অধ্যায় – ৪ (ধ্যান অধ্যায়)
ধ্যানমগ্ন অবস্থা (মেডিটেটিভ্ স্টেট): ধ্যানমগ্ন অবস্থায় সাধারণত মানুষের মস্তিষ্কের সামনের ভাগে ও মধ্যভাগে কর্টিকাল থিটা তরঙ্গ [এই তরঙ্গ হলো সেরিব্রাল কর্টেক্স এর এক বা একাধিক লোব থেকে উৎপন্ন হওয়া নিম্নতর (লোয়ার) কম্পাঙ্কের থিটা তরঙ্গ] এবং মস্তিষ্কের পশ্চাৎভাগে আলফা তরঙ্গের প্রাচুর্য্য থাকে। উভয় তরঙ্গই নিম্ন কম্পাঙ্কের হওয়ায় তা আমাদের উদ্বেগমুক্ত হওয়ায় (রিল্যাক্সেশান্) সাহায্য করে।
কোন মস্তিষ্কের একটি স্নায়ুকোষ একবার উদ্দীপিত হলে সেই স্নায়ুকোষটির পুনরায় উদ্দীপিত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আবার এক গুচ্ছ স্নায়ুকোষ ঠিক যে ছন্দে একবার উদ্দীপিত হয়, সেই স্নায়ুকোষগুলি পুনরায় সহজে অন্য কোন ছন্দে উদ্দীপিত হতে চায় না। এই দুই কারণে এবং ধ্যান করার সময় মস্তিষ্কের সামনে, মধ্য ও পশ্চাৎভাগে সাধারণত নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ রাজত্ব করে বলে; ধ্যানের অভ্যাসে আমাদের মস্তিষ্ক যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতেও খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ জন্ম দেয় না ও ফলে আমরা যতটা সম্ভব কম উদ্বিগ্ন হই।
দীর্ঘদিন ব্যাপী স্বাত্ত্বিক জীবনে (স্পিরিচুয়াল লাইফ্) ও ধ্যানে অভ্যস্ত কোন ব্যক্তি এতখানই গভীর ধ্যানে মগ্ন হতে সক্ষম হন যে তাঁর সেই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মস্তিষ্কের বহু অংশে কেবল গামা তরঙ্গ (২৫ – ৪০ হার্ৎজ কম্পাঙ্ক) রাজত্ব করে। এরকম অবস্থায় কোন চেষ্টা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে (স্পন্টেনিয়াসলি) বিভিন্ন ধরনের ধারণা (আইডিয়া), আবেগ (ইমোশন্) বা সংবেদন (সেনসেশন্) ব্যক্তিটির মস্তিষ্কে একে একে প্রকট হয় ও বিলীন হয় – এই প্রকার উপলব্ধি, সচরাচর ব্যবহার হয় না মস্তিষ্কের এমন স্নায়ুকোষ সমূহের ছন্দবদ্ধভাবে উদ্দীপিত হওয়ার ফল। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের মস্তিষ্কের অনেক স্নায়ুকোষ ব্যবহৃত হয় না ও ফলে সেই স্নায়ুকোষগুলির লাগোয়া সাইন্যাপ্সে নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরিত হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলস্বরূপ খুব প্রয়োজনেও আমরা আমাদের মস্তিষ্কের সবটুকু ব্যবহার করতে ব্যর্থ হই। দীর্ঘদিন ধ্যান ও স্বাত্ত্বিক অভ্যাসে মস্তিষ্কের প্রায় সকল স্নায়ুকোষেরই ব্যবহার থাকায় মানুষের চিন্তাশক্তি ও স্মৃতিশক্তিতে বিশেষ উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। শোনা যায় যে স্বামী বিবেকানন্দ নাকি খুব দ্রুত পড়তে পারতেন এবং একবার যা পড়তেন তা কোনদিন ভুলতেন না। স্নায়ুবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বিষয়টিকে মোটেই অসম্ভব বলে মনে হয় না। শুধু তাই নয়, অনেক সাধু-সন্তের গভীর ধ্যানে দেহ ত্যাগের যে ঘটনা সর্বজনবিদিত, তারও স্নায়ুবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হতে পারে। ধ্যান করার সময় মস্তিষ্কের যেসকল অংশে গামা তরঙ্গ একাধিপত্ব চালায় তাদের মধ্যে থ্যালামাস ও ভিসুয়াল কর্টেক্স অন্যতম। দীর্ঘক্ষণ এই উচ্চ কম্পাঙ্কের গামা তরঙ্গের প্রভাবে যদি থ্যালামাস খুব অল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গামা তরঙ্গ প্রবাহ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় এবং ধ্যানমগ্ন ব্যক্তিটির মস্তিষ্ক চিরতরে “কোমা”-য় চলে যায়।
 
                                                                                                                                                 
                                                                                                     
                            
 
                             
                                 
 
			         
 
			         
 
			         
 
			         
 
			        
Leave a comment