সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকারঃ ড.মোহাম্মদ শাহ আলম

Share
সাক্ষাৎকারঃ ড.মোহাম্মদ শাহ আলম
Share

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ বিজ্ঞানী.অর্গ এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমাদেরকে সাক্ষাতকার দেবার জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই আপনার সমন্ধে আমাদের একটু বলুন। 

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ  ধন্যবাদ বিজ্ঞানী.অর্গকে। আমি মোহাম্মদ শাহ আলম, সহযোগী অধ্যাপক, এনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগ, ভেটেরিনারি মেডিসিন এন্ড এনিম্যাল সাইন্স অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।বর্তমানে আমি শিক্ষা ছুটি নিয়ে চীনের সাংহাই শহরে অবস্থিত সাংহাই জিও টং বিশ্ববিদ্যালয় (Shanghai Jiao Tong University) তে পোস্ট-ডক্টোরাল গবেষক হিসাবে কর্মরত আছি।
আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার টিটির চর গ্রামে। মেঘনা উপজেলার মুজাফ্ফর আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ইং সালে এস.এস.সি, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ঢাকা থেকে ১৯৯৭ইং সালে এইচ.এস.সি সম্পন্ন করি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU) থেকে ২০০৩ সালে ‘ভেটেরিনারি সাইন্স ’ বিষয় এর উপর “ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন” (D.V.M) এবং ২০০৫ সালে ভেটেরিনারি এনাটমি বিষয় এর উপর “মাস্টার্স ইন এনাটমি” ডিগ্রী অর্জন করি । অতঃপর একই বছর মে, ২০০৫ এ হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করি। সেই বছর অক্টোবর মাসে জাপান সরকারের মনোবুশো (MEXT) স্কলারশিপ নিয়ে রিসার্চ স্টুডেন্ট হিসাবে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় (The University of Tokyo) যোগদান করি । পরবর্তীতে এপ্রিল, ২০০৬ সালে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হই এবং মার্চ,২০১০ সালে ভেটেরিনারি মেডিকেল সাইন্স (Veterinary Medical Sciences) এ সম্মানের সাথে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করি । জাপান এর টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা অত্যন্ত সম্মানের ছিল, কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় এশিয়ার মধ্যে সর্বদা প্রথম এবং পৃথিবীর প্রথম কুড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি । পরে মার্চ,২০১১ইং তারিখ পৰ্যন্ত এক বছর একই ল্যাব এ রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রিনোলজি (Reproductive Endocrinology) তে পোস্ট-ডক্টোরাল গবেষক হিসাবে কাজ করে বাংলাদেশে ফিরে আসে গাজীপুরে অৱস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিল, ২০১১ইং তারিখে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করি। পরবর্তীতে এপ্রিল,২০১৭ইং তারিখে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি
 পাই। এদিকে ফেব্রুয়ারী,২০১৭ইং থেকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাছুটি নিয়ে সাংহাই জিও টং বিশ্ববিদ্যালয় (Shanghai Jiao Tong University) তে পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে Biomedical Engineering School এ Tissue Clearing and Optical imaging উপরে গবেষণা করছি।
আমার আজকের “আমি” হয়ে উঠার পেছনে আমার মা, আব্বা, স্ত্রী এবং বোনদের, অনেক ভূমিকা রয়েছে। সেই সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পৰ্যন্ত আমার প্রতিটি শিক্ষকের রয়েছে অনেক আবদান। আজকের এই দিনে আমার প্রত্যেকটি শিক্ষককে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি।তাছাড়া টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের (The University of Tokyo) প্রফেসর মাসামিচি কুরহমারু, ড.ইউশিয়াকিরা কানাই এবং ড. সেইচিরো ওহসাকো এদের দিক নির্দেশনা জীবনে পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে।
ব্যাক্তিগত জীবনে আমি দুই সন্তানের জনক, ছেলে ফুয়াদ আলম (৭ বছর) এবং মেয়ে ফাইজা আলম (৫ বছর)। আমি মনে করি জীবনে বড় হতে হলে পরিবারের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। পিএইচডি থেকে এখন পর্যন্ত আমার পরিবার থেকে অপরিসীম সহযোগিতা পেয়ে আসছি, এই সহযোগিতাই হয়ত আমাকে এতটুকু আসতে সহায়তা করেছে। [/box] 

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ  বর্তমানে কি নিয়ে কাজ করছেন?

