ethnobotanybd.com এর উদ্দ‍্যেক্তা সালাহউদ্দিনের সাক্ষাৎকার

গতবছর ethnobotanybd.com সাইটটি দেখে সত‍্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। কোন প্রতিদান না চেয়ে, শুধু মাত্র কাজ করার নেশাকে কাজে লাগিয়ে সালাইদ্দিন এই সাইটে বাংলাদেশের গাছ গাছালির একটি ডাটাবেস তৈরী করছে। বাংলাদেশের গাছ নিয়ে গবেষনা করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ‍্যা কম নয়। তারা ভালো অর্থ পেয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষনা করছে। তবে তারা যা পারেনি, সালাউদ্দিন সেটি একাই করে দেখিয়েছে যে তা সম্ভব। একদিন বাসার কাছেই একটি কফিশপে দুজন মিলে আড্ডা িদলাম। সত‍্যিই অবাক হলাম এই ছেলেটি একা একা কাজ করছে, কারো কাছ থেকে কোন সাহায‍্য িকংবা গাইডলাইন না পেয়েই। এমন স্বপ্ন ময় ছেলেদের দেখলে মনটাই ভাল হয়ে যায়। বিজ্ঞানী.org এর জন‍্য সাক্ষাতকার চেয়ে পাঠালে খুব দ্রুত উত্তর দিল। আমাদের দেশে এমন ছেলেই দরকার কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। আমি সালাহউদ্দিন ও তার উদ্দ‍্যোগের সাফাল‍্য কামনা করি। আশা করি তার সাক্ষাতকারটি আমাদের নবীন বিজ্ঞানীদের আরো উৎসাহ দিবে।

 

১৷ প্র: আপনাদের সাইট সম্বন্ধে আমাদের বিস্তারিত বলুন৷ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলুন৷
উ: বাংলাদেশের গাছগাছালি নিয়ে অনলাইনভিত্তিক উদ্ভিদ তথ্যভান্ডার "ইথনোবোটানিক্যাল ডাটাবেইস অব বাংলাদেশ (ইডিবি)" ওয়েব ঠিকানা: ethnobotanybd.com এ ডাটাবেইসে বাংলাদেশে প্রাপ্ত উদ্ভিদের যাবতীয় তথ্য দেওয়া আছে৷ এতে প্রত্যেকটি উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম, বাংলা নাম, উপজাতি নাম, ইংরেজি নাম, হ্যাবিট এ্যান্ড হ্যাবিট্যাট, শ্রেণীবিন্যাস এবং উদ্ভিদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের বর্ণনা আছে৷ এছাড়া উদ্ভিদে পাওয়া রাসায়নিক উপাদান ও ভেষজ গুনাগুন এবং বাংলাদেশে প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে৷ উদ্ভিদটিকে সহজে সনাক্ত করার জন্য ফুল, ফলসহ রঙ্গিন ছবি দেওয়া আছে৷ এ ডাটাবেইসটি উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ইথনোবোটানি, মেডিকেল নৃবিজ্ঞান, ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, প্রাণরসায়ন, অনুজীববিজ্ঞান, ভেষজ বিজ্ঞান এবং বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের অন্যান্য শাখার শিক্ষার্থী, গবেষক, বিজ্ঞানীদের কাজে লাগবে৷
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: জৈব বৈচিত্র সমৃদ্ধ বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার এঞ্জিওস্পার্মিক উদ্ভিদ প্রজাতি পাওয়া যায়, যার অধিকাংশই ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে৷ কিন্তু দুভর্াগ্যের বিষয় এ গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ সম্পদের তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি৷ বাংলাদেশের উদ্ভিদের তথ্যসমুহ বিভিন্ন বই, জান্যর্ালে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ উদ্ভিদের অনেক স্থানীয় ও ভেষজ ব্যবহার আছে যে সকল তথ্যসমুহ কোনরুপ লিখিতরুপ ছাড়াই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হচ্ছে৷ বিবিধ কারণে প্রকৃত থেকে অর্জিত উদ্ভিদের ব্যবহার সম্পর্কিত এই সব গুরুত্বপুর্ণ জ্ঞান আজ বিলুপ্তির পথে৷ যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করতে পারলে এই সকল গুরুত্ত্বপুর্ণ তথ্য চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে৷ বই, জার্ন্যালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উদ্ভিদ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য এবং লোকমুখে সঞ্চারিত বিভিন্ন ণৃতাত্তি্বক ভেষজ ব্যবহার বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করাই এ ডাটাবেইসের মূল লক্ষ্য৷

