আমরাও পারি

এইবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবীদদের প্রমাণ করার সময় এসেছে – “আমরাও পারি”

ঠিক
কি কারণে এই লিখাটি শুরু করেছি তা বলতে পারবনা। তবে সুচনাটি যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ভুমিকা রাখছেন তা আগেই স্বীকার করে নিই। ড. মুহম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরষ্কার অর্জন
শুধু মাত্র বাংলাদেশ হিসাবে আমরা গর্ব করছি তাই নয়, এটা প্রমানিত হয়েছে যে
দারিদ্রতা দূর করার জন্য আমাদের চেষ্টাই যথেষ্ট। সারা বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে আমাদের
দিকে, সামনে আমরা আরো কি অবদান রাখতে পারি তার দিকে। এইখানেই আমাদের থেমে থাকলে
চলবে না, আমাদের আরো কিছু করার অবকাশ রয়েছে।

সাধারণ
বাঙালীরা যে শুধুমাত্র একজনের মৌলিক তত্ত্বকে তাদের জীবনের কাজে লাগিয়ে তাদের অর্থনৈতিক
কাঠামো পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে, তা তাঁরা এতটি বছর ধরে তিল তিল করে প্রমাণ করেছেন।
নেহাত কোন যুদ্ধ বন্ধ করে কিংবা রাজনৈতিক কোন পদক্ষেপ রেখে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ
ব্যাংক এই পুরষ্কার পাননি। তাদেরকে জীবন যুদ্ধে টিকে থেকে প্রমান করতে হয়েছে। তাঁদের
পাওয়াকে আমি বাংলাদেশের পাওয়া হিসাবেই দেখছি, কেননা তাঁরা তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন
বাংলাদেশের বুক জুড়ে।

একটি
বড় পাওয়া যেভাবে আমাদেরকে অনুপ্রাণীত করেছে তেমনি সারা বিশ্বের চাওয়া ও কামনার উত্তরও
আমাদের দিতে হবে। অর্থনীতি তত্ত্বের ক্ষেত্রে আমরা তা প্রমাণ করতে পেরেছি, কিন্তু
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপারগুলিতে আমরা পারছিনা। সামনের বিশ্বে আমাদের টিকে থাকতে
হলে আমাদের অবশ্যই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অথচ এই সাধারণ ও
সত্যিকারের কথাটি আমরা জেনেও না জানার ভান করছি। আমরা ভাবছি কেউ করবে, কিংবা কোন
একদিন হবে। কেউ কি উত্তর দিবেন সেই দিনটি সত্যিকারের কবে আসবে? আমার মনে হয় আমাদের
খুব শীঘ্রই মাঠে নামতে হবে।

প্রযুক্তির
খুব ছোটখাট একটি উদাহরণ হল, তথ্যপ্রযুক্তি। আমরা এই তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও
দক্ষতা প্রমাণ করতে পারছিনা। তার কারণ কি? আমাদের গলদটি কোথায়? আমরা যারা
প্রযুক্তিবিদ তারা প্রায়সয় সরকারের দোষ দিই। সরকার কোন স্টেপ নিচ্ছেননা ইত্যাদি
ইত্যাদি। নিজেদের দোষটা আমরা সরকারের উপর দিয়ে বসে আছি। আসলে এই ধরণের ছোট খাট
উদ্যোগ ব্যাক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যাক্তিকেই নিতে হবে। যখন সেই
বিষয়গুলিতে কম্পানিগুলি ভাল করবে তখন সরকার বুঝবে, কোন কোন ক্ষেত্রগুলিতে আমরা ভাল
করতে পারি, তখনই সরকার সেই গুলিকে সাপোর্ট করবার মত উদ্দ্যোগ নিবে। যেমনটি হয়েছে
আমাদের পোষাক শিল্পের ক্ষেত্রে।

আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা কিভাবে ভুমিকা
রাখতে পারি?

