কিভাবে কাজ করে?

নতুন পদ্ধতির ট্রাকিং : ইনডোর বেসড পজিশনিং সিস্টেম

Share
Share

ইংরেজিতে এটি Indoor Based Positioning System অথবা Location Based Service নামে পরিচিত। যেটি অনেকটা বদ্ধ কোন বিল্ডিং কিম্বা দালান কোঠা তে নেভিগেসান সিস্টেম নামে পরিচিত।আমরা সবাই তো আমাদের মুঠোফোনে GPS অথবা নেভিগেসান সিস্টেম ব্যাবহার করে থাকি…আমরা কি কেউ কখনও চিন্তা করে দেখেছি কিভাবে মানে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে GPS এই কাজটি করে থাকে। পদ্ধতি সম্মন্ধে খুব ছোট্ট করে একটা ধারনা দেই। এই পদ্ধতির নাম Trilateration. টেকনোলোজির ভাষায় এটি জ্যামিতিক এক মাধ্যম।আসুন দেখি জানা যাক এই মাধ্যমটা কি।বিজ্ঞানের ভাষায় বিশেষত গনিতের ভাষায় এটা খুবই সহজ একটা বিষয়। আমরা সবাই কমবেশি বৃত্ত কি জিনিস সেটা জানি। Trilateration পদ্ধতিতে বৃত্ত খুব প্রয়োজনীয় একটা অংশ। মূলত স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো তরঙ্গ যেটি কিনা আমাদের মোবাইলে পাঠানো হয় সেটির ক্ষমতাকে(POWER) এই পদ্ধতিতে দূরত্বতে রুপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে স্যাটেলাইট কে reference point হিসেবে ধরে প্রাপ্ত দূরত্বকে ব্যাসার্ধ হিসাবে নিয়ে বৃত্ত আঁকা হয়ে থাকে। জ্যামিতিকভাবে দেখা যায় যে এই স্যাটেলাইট কে( সাধারণত তিনটি) কেন্দ্র করে আঁকা বৃত্তগুলোর ছেদবিন্দুই হচ্ছে আমাদের মোবাইলের GPS নির্দেশক অবস্থা। তবে এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে স্যাটেলাইটগুলোর গতিপথ এবং বেগ এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। শুধু তাই নয় পরীক্ষার মাধ্যমে এবং গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ফলাফলের মান আশাব্যঞ্জক নয়। সে জন্যে এই পদ্ধতির সহায়ক হিসাবে A-GPS সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেটা কিনা আমাদের সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে আশানুরূপ ফলাফল প্রদান করে। তবে এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে GPS সিস্টেম সাধারণত খোলা জায়গায় সঠিক ফলাফল প্রদর্শন করে। কিন্তু যখন আপনি কিংবা আমি মোবাইল হাতে কোন বদ্ধ জায়গায় প্রবেশ করব তখন আমাদের হাতে থাকা মোবাইলের GPS সিস্টেমটি কিন্তু আর সঠিক ভাবে কাজ করবে না। কেননা GPS সিস্টেমে বার্তা বা সিগন্যাল প্রেরণকারী স্যাটেলাইট এবং আমাদের হাতে থাকা মোবাইলের মাঝে LoS(Line of Sight) সিস্টেমটি জড়িত। LoS সিস্টেম হল এমন এক সিস্টেম যেখানে বার্তা প্রেরণকারী এবং বার্তা গ্রহণকারীর মধ্যে বার্তা প্রেরনের সময় কোন প্রতিবন্ধকতা (উদাহরণ হিসাবে দেয়াল বলা যেতে পারে) থাকতে পারবে না। যখনি কোন প্রতিবন্ধকতা এসে হাজির হবে তখনি সিস্টেম আশানুরূপ ফলাফল প্রদর্শনে সক্ষম হবে না। সাধারণত বদ্ধ কোন জায়গায় এই LoS সিস্টেমটির সঠিক ভাবে কাজ না করার কারণে ধীরে ধীরে সূচনা হয় Indoor Based Positioning System এর। বিজ্ঞানীরা চিন্তা করতে থাকেন কোন বিকল্প উপায় আছে কিনা বদ্ধ জায়গায় নিজের সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের। এর পেছনে মূলত যে কারণ গুলো কাজ করেছিল সেগুলোর মধ্যে দুই একটির কথা বলতে চাচ্ছি। প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের টেকনোলজি। মানুষ আজকাল সব কিছুই সহজে হাতের মুঠোয় পেতে চায়। আজকাল বড় বড় শপিং মল গুলতে গেলে হাজারো রকমের ব্র্যান্ডের দোকান দেখতে পাওয়া যায়।