২৷ প্র: বাংলাদেশে এই রকম ডাটাবেইস প্রথম, এটি কিভাবে আমাদের আরো সাহায্য করবে?
উ: জি্ব এটি বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন উদ্ভিদ ডাটাবেইস৷ আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী সহ সকল ধরনের ফামর্াসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির নতুন ড্রাগ ডেভেলপমন্টের ক্ষেত্রে এই ডাটাবেইসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷

৩৷ প্র: আপনি ব্যাক্তিগতভাবে কেন এমন একটি উদ্যেগ নিলেন?
উ: আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে এমএস থিসিসের কাজে ইন্টারনেটে অনেক ঘাটাঘাটি করেও বাংলাদেশের গাছ-গাছালি নিয়ে উপাত্ত ভিত্তিক তথ্যসমৃদ্ধ কোন সাইট খুজে পায়নি৷ যেখানে পাশর্্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্র উল্টো তারা ইতোমধ্যে এন্টিািডায়েবেটিক, এন্টিডায়েরিয়াল, এন্টিএ্যজম্যাটিক, এন্টিকারসিনোজেনিক উদ্ভিদ ডাটাবেইস তৈরী করে ফেলেছে৷ সেখানে আমাদের দেশে একটি সামগ্রিক উদ্ভিদ ডাটাবেইস এখন পর্যন্ত তৈরী হয়নি৷ এ অভাবটি যাতে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মকে ভোগ করতে না হয় সে ব্রত নিয়ে আমি দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষকদের সহযোগীতায় দীর্ঘ দুবছর ধরে বিভিন্ন জানর্্যাল, থিসিস পেপার, বই ও হারবেরিয়াম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশের একটি সামগ্রিক উদ্ভিদ ডাটাবেইস "ইথনোবোটানিক্যাল ডাটাবেইস অব বাংলাদেশ (ইডিবি)" তৈরী করি৷
কাউকে না কাউকে শুরু করতে হবে৷ সে শুরু করার কাজটি আমি খুব আগ্রহ সহকারে করেছিলাম৷ প্রথমদিকে আমার মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করত যে, আমি এমন একটি অনলাইন উদ্ভিদ ডাটাবেইস তৈরী করতে যাচ্ছি যা বাংলাদেশের জন্য প্রথম৷ এ বিষয়টা আমার ডাটাবেইস তৈরীর ক্ষেত্রে উত্‍সাহ, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে৷ এ দেশটাকে আলোর পথে নিতে হলে জ্ঞান, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হতে হবে এবং আমাদের সবারই দেশের জন্য কিছু না কিছু করার দরকার৷ আমি চাই আলোর পথের যাত্রি হতে, তাই আমার এই প্রচেষ্টা৷ বলতে পারেন দেশের প্রতি ভালোবাসাই ব্যাক্তিগতভাবে এমন একটি উদ্যেগ নিতে সাহস যুগিয়েছে৷

৪৷ প্র: প্রত্যন্ত অঞ্চলে আপনার সাইটের সুফল পৌছানোর ব্যাপারে আপনার কোন প্ল্যান আছে কি?
উ: প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ সেক্ষেত্রে তথ্যভিত্তিক উপাত্তসমুহকে ভলিউম আকারে বই বের করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকদের কাছে ডাটাবেইসের সুফল পৌছানো যেতে পারে৷ তবে এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে এগয়ে আসতে হবে৷ এ ছাড়া দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ধারাবাহিকভাবে উদ্ভিদের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকদের কাছে এ ডাটাবেইসের সুফল পৌছানো যেতে পারে৷

৫৷ প্র: সাধারণ জনগন কিংবা স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীরা কিভাবে আপনাদের সাইটে সাহায্য করতে পারে?
উ: সাধারণ জনগন কিংবা স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীরা উদ্ভিদ সম্পর্কিত যে কোন ধরনের তথ্য (যেমন স্থানীয় নাম, ব্যবহার) রঙ্গিন ছবিসহ (হাতে তোলা ছবি, ইন্টারনেটের কোন ছবি গ্রহণযোগ্য নয়) sohailmsu@gmail.com ঠিকানায় পাঠিয়ে ডাটাবেইস সমৃদ্ধকরনে সহায়তা করতে পারে৷ পাঠানো উদ্ভিদের রঙ্গিন ছবিটিতে পাতা, ফুল ও ফলের চিত্র পরিষ্কার ভাবে দৃশ্যমান হতে হবে, যা উদ্ভিদ সনাক্তকরণে সহায়ক হবে৷ যিনি উদ্ভিদের ছবিটি পাঠাবেন তাঁর পূর্ণ নাম এবং ছবিটি কোন্ জায়গা থেকে তোলা হয়েছে সে জায়গার নাম উল্লেখ করে দিতে হবে৷ ছবিটি সনাক্ত করার পরে আপলোড করা হবে যদি সে ছবিটি ডাটাবেইসে না থাকে৷ যাঁর ছবি ডাটাবেইসে স্থান পাবে তাঁর নাম কন্ট্রিবিউটর তালিকায় দেওয়া হবে৷