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ আমি গবেষণা করছি “Optical tissue clearing based on CLARITY, uDISCO, CUBIC techniques and 3D imaging to delineate structural and molecular principles of different intact organs up to a cellular and subcellular level”. সনাতন হিস্টোলজিক্যাল টেকনিক এ সাধারণতঃ পাতলা (5-um thick) সেকশন করে ২ ডিমেনশনাল (2D) ইমেজ (ফটো) নিয়ে শারীরিক স্থান এবং গঠন স্টাডি করা হয়। এতে করে শরীরের অনেক লম্বা কোষ (Neuron) কেটে যায় এবং তত্ত্ব (Information) অসম্পূর্ন থাকে। অতিসম্প্রতি ২০১২ সালে প্রফেসর Prof. Karl Deisseroth শরীরের পুরো অঙ্গ (Organ) অথবা কলা (Tissue) কে পরিষ্কার করে ফিজিক্যালি সেকশন না করে ৩-ডিমেনশনাল (3D) ইমেজ (ফটো) নেয়া যায়। এতেকরে তিনদিক থেকে কলার বা অঙ্গের গঠন দেখা যায় এবং পুরো অঙ্গ থেকে একটি কোষ পৰ্যন্ত অবয়কে দৃশ্যমানকরা যায়,যা একটি কোষ থেকে সম্পূর্ণ অঙ্গ পৰ্যন্ত পরিপূর্ণ তত্ত্ব দেয়। উহা বিজ্ঞানের একটি চমৎকার আবিষ্কার। এই টেকনিকটিকে অপটিক্যাল টিসু ক্লিয়ারিং (Optical Tissue Clearing) বলে এবং প্রফেসর Deiserroth মাউস ব্রেন (Brain)এর উপর ব্যবহার করেছিল। আমি এই টিসু ক্লিয়ারিং টেকনিকটিকে ব্যবহার উপযোগী (Optimize) করে শরীরে বিভন্ন অঙ্গ এবং কলাকে পরিষ্কার (Clear) করে Confocal, Two-photon, Light sheet fluorescent microscopes দিয়ে ৩D ইমেজিং করি। এ টেকনিক ব্যবহার করে লিভার, কিডনি, পুরুষ এবং স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ সহ শরীরে অনন্য অঙ্গকে নিয়ে গবেষনা করছি। আমার প্রধান উদ্দেশ্য নূতন কোষ (New cells) চিহ্নিত করা এবং কোষটি শরীরে কিভাবে কার্য সম্পাদন করে তা জানা। ইতিমধ্যে আমরা পাকস্থলী (Stomach) এর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি(Gastric gland) তে এক ধরণের নুতন কোষ চিহ্নিত করেছি এবং কোষটি কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে পরবর্তী গবেষণা করছি।[/box] 

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি দীর্ঘদিন ধরে Biomedical Engineering এ কাজ করেন। বিজ্ঞানে এই ক্ষেত্রটি মূলত কি নিয়ে কাজ করে? (Biomedical Engineering বলতে কি বোঝায়?)

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ ইং থেকে School of Biomedical Engineering এ পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে হিসাবে গবেষনা করছি। Biomedical Engineering হল বিজ্ঞানের একটি নুতন শাখা। এ শাখাটি মূলত জৌব -পদার্থ বিদ্যা (Bio-physics), জৌব রসায়ন (Biochemistry), চিকিৎসা বিদ্যা (Medicine), জীববিদ্যা (Biology), আনুবিক জীববিদ্যা (Molecular Biology), বায়োইনফরম্যাটিকস (Bioinformatics) এবং প্রকৈশলবিদ্যা (Engineering) নিয়ে আলোচনা করে। আরো সংক্ষেপে বললে, প্রকৈশলী (Engineer), জীববিজ্ঞানী (Biology Scientist),গণিতবিদ (Mathematicians) এবং ডক্টর (Physician) একসাথে গবেষণা করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নুতন নুতন কৌশল আবিষ্কার করে চিকিৎসা প্রযুক্তি বিকশিত করা, রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসার উন্নতি সাধন করা। বিজ্ঞানের বিভিন্ন দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নুতন নূতন রোগ নির্ণয়ের কৌশল এবং বিভিন্ন য্ন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা যাতে রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা সহজ হয়। বিজ্ঞানের এ শাখাটি মানুষের জীবন মান এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ আপনি বেশ কিছু animal model ব্যবহার করেন। এইগুলি নিয়ে কি ধরনের গবেষনা করেন?