ব্রান্ডের প্রতি মানুষজনের ঝোক সেই শুরু থেকেই। কোন নির্দিষ্ট ব্রান্ডের দোকানটি কোন ফ্লোরে সেটি বড় বড় শপিং মল গুলোতে খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার যদি কেউ ওই দোকানটির অবস্থান আগে থেকে না জেনে থাকেন।কিংবা ধরা যাক আপনি ভ্রমনে গিয়েছেন অন্য কোন দেশে। তো যাত্রা পথে ট্রান্সসিট নামক ব্যাপারটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। অজানা এক দেশে অজানা এক ভাষায় বিমানবন্দরে আপনার কাঙ্ক্ষিত জায়গাটি খুঁজে পাওয়াটা মোটেই কোন সহজ কাজ নয়। সেক্ষেত্রে যদি আপনার হাতে থাকা মোবাইলের মাধ্যমে যদি আপনি সহজেই আপনার কাঙ্ক্ষিত জায়গাটি খুঁজে বের করতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার ভোগান্তির পরিমাণটা অনেকাংশেই কমে যাবে। মূলত এই ধরনের কিছু ক্ষুদ্র চিন্তা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই সেক্টরের।সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় মানুষ ধীরে ধীরে পরিচিত হয়েছে এই সেক্টরের নতুন নতুন সিস্টেমের সাথে। এরই একটি অংশ হল RF Fingerprinting সিস্টেম। এই সিস্টেমটির কথা শুনে আপনার কিংবা আমার মত আরও অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে এই Fingerprinting আবার ওই হাতের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে কাজ করে এমন কোন সিস্টেম কি না। আসলে এই সিস্টেমটি মোটেই হাতের আঙ্গুলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বরং এই সিস্টেমটি রেডিও ফ্রিকোএন্সিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে। ব্যাপারটা একটু বিস্তারিতভাবে বলার চেষ্টা করি। জানি না কতটুকু বিস্তারিত বলতে বা বোঝাতে সক্ষম হব। এই সিস্টেমটিতে সর্বপ্রথম বদ্ধ জায়গাকে কিছু নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভাগ করা হয়ে থাকে। চেষ্টা করা হয়ে থাকে যথা সম্ভব ব্যবধান করার দূরত্বটুকু কম রাখার। পরবর্তীতে প্রতিটা ব্যবধানের প্রান্তবিন্দুগুলোতে নির্দিষ্টসময় ধরে মূলত ১ মিনিট ধরে ৫ সেকেন্ড সময়ের ব্যবধানে রিসিভকৃত রেডিও সিগন্যালের পাওয়ার পরিমাপ করা হয় এবং সেগুলু একটি ডাটাবেসে রেকর্ড করা হয়। ডাটা বেসে রেকর্ড করার সময় এটি লক্ষণীয় যে প্রান্তবিন্দুগুলোকে ও কোন না কোন নাম দিয়ে রেকর্ড করা উচিত কাজের সুবিধার জন্যে। ডাটা রেকর্ড করার ক্ষেত্রে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার নাম টেমস। এটি মূলত ১ মিনিটে প্রায় ১২০০ ডাটা রেকর্ড করতে সক্ষম। রেডিও সিগন্যালের ক্ষেত্রে কিছু কথা বলে রাখা ভালো। যে কোন ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যালের পাওয়ার তার পরিবেশের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। অর্থাৎ মানুষজনের কোলাহল, রিসিভারের অ্যান্টেনার অবস্থান, পরিবেশের শুস্কতা, দেয়ালের মত প্রতিবন্ধকতা যে কোন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যালের উপরে অনেক প্রভাব ফেলে। বিশেষত দেয়ালের মত প্রতিবন্ধকতা সিগন্যালকে বেশ প্রভাবিত করে আর সে কারনেই GPS সিস্টেমটি মূলত বদ্ধ জায়গায় সঠিক ফলাফল দিতে খুব একটা সক্ষম হয় না। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করে মূলত ডাটা প্রায় ৫ টি ভিন্ন ধরনের সময়ে রেকর্ড করা হয়ে থাকে।উদাহরণ হিসাবে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত এবং মানুষজনের কোলাহলপূর্ণ যে কোন সময়কে আমরা বেছে নিতে পারি। এরপরে মূলত কে এন এন এল্গরিদম কে ব্যবহার করে বাকি কাজটুকু সেরে ফেলা হয়। বাকি কাজটুকু হল এই যে যখন কোন ব্যক্তি তার মোবাইল নিয়ে ওই বদ্ধ জায়গা দিয়ে যাওয়া আসা করবেন তখন তার মোবাইলের সিগন্যালের পাওয়ারকে রেকর্ড করে ওই ডাটা বেসের প্রাপ্ত ডাটার সাথে মিলিয়ে দেখা হয় এবং এল্গরিদমকে ব্যবহার করে কোন ব্যক্তির সঠিক অবস্থানটিকে নির্ণয় করা হয়।মূলত এই পদ্ধতিতে বদ্ধ কোন জায়গায় আমরা কোন বেক্তির অবস্থান নির্ণয় করতে পারি।তবে এ ক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে এই সিস্টেমটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল বলে এখনও এটি সে ভাবে উন্নয়নশীল দেশে জনপ্রিয়তা পেয়ে উঠতে পারে নি। কিন্তু ধীরে ধীরে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিগুলোর এই সেক্টরে আগ্রহ বাড়ার কারণে সেদিন আর খুব দূরে নয় যখন আমরা এই সিস্টেমটিকে আমাদের হাতের নাগালে পেয়ে যাব। এখনকার গবেষণাগুলো মূলত এই RF Fingerprinting এর বিকল্প উপায় খোঁজার চেষ্টায় লিপ্ত। যদি বিশেষভাবে বলতে হয় তাহলে বলতে হবে যে এখনকার গবেষণা গুলো Trilateration পদ্ধতিকে কিভাবে বদ্ধ জায়গায় ব্যবহার করে কোন ডাটাবেস তৈরি করা ছাড়াই অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার চেষ্টায় লিপ্ত।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
কিভাবে কাজ করে?পরিবেশ ও পৃথিবী

সোলার সেল বা সৌরকোষ কীভাবে কাজ করে?

পরিচিতি সোলার সেল বা সৌরকোষের এর অপর একটি নাম হল, ফটোভোলটাইক সেল।...

কলামকিভাবে কাজ করে?

অগ্নি নির্বপক যন্ত্র সমন্ধে কিছু তথ্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন। [mc4wp_form...

কম্পিউটার টিপসকিভাবে কাজ করে?

ই-মেইল সার্ভার সিস্টেম যেভাবে কাজ করে

লেখাটি অনলাইন থেকে সংগ্রীহিত। মূল লেখক মিলন মনি ইমেইল কি? ইলেকট্রনিক মেইলের...

কিভাবে কাজ করে?

সৌরশক্তির বিমান – Solar-Powered Aircraft

  Dedicated to: Prof. Khalilur Rahman, Department of Mathematics, Habibullah Bahar College,...

কিভাবে কাজ করে?

স্টার্লিং ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

  ভূমিকাঃ স্টার্লিং ইঞ্জিন(Stirling engine) হচ্ছে একধরনের তাপ ইঞ্জিন(heat engine) , যা...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.