডাউনলোড এর জন্য।
[উবুন্টু নিইয়ে আরো কিছু পোষ্ট দেবো শীগ্রই।]
সবাই ভালো থাকবেন।আর একটা কথা,দেশকে ভালোবাসুন।নিজের বলতে তো এই একটাই আছে আমাদের।
লেখাটি খুবই সুন্দর হয়েছে । আমার ব্লগ http://www.blogger-dihan.blogspot.com এ কি প্রকাশ করতে পারবো?
উবুন্টু আমি ও ব্যাবহার করেছি।তবে সব থেকে উইন্ডোজ বেশি ব্যবহার করতে ভাল লাগে।উবুন্টু দিয়েও অনেক জটিল কাজ করা যাই। উবুন্টু হেক করতে ও কাজে লাগে।
উইন্ডোজ বেশি ব্যবহার করতে ভাল লাগে।উবুন্টু দিয়েও অনেক জটিল কাজ করা যাই। উবুন্টু হেক করতে কাজে লাগে।
উইন্ডোজ বেশি ব্যবহার করতে ভাল লাগে।উবুন্টু দিয়েও অনেক জটিল কাজ করা যাই। উবুন্টু হেক করতে কাজে লাগে।
উইন্ডোজ বেশি ব্যবহার করতে ভাল লাগে।উবুন্টু দিয়েও অনেক জটিল কাজ করা যাই। উবুন্টু হেক করতে কাজে লাগে।