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ আমি ইঁদুর (Rats), মাউস (Mouse) এবং বিভিন্ন ধরণের কোষ (Human Cells) পরীক্ষামূলক মডেল নিয়ে গবেষণা করেছি এবং করছি। এদেরকে ল্যাব এনিম্যাল হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। কারণ এদের এনাটমি এবং ফিজিওলজি মোটামুটি মানুষের সাথে মিল আছে। হিউমান এ ব্যবহার করার আগে ল্যাব এনিম্যাল এ প্রথম পরীক্ষা করা হয়। তাছাড়া মানুষের নমুনা খুব একটা সহজলভ্য নয়। আমার পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল পুরুষ প্রজনন বিদ্যা এবং পরিবেশগত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ (Male Reproductive Endocrinology and Environmental Endocrine Disruptors) কিভাবে পুরুষ প্রজননে ব্যাঘাত ঘটায়।সবগুলো পরীক্ষা (Experiment)প্রথমে ল্যাব এনিম্যাল এ করেছিলাম। পরবর্তীতে হিউমান কোষে পরীক্ষা করা হয়েছিল।
বর্তমানে এ সমস্ত ল্যাব এনিম্যাল এর পাশাপাশি ক্লিনিক থেকে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের নমুনা নিয়েও গবেষণা করছি। আমাদের মেডিকেল স্কুল থেকে সহজেই আমরা এখন মানুষের নমুনা নিয়ে গবেষণা করতে পারছি।[/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার অভিজ্ঞতা বলুন। 

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ ২০০৫ ইং থেকে ২০১০ ইং পর্যন্ত আমি টোকিও ইউনিভার্সিটি (The University of Tokyo) তে পিএইচডি করছিলাম।এটা আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। সত্যিকারার্থে আমার গবেষণা তখন থেকেই শুরু। আমার মেন্টর প্রফেসর মাসামিচি কুরহমারু (Professor Masamich Kurohmaru) আমার দেখা মতে অত্যন্ত ভালো মানুষ। শুধু গবেষক ও শিক্ষক হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে অত্যন্ত চমৎকার এবং ন্যায়পরায়ন।আমরা তখন প্রায় ২৫ জন ছাত্র ছিলাম, সবাইকে তিনি সমান ভেবে মূল্যায়ন করতেন।
ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার কিছু জ্ঞান ছিল, নামাজ ও রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা সম্পর্কে বলতো। ল্যাব এ আমাকে নামাজ পড়ার জায়গার ব্যব্স্থা করেছিল। ইসলামকে সম্মান করতেন । পিএইচডির পাশাপাশি আমি ভেটেরিনারি এনাটমি ডিপার্টমেন্টে টিচিং সহকারী হিসাবে তার সাথে টিচিং এ কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। ক্লাস এ যাওয়ার আগে প্রতিদিন প্রফেসর দশ থেকে পনের মিনিট শুধু আমাকে লেকচার দিতেন। ভালোভাবে পড়াশুনা করে ক্লাস যেতে হতো। সেই সময় তার কাছ থেকে এনাটমি টিচিং এর কিছু কৌশল আমি রপ্ত করতে পেরেছিলাম, যা এখন আমার শিক্ষকতা জীবনে খুব মনে পড়ে।পরম শ্রদ্ধেয় প্রফেসর কুরহমারু কাছ থেকে একাডেমিক এর বাইরেও অনেক কিছু শিখেছি, যা আমার জীবনে পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে।
আমার পিএইচডি এর বিষয়বস্তু ছিল “Mechanistic insight of di(n-butyl) phthalate-induced spermatogenic cell apoptosis in prepubertal rats”. Phthalates পৃথিবীব্যাপী বহুল ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক পদার্থ। প্রায় সকল প্রকার প্লাস্টিক সামগ্রীতে এটি ব্যবহত হয়। এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থটি ঔষধ ও প্রসাধনী সামগ্রী, বোতলজাত দ্রব, এমনকি শিশুদের খেলনা স্পর্শের মাধ্যমে ও আমাদের দেহে প্রবেশ করতে পারে। ধারনা করা হয় এটি মানব দেহে ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, হুদরোগ, ডায়াবেটিস,স্টোক ও প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টিকরে। আমার এ গবেষণায় Phthalates কিভাবে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করেন তা আবিষ্কার করি। এছাড়াও গবেষনায় কিভাবে বংশানুক্রমিক ভাবে প্রজনন ক্ষমতা ব্যাবহত করতে পারে সেই সংকান্ত অনেক গূরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসে ।
আমার পিএইচডি গবেষণার বিষয় বস্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নালে (SCI)ছয়টি প্রকাশনাপত্র মূল অথর (Primary Author) হিসাবে প্রকাশ করেছি যা ইতিমধ্যে ২০০ বারের মত উদ্বৃত (Cited) হয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও চায়নায়সহ নয় (৯) টি এর মত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে গবেষণার বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছি।
জাতি হিসাবে জাপানিজরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী এবং দেশপ্রেমিক। বসবাসের জন্য টোকিও একটি চমৎকার শহর। আমি মনে করি, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল, যখন আমি টোকিওতে ছিলাম। জাপান দেশ হিসাবে গবেষণা করার জন্য একটি আদর্শ জায়গা। [/box] 