প্রবাসীদের
একটি বড় অংশই প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সাথে সংযুক্ত থাকেন। তাঁরা তাদের স্বক্ষেত্রে
খুবই মেধার পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাঁরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যাপারগুলি বাংলাদেশের
সাধারণ প্রযুক্তিবিদদের থেকে ভাল মত বুঝবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাই এইক্ষেত্রে
প্রবাসী বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবীদগণই বলতে পরবেন বাংলাদেশকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে
কোন বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

সাধারণত
প্রথম বিশ্বের প্রযুক্তিগুলি হাইটেক বা উচ্চপ্রযুক্তি সংক্রান্ত হওয়ায় কারণে অনেকেই
বলেন যে, এইগুলি তো হাইটেক ব্যাপারগুলি, এইগুলি বাংলাদেশে কিইবা ভুমিকা রাখবে
আমি তাদের সাথে একমত নই। অনেক প্রযুক্তিই আছে যেগুলি বাংলাদেশে ভুমিকা রাখতে পারে।
ঠিকমত আমরা তা বাংলাদেশে পৌছাতে পারছিনা- সেটাই সমস্যা বলে মনে করি। এইপ্রসঙ্গে
আমি মোবাইল ফোনগুলির কথা বলব। প্রথম বিশ্বে যে সমস্ত উচ্চপ্রযুক্তির মোবাইল
ফোনগুলি বের হচ্ছে, তার কয়েকদিন পরেই তা বাংলাদেশের গ্রামগুলিতে পৌছে যাচ্ছে। এর
কারণ কি? কারণটি একটাই – তা হল ক্রেতার চাহিদা। সেই চাহিদা কি আজ হতে পাঁচ-দশ বছর
আগে ছিলনা? অবশ্যই ছিল কিন্তু মোবাইল কম্পানিগুলি সেই বাজারটি তৈরী করে নিতে
পেরেছে। তেমনি উচ্চপ্রযুক্তি বা হাইটেক ক্ষেত্রগুলিতেও অনেক সম্ভাবনাময় বাজার
রয়েছে যা হয়তো আমরা নিজেরাও জানি না। আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। আর সেই
ক্ষেত্রে প্রথম বিশ্বে অর্জন করা উচ্চ প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা ও ধারনাগুলি বিজ্ঞানী ও
প্রযুক্তিবীদের সহায়তা করবে। আমি সামনে দুটি প্রযুক্তিকে খুবই সম্ভাবনাময় বলে
দেখি, একটি হল নানোপ্রযুক্তি ও অন্যটি হল বায়োপ্রযুক্তি। এই
প্রযুক্তিদুটি নিয়ে আমাদের নাড়াচাড়া বা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে হবে। দেখতে হবে
কোথাও কোনভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এইগুলি ভুমিকা রাখতে পারে কিনা।

তাই
আসুন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্জনে আমরা যেভাবে নতুন ভাবে নিজেদের চিনতে শিখেছি, নিজেদের
শক্তি সমন্ধে আত্মবিশ্বাসী হয়েছি, সেই ভাবে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে চেষ্টা করে আমরা আমাদের
অজানা শক্তিকে নতুন করে চিনি। নিশ্চয় সম্ভাবনাময় আমরা কিছু করতে পারব। আর সরকার কি
করবে তার আশায় বসে না থেকে, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবীদকে আহবান করছি, আসুন ভেবে বের
করি কোন কোন প্রযুক্তিগুলিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা যায়।

প্রকাশিত: pdf পড়শী জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ২০০৭

পড়শী উত্তর আমেরিকার বে অঞ্চল থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা।

ড. মশিউর রহমান

About ড. মশিউর রহমান

ড. মশিউর রহমান বিজ্ঞানী.অর্গ এর cofounder যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সনে। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসাবে আমেরিকা, জাপান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ডিজিটাল হেল্থকেয়ারে যেখানে তার টিম তথ্যকে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার জন্য। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন: DrMashiur.com

Check Also

সমতল লেন্স

লেন্সের সাথে আমরা পরিচিত না হলেও, আমরা যে স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলছি তাতে কিন্তু লেন্স …

ফেসবুক কমেন্ট


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।