অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও পৃথিবীর ৫১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ “স্কিতজোফ্রেনিয়া” নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত (সূত্রঃ NIMH)। শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক schizen(বিভাজিত হওয়া) এবং phren(মন বা চিন্তা) থেকে- তাই অনেকেই স্কিতজফ্রেনিয়াকে মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বলে ভুল করেন। স্কিতজোফ্রেনিকদের মন খণ্ডিত হয় ঠিকই, তবে তা তাকে কল্পনা আর বাস্তবের মাঝামাঝি এক জগতে নিয়ে আসে। যে জগতের অনুভূতিগুলো হয় সঙ্গতিহীন আর চিন্তা-ভাবনাগুলো এলোমেলো।
স্কিতজোফ্রেনিয়ার লক্ষনগুলো দু’ধরনের হতে পারে- পজিটিভ এবং নেগেটিভ। পজিটিভ স্কিতজোফ্রেনিকরা যে ধরনের সমস্যায় ভোগেন তা অনেকটা এই রকম-
-হ্যলসিনেশন, অবাস্তব বন্ধু বা ব্যক্তি তে বিশ্বাস। যে বন্ধু তাকে অনুসরণ করে সারাক্ষন। সময়ের সাথে সাথে স্কিতজোফ্রেনিকরা তাদের কাল্পনিক বন্ধুর হাতে তুলে দেন নিজেকে এবং এক সময় নিজের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ব্যাপারটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যখন সে বন্ধু তাকে নিষিদ্ধ কোন কাজের জন্য নির্দেশ করে।
-ডিলুশন, সব সময় বিভ্রমের মধ্যে থাকা এবং অদৃশ্য কণ্ঠস্বর শোনা। বেশিরভাগ রোগী এক্ষেত্রে অজানা কোন কারনে মৃত্যুর আশঙ্কায় ভোগেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা নিজেদের বিশেষ দায়িত্ব প্রাপ্ত বা অসীম ক্ষমতাধর বলে মনে করেন এবং এমন সব কাজ করে বসেন যা স্বাভাবিক মানুষ কোনভাবেই করবেনা।
-সমস্যার প্রকটতা বাড়ার সাথে সাথে আচরনেও আসে ব্যাপক পরিবর্তন। এ অবস্থায় তারা সমাজের রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারেননা, তাদের কথাবার্তা হয়ে ওঠে পুরোপুরি অসলগ্ন। ফলে তারা নিজেদের সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেন এমনকি দিনের পর দিন নিজেদেরকে ঘরে বন্দি করে রাখেন।
নেগেটিভ স্কিতজোফ্রেনিকদের সমস্যা কোন অংশে কম নয়। তারা যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন তা অনেকটা এই রকম-
-অ্যালোজিয়া, কথা বলতে অক্ষমতা, অনুভুতির প্রকাশ ঠিক মত ঘটাতে না পারা। অনেক ক্ষেত্রে তখন দেখা যায়, তুচ্ছ কারনে তারা রেগে উঠছেন অথবা হেসে উঠছেন কারো মৃত্যুর কথা শুনে।
-অ্যাভোলিশন, ঘরের বাইরে বের হতে অনীহা, বন্ধুদের সাথে না মেশা, প্রতিদিনের কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, কোন কিছুতেই অনুপ্রাণিত না হওয়া।
সৌভাগ্যবশত শিশুদের মধ্যে স্কিতজোফ্রেনিয়ার হার খুবই কম- চল্লিশ হাজারে এক জন, যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই হার প্রতি একশ জনে একজন! ছেলে-মেয়ে উভয়ের মধ্যেই স্কিতজোফ্রেনিয়া দেখা দিলেও ছেলেরা তুলনামূলক কম বয়সে ও মেয়েদের তুলনায় মারাত্মকভাবে এ রোগে আক্রান্ত হন। উল্লেখ্য যে, স্কিতজফ্রেনিকদের মধ্যে আত্মহত্যার করার সম্ভাবনা ৫০% এর বেশি।
বিজ্ঞানীরা এখনও স্কিতজোফ্রেনিয়ার জেনিটিক কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হননি। ধারনা করা হয় একটি মাত্র নির্দিষ্ট জিনের উপস্থিতিই এ রোগের প্রকাশ ঘটায়। তবে identical twins-দের ক্ষেত্রে স্কিতজোফ্রেনিয়ার একই রকম প্রকাশ দেখা যায় না- অথবা অন্যভাবে বলা যায় এদের একজন স্কিতজোফ্রেনিক হলে, অন্যজনেরও হবার সম্ভাবনা শতভাগ নয়। এ কারণে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন জিনগত কারনের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক পরিবেশ একজন মানুষের স্কিতজোফ্রেনিক হয়ে ওঠার পেছনে অনেকখানি দায়ী। সাধারণত ছেলেমেয়েরা তাদের পারিবারিক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে গিয়ে বা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে নিজের এক কাল্পনিক জগত গড়ে তোলে- আর মনের অজান্তেই, নিজেকে ঠেলে দেয় স্কিতজোফ্রেনিয়া নামক ভয়ঙ্কর মানসিক রোগের দুয়ারে।
উপমহাদেশে স্কিতজোফ্রেনিকদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তাই বলে চিন্তামুক্ত হবার কোন উপায় নেই, কারণ ৯০% স্কিতজফ্রেনিকই সঠিক মেডিকেশন পাচ্ছেননা। এ কথা মনে রাখতে হবে স্কিতজোফ্রেনিয়া মানে জীবনের শেষ নয়। সঠিক চিকিৎসা আর সবার সহযোগিতা পেলে স্কিতজোফ্রেনিকরাও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেন এবং গড়ে তুলতে পারেন সুস্থ-সুন্দর আতঙ্কমুক্ত জীবন।
তথ্য সুত্রঃ www.schizophrenia.com
www.youtube.com