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ চীনে আপনি পোস্টডক করেছেন। সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা বলুন।

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ চীনেরও গবেষণার পরিবেশ এবং সুযোগ সুবিধা আন্তর্জাতিক মানের । গবেষণার জন্য তারা প্রচুর বিনিয়োগ করছে। আমি বায়োলজি শাখার গবেষক হিসাবে কাজ করছি। আমার টিমে ৪ জন মাস্টার্স ,২ জন পিএইচডি, ১ জন সহযোগী অধ্যাপক, ১ জন অধ্যাপক এবং আমি পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসাবে গবেষণা করছি। আমার নিজের ২ টি প্রজেক্টে (PI) এ কাজকরি এবং ছাত্রদের বায়োলজি বিষয়ে গবেষণা উপদেশ দিয়ে থাকি এবং মাস্টার্স এন্ড পিএইচডি ছাত্রদের অপটিক্যাল টিসু ক্লিয়ারিং ও ইমেজিং এ উপর কোর্সটি অফার করি। আমাদের ল্যাব থেকে গত ২ বছরে নেচার কমিউনিকেশন (Nature communications), ACS Nano, সায়েন্টিফিক রিপোর্ট সহ বেশ কিছু জার্নাল এ বিজ্ঞান প্রকাশনা প্রকাশ করেছে। আশা করছি এ বছরও আমরা ভালো কিছু প্রকাশনা প্রকাশ করতে পারবো। নিকট ভবিষ্যতে আমার নিজেরই দুইটি মানুস্ক্রিপ্ট প্রকাশের জন্য জমা দিবো। সব মিলিয়ে আমার গবেষণার অভিজ্ঞতা এখানে ভাল।[/box]  

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ চীন তো এখন বিশ্বে গবেষনাক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে। এটিকে কিভাবে আপনি মূল্যায়ন করেন?