৬৷ প্র: আপনাদের ভবিষ্যৎ প্ল্যান কি?
উ: "ইথনোবোটানিক্যাল ডাটাবেইস অব বাংলাদেশ (ইডিবি)" বাংলাদেশে প্রাপ্ত উদ্ভিদের যাবতীয় তথ্য সম্বলিত একটি সামগ্রিক উদ্ভিদ ডাটাবেইস৷ ব্যবহারিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমাদের আরো কিছু ক্যটেগরিভিত্তিক ডাটাবেইস ডেভেলপ করার পরিকল্পনা আছে যেমন- ইকোনমিক প্ল্যান্ট ডাটাবেইস, মেডিসিন্যাল এ্যন্ড অ্যারোম্যটিক প্ল্যান্ট ডাটাবেইস৷ মেডিসিন্যাল প্ল্যান্ট ডাটাবেইসকে আরো স্পেসিফিক করলে যেমন- এন্টিডায়াবেটিক, এন্টিডায়েরিয়াল, এন্টিঅ্যজমাটিক, এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিকারসিনোজেনিক প্ল্যান্ট ডাটাবেইস ইত্যাদি৷ তবে এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী কম্পিউটার প্রোগ্রামার সহ সকলের সহযোগীতা আশা করছি৷ সবার সহযোগিতা পেলে আমরা অদুর ভবিষ্যতেই আমাদের পরিকল্পনা সফল করতে পারবো৷

 

তাদের সমন্ধে আরও বিস্তারিত জানার জন‍্য নিম্নের সাইটগুলি দেখুন।

  • http://dhakareport.com/index.php?option=com_content&view=article&id=144:2011-01-18-16-54-51&catid=42:2011-01-18-09-24-20
  • http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=3680e8e70b3306a6a18479170f61c48f&nttl=2011012226299
  • http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-01-16/news/123785
  • http://www.cnewsvoice.com/DetailsNews.php?NewsID=N000005657
  • http://www.ethnobotanybd.com/photos/docs/cnewsbangla.pdf
  • http://jugantor.us/enews/issue/2011/05/07/news0827.htm
ড. মশিউর রহমান

About ড. মশিউর রহমান

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Check Also

সাক্ষাৎকার:  হেলথ ইনফরমেটিকস বিশেষজ্ঞ মো. আমিনুল ইসলাম

বিজ্ঞানী ডট অর্গ এর সাক্ষাতকার সিরিজে আমরা কথা বলেছিলাম হেলথ ইনফরমেটিকস বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ মো. …

ফেসবুক কমেন্ট


  1. Greetings Md. Salah Uddin,
    Thank you for outreaching us with your very insightful initiative. Keep up the good work. Wishing you the very best of your endeavor!

    Dr. Mashiur Rahman,
    Thank for this farsighted interview. We are delighted to see that we have been furthering our talent and advancing our knowledgebase!

  2. Dear Sohel,

    I feel happy for your achievement and hope your further success. I think you have proved if any wish to do something it is not necessary to get financial assistance. I saw you to do hard work for this. Go ahead…………..

    Wish you all the best.
    Sanjoy Kumar Nandi

  3. Congratulations Sohel my favorite elder one
    I think this only can possible when a great sacrifice has been done. So go ahead, we always with u. I will be very glad if u take more and more steps for this. you better know our BCSIR in ctg is rich enough in Botany So if u need any assistant please come here, we r here only for u..

  4. আসলে যত সহজে বলছি কাজটা খুবই ভাল, কিন্তু জানি কাজ করাটা কত কষ্টের। কত পরিশ্রম আর সময় দিয়ে কাজটা দাড় করাতে হয়। আপনার মতই যুবক অনেক ছিল বলে মনে হয় জাপান উঠে দাড়িয়েছিল। স্যালুট আপনাকে। আমাদের কাজ আমাদেরই করতে হবে, কোথায় যেন পড়েছিলাম ,someone have to be first, it may be you তাই আমাদের পরিশৃমে আমাদের দেশের ঝন শোধ করতে হবে। ধন্যবাদ।
    [বাংলাইন্টারনেট.কম]

  5. এমন উদ্যোগ এর সফলতা কামনা করছি……….. chomotkar… @ http://pcjobs24.com/

  6. খুব ভালো উদ্যোগ। সাফল্য কামনা করছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।