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ চীন সরকার গবেষণায় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে। গবেষণার পরিবেশ উন্নয়ন করেছে, যাতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ল্যাবে থাকে, শিক্ষকেরা প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের গবেষণার খোঁজ নেন, তাদের গবেষণা ভালো বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশ করার জন্য পরামর্শ ও উৎসাহ দিচ্ছেন এবং প্রকাশ হওয়ার পর পুরস্কারে ভূষিত করছেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় উৎসাহ পাচ্ছে। শিক্ষকেরাও ল্যাবে দীর্ঘ সময় দেন কারণ তারা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। পুরো সময়টা তারা ল্যাব এ দেন। একটি ল্যাব এ একজন, বড়জোর দুই জন অধ্যাপক থাকেন, অধ্যাপকদের নিয়ন্ত্রনে ৩ থেকে ৪ জন সহযোগী অধ্যাপক থাকেন যারা সরাসরি শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করেন। অধ্যাপক সপ্তাহে একদিন অথবা মাসে দুইদিন সব শিক্ষার্থীদের সাথে মিটিং করেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদেরা সার্বক্ষণিক শিক্ষকদের মনিটরিং এ থাকে।
শিক্ষকদের পদোন্নতি হয় তার যোগ্যতার উপর অর্থাৎ ভালো জার্নালে প্রকাশনা, গবেষণা ফান্ড সংগ্রহ, কতজন মাস্টার্স এবং পিএইচডি ছাত্র তত্ত্বাবধায়ন করেছেন। চাকরির বয়স, পলিক্যাল মতাদর্শ কিংবা অন্য সম্পর্ক এখানে বিবেচ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে -শিক্ষক -শিক্ষার্থী মিলে একটি বন্ধত্ব পূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।
চীন সরকার গবেষণায় এখন পৃথিবীর মধ্যে সবচেয় বেশি বিনিয়োগ করছে, তার ফলশ্রুতিতে গবেষণায় আজ চীনের অবস্থান অন্য সব দেশের উপরে ।এই সব গবেষণার ফলাফল কাজে লাগিয়ে চীন এখন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে নিজেরদের অবস্থানও উন্নত করেছে।
চীন যেমন বিদেশীদের স্কলারশীপ দিচ্ছে, তেমনি নিজ দেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশীপ দিয়ে আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে পাঠাচ্ছে। ভালো গবেষকদেরকে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকে চাকরি দিয়ে নিজ দেশে নিয়ে আসছে এবং ল্যাব স্থাপনের সব খরচ সহ নানাবিধ আয়োজন মেটাচ্ছে।সঠিক কর্মপরিকল্পনা, এবং সফল বাস্তবায়নের ফলে চীন আজ বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।এ বছরের রিপোর্টে নেচার ইনডেক্স এ শুধু Chinese Academy of Science পরপর চারবার সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত সাইন্টিফিক প্রকাশনা নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। এ বছরের গ্লোবাল র‍্যাংকিং এ একাডেমিক এন্ড রিসার্চ এ পৃথিবীর শীর্ষ একশত বিশ্ববিদল্যলয়ের মধ্যে চীনের ষোলটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রবেশ করেছে এবং আগামী কয়েক বছরে মধ্যে তাদের আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ একশতে প্রবেশ করবে। কাজেই বিজ্ঞানে চীন খুব দ্রুত আগাচ্ছে। [/box]

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ ভবিষ্যতে কি নিয়ে কাজ করতে চান?

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Biomedical Engineering) উপর আমার গবেষণা চালিয়ে যাব যাতে করে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে কিছু অবদান রাখতে করি। ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যাল সাইন্স এর মধ্যে ফাঁরাকটিকে দূর করবো ইনশাল্লাহ। এ গবেষণা লব্ধ জ্ঞান আমার ছাত্রদের মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশবিদ্যালয়ে বিলিয়ে দিৰ। আমি স্বপ্ন দেখি আমরাও আমাদের বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ জার্নালে বিজ্ঞান প্রকাশনা প্রকাশ করবো। আমাদের অনুষদে একটি ভালো ল্যাব আছে। ল্যাব টিকে আরও আন্তজাতিক মানের ল্যাব পরিণত করবো ইনশাল্লাহ।
পাশাপশি আমার এলাকায় মেঘনা উপজেলায় শিক্ষা উন্নয়নে একটি ট্রাস্ট করার পরিকল্পনা, যা থেকে অত্যান্ত গরীব শিক্ষারীরা বৃত্তি নিয়ে পড়াশুনা করতে পারে। [/box] 

[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]বিজ্ঞানী.অর্গঃ তরুন শিক্ষার্থি যারা বিজ্ঞানে কাজ করতে চায় তাদের জন্য আপনার কোন উপদেশ বা বক্তব্য কি?

ড.মোহাম্মদ শাহ আলমঃ সম্প্রতি আমি লক্ষ করেছি যে আমাদের ছাত্র/ছাত্রীরা আগে দেশে একটি চাকরি নাও তারপর বিদেশে যাও এমনটি মনে করে। কিন্তু দেশের এই চাকরিটি নিতে তারা জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ সময় নষ্ট করে ফেলে। আমার দেখামতে সারা বিশ্বের তরুণরা সাধারণত ২৭ /২৮ অথবা সর্বোচ ৩০ বছর বয়সে পিএইচডি শেষ করে আর আমাদের দেশের ছাত্র/ছাত্রীরা শুরুই করে ৩০ এর পর।
তাই এ বিষয়ে আমার পরার্মশ থাকবে দেশে একটি চাকরির জন্য বসে না থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রি করার সাথে সাথে বিদেশে উঁচুতর পড়াশোনার জন্য লেখা লেখি করা এবং গবেষণাকে পেশা হিসাবে নেওয়া। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে জাপান, চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়াতে উচ্চতর গবেষণার জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে। এ সব দেশে মাষ্টার্স ও পিএইচডি করে পরে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইত্যাদি দেশে অনেক সুযোগ আছে।আর যারা ভেটেরিনারি অথবা মেডিকেল সাইন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রী করেছো, তোমাদের জন্য সুযোগটা একটু বেশী।
অতিনিকট ভবিষতে, আমাদের দেশেও এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে যে উন্নতমানের গবেষণার অভিজ্ঞতা যা পিএইচডি /পোস্টডক্টরাল ট্রেনিং ছাড়া বিস্ববিদ্যায়ের শিক্ষক হওয়া সম্ভব হবেনা।ভালো গবেষকের জন্য অফুরন্ত সুযোগ সারা দুনিয়াতে। আমাদের দেশের গবেষকদের কদর সারা দুনিয়াব্যাপী, কারণ আমরা সবাই স্বস্বক্ষেত্রে ভালো করছি এবং আমাদের ছেলেরা আরও ভালো করবে ইনশাল্লাহ।
My email:[email protected]
Facebook: https://www.facebook.com/mshah.alam.
Website: http://bsmrau.edu.bd/Shahalam [/box]

 

[divider style=”solid” top=”20″ bottom=”20″]

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো নতুন নতুন সংবাদ জানতে সাবস্ক্রাইব করুন।

[mc4wp_form id=”3448″]

Share
Written by
নিউজডেস্ক -

আমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকার প্রকাশ করি। আপনারা কোন লেখা প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: [email protected], [email protected]

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফ্রি ইমেইল নিউজলেটারে সাবক্রাইব করে নিন। আমাদের নতুন লেখাগুলি পৌছে যাবে আপনার ইমেইল বক্সে।

বিভাগসমুহ

Related Articles
বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

বন্যার ধ্বংস থেকে জাহাজের স্থায়িত্ব: এক তরুণ গবেষক  মোহাম্মদ ইব্রাহীম এর গল্প!

এবারের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমাদেরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম।তিনি মাদারিপুরের শিবচরের একজন কৃষক পরিবারে...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

বিজয় চন্দ্র ঘোষের সাথে সাক্ষাৎকার: সৌরশক্তি ও পরিবেশ রসায়নে আধুনিক গবেষণা!

বর্তমান সময়ে আমরা একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছি বিশিষ্ট গবেষক বিজয় চন্দ্র ঘোষের সাথে।...

বিজ্ঞান বিষয়ক খবরসাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের ভবিষ্যত গঠনে গবেষণার ভূমিকা: মোঃ নাজমুল হকের পরামর্শ!

বর্তমান সময়ে আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি মোঃ নাজমুল হক হক এর। তিনি প্রজেক্ট...

Three Columns Layout

গবেষণার তথ্য ও বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, বিজ্ঞানী.অর্গ নবীন প্রজন্মকে গবেষণার প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

Contact

biggani.org❤️gmail.com

Biggani.org connects young audiences with researchers' stories and insights, cultivating a deep interest in scientific exploration.

বিজ্ঞানী অর্গ (biggani.org) বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গবেষণা ও বিজ্ঞান নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্য ও সাক্ষাৎকার প্রচার করে – নবীনদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় প্রেরণা দেয়া হয়।

যোগাযোগ:

biggani.org@জিমেইল.com

biggani.org, a community of Bangladeshi scientists, shares interviews and information about researchers and scientists in Bengali to inspire young people in research and